পদবঞ্চিতরাই গলার কাঁটা বিএনপির

নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ এপ্রিল ২০২৩, ১০:৪০ অপরাহ্ণ
আগামী দুই-এক মাসের মধ্যে সরকারের পদত্যাগের দাবি নিয়ে জোরালো আন্দোলনে নামছে বিএনপি। এই লক্ষ্যে মূল দলসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি গঠনের কাজ শেষ করতে বেশ তাগাদা রয়েছে দলটির শীর্ষ পর্যায় থেকে। এরই মধ্যে সবগুলো দলের কমিটি গঠনের কাজ প্রায় ৮০ শতাংশ শেষ করা হয়েছে। যেসব সাংগঠনিক কাজ বাকি আছে তাও এক মাসের মধ্যে শেষ করা হবে বলে জানিয়েছেন দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।
এদিকে, দলকে আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত করতে গিয়ে কমিটি গঠনে ভুল পদক্ষেপের কারণে নিজেদেরই প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেলছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। সারা দেশে প্রায় বিএনপির সব সংগঠনে পদবঞ্চিতদের একটি বড় অংশ বর্তমানে মূল সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করছেন। এই বিরোধিতার কারণে বিএনপি সরকারবিরোধী আন্দোলনে কাক্সিক্ষত ফল পাবে না বলে শঙ্কা প্রকাশ করছেন দলের বেশ কয়েকজন নেতা।
সূত্র জানায়, পদবঞ্চিতদের বিরোধিতা নিয়ে গত সপ্তাহে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা হয়। বৈঠকে ওঠে এসেছে দলের কয়েকজন নেতা কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতি ও আর্থিক সুবিধা নেওয়ার ফলেই পদবঞ্চনার শিকার হয়েছেন দলের ত্যাগী এবং অত্যাচারিত নেতাকর্মীরা। কাক্সিক্ষত পদ না পেয়ে রাগে-ক্ষোভে অনেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়লেও বড় একটি অংশ দলের বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে মাঠে অবস্থান নিয়েছেন। কিছু ক্ষেত্রে তারা সরকারের সঙ্গে আতাত করে বিএনপির অনুষ্ঠানকে পণ্ড করে দিচ্ছে। সম্প্রতি নরসিংদীতে পদবঞ্চিতদের প্রতিরোধের মুখে পিচু হঠতে বাধ্য হয় বিএনপি।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এ প্রতিবেদকে বলেন, বিএনপি বর্তমানে দেশের একটি জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল। লাখ লাখ নেতাকর্মী গত ১৪ বছর থেকে দলের জন্য কাজ করছে। অনেক জায়গায় দীর্ঘ এই সময়ে কমিটি গঠন হয়নি। আবার অনেক ক্ষেত্রে কমিটি হলেও বড় একটি অংশ কমিটিতে আসতে পারছে না। কিছু ক্ষেত্রে পছন্দের ব্যাপারের কারণেও কমিটিতে পদবঞ্চিত হচ্ছেন নেতারা। তাই কমিটিতে জায়গা না পেয়ে অনেক জায়গায় বঞ্চিতরা ক্ষোভ দেখায়। এটা স্বাভাবিক ঘটনা। সৃষ্ট এই সংকট কাটিয়ে উঠতে আমাদের নেতারা কাজ করছেন। আশা করি এরকম অবস্থা থাকবে না।
বিএনপির একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে বলেন, সারা দেশের বিভিন্ন সাংগঠনিক ইউনিটে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনে পদবঞ্চিতদের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। এটা এমন অবস্থায় গিয়েছে যে, এর সঠিক সমাধানের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। যারা পদবঞ্চিত হচ্ছেন তারা বিএনপিরই নেতাকর্মী। রাগে-ক্ষোভে এসব নেতা দলের বিপক্ষে অবস্থান নেবেন এমনটা বলা ঠিক নয়। তবে বর্তমানে যারা দায়িত্ব পাচ্ছেন তাদের বিরোধিতা যে তারা করবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এটা দলের জন্য বড় সমস্যা। বিশেষ করে বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলে এ সমস্যা অত্যন্ত প্রকট। দলগুলোতে সমন্বয় করে কমিটি না দেওয়ার কারণেই এমনটা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে বলয় বাড়াতে গিয়ে বা প্রভাবের রাজনীতি হাতে রাখতে গিয়ে এমন সমস্যার তৈরি করছেন নেতারা। গত ১৪ বছর দলটি ক্ষমতার বাইরে থাকার কারণে পদপ্রত্যাশী নেতার সংখ্যাও অনেক। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, গত কমিটিতে শুধু ছাত্রদলের ঢাকা মহানগরে নেতা বানানো হয়েছে প্রায় দুই হাজার। সেই সংখ্যা বর্তমান কমিটিতে অনেক কমিয়ে আনা হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে আগে যাদের নেতা বানানো হয়েছে তাদের প্রায় ৮০ শতাংশ নেতা এখন পদবঞ্চিত।
বিএনপি নেতারা মনে করেন, আগামীতে এক দফা আন্দোলন শুরুর আগে যেকোনো মূল্যে দলের অঙ্গ সংগঠনগুলোর মধ্যে ‘চেইন অব কমান্ড’ ফিরিয়ে এনে কোন্দল নিরসন ও নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। এ জন্য যা যা দরকার, তার সবটাই করতে হবে।
সূত্র মতে, অঙ্গ সংগঠনের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে নেতাকর্মীর বিভাজন বাড়ছে, যা সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের সাফল্য পেতে বড় বাধা। এ জন্য সবাইকে জবাবদিহির আওতায় আনতে যাচ্ছে হাইকমান্ড। পাশাপাশি বিভাজন যাতে বাইরে বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ না পায়, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ সংক্রান্ত নির্দেশনা খুব শিগগির প্রকাশ করবে দপ্তর-বিভাগ। যদিও এসব বিষয়ে কেউ প্রকাশ্যে কথা বলতে রাজি হননি।
স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বিষয়টি অভ্যন্তরীণ। দলের স্বার্থেই মন্তব্য করা সমীচীন হবে না।’ তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য জানান, সম্প্রতি বিভিন্ন কর্মসূচিতে দলীয় কোন্দল স্পষ্ট হয়েছে।
সূত্র জানায়, গ্রুপিংয়ের কারণে ত্যাগী ও পরীক্ষিত অনেকে পদবঞ্চিত হয়ে নিষ্ক্রিয় আছেন। অভিমান করে কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন না। এসব বিষয় নিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সভায় আলোচনা করেন নেতারা। সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, পদবঞ্চিত হয়ে যারা দলের বিরুদ্ধে কাজ করছেন কিংবা দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করছেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যেসব কমিটিতে বিভাজন আছে কিংবা নেতাকর্মী পদবঞ্চিত আছেন, তাদের বিষয়টি শিগগির সমাধান করা হবে। ত্যাগী ও যোগ্যদের দলে ফেরানো হবে। এ জন্য একটি কমিটি করা হবে। ওই কমিটির সুপারিশে ক্রমান্বয়ে সবাইকে পদ-পদবিতে আনা হবে।