‘কথাকলি’ থেকে পদত্যাগের হিড়িক

নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ এপ্রিল ২০২৩, ৬:২৪ অপরাহ্ণ
একের পর এক সদস্য পদত্যাগ করছেন তাদের প্রিয় সংগঠন ‘কথাকলি’ থেকে। এমন ঘটনাকে কেউ কেউ আখ্যা দিচ্ছেন- ‘এ যেন সাপের গর্তে গরম জল ফেলা’। সংগঠনের সিনিয়র সদস্য ও সিলেটের প্রভাবশালী সংস্কৃতজন আমিনুল ইসলাম চৌধুরী লিটনের উপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে নির্লজ্জ ও বেহানাপনার বিষয় প্রকাশিত হওয়ার পর এমন ঘটনা ঘটতে থাকে। এর আগে অভিযুক্ত লিটনকে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তবে কথাকলি থেকে লিটনের অব্যাহতি বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার ঘটনায় ক্ষুদ্ধ সংগঠনের একাধিক সদস্য। এ ঘটনায় প্রকাশ্যে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করলেও সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি বরাবরই এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন বলে জানিয়েছেন একাধিক ভোক্তভোগী। ফলে এক এক করে সংগঠন থেকে বাড়ছে পদত্যাগকারীর সংখ্যা। পদত্যাগকারীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করে নিজেদের পদত্যাগের বিষয়টি সকলের দৃষ্টিতে এনেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন, শামীমা চৌধুরী, কমলজিৎ শাওন ও বাপ্পি ত্রিবেদী ।
শামীমা চৌধুরী পদত্যাগ বিষয়টি নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক টাইমলাইনে পোস্ট করে নিশ্চিত করেন। তিনি সেখানে উল্লেখ করেন, ‘প্রাণপ্রিয় সংগঠন কথাকলি সিলেট আমার অস্তিত্বের গর্বিত উচ্চারণ ! কিন্তু এখন আমি ভীষণভাবে ব্যথিত ও বিব্রত হয়ে আছি। কারণ সারাজীবন সত্য আর শুদ্ধতার সঙ্গেই থাকতে চেষ্টা করেছি। যাবতীয় ভালোর প্রেরণাদাত্রী হতে চেয়েছি— কখনোই অনৈতিকতার সাথে পথ চলিনি– প্রশ্রয় তো দূরের কথা। বিগত কয়েকদিন ধরে প্রাণান্তকর চেষ্টা চালিয়েছি প্রিয় সংগঠনকে সঠিক-যৌক্তিক এবং ন্যায়ানুগ সিদ্ধান্তের পথে পরিচালিত করতে। কিন্তু পারিনি। তাই অপারগতা আর অক্ষমতার যন্ত্রণা নিয়ে চার দশক ধরে আঁকড়ে থাকা সংগঠন #কথাকলি_সিলেট_থেকে_পদত্যাগ_করলাম। সুন্দর হোক প্রিয় সিলেটের প্রিয় সাংস্কৃতিক অঙ্গন।
কমলজিৎ শাওন লিখেন, ‘আজকের পর থেকে কথাকলি সিলেট’র সাথে আমার আর কোন সংশ্লিষ্টতা নেই।
ধন্যবাদ…’সব্বে সত্বা সুখিতা ভবন্তু’’।
বাপ্পি ত্রিবেদী লিখেন, (সংক্ষেপিত)‘ কথাকলিতে এই মূহুর্তে বিবেক বুদ্ধি লোপ পাওয়া সদস্যদের সংখ্যা এত বেশি যে সেখানে গুটিকয়েক সুস্থ সংস্কৃতি চর্চা করা মানুষদের গা গুলিয়ে উঠছে বারবার, নিজ তাগিদে সংগঠনকে দাগমুক্ত রাখার চেষ্টা করেছি, বিশ্বাস করতে চেয়েছি কথাকলি এমন একটি দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ নিবে নিপীড়কের বিরুদ্ধে, যা সিলেটের সংস্কৃতি অঙ্গনে একটি নতুন এবং মজবুত মাইলফলক তৈরী করবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে। কিন্তু আজ কথাকলির মিটিং দেখে আমার বারবার মনে হচ্ছিলো, এদের কাছে ন্যায় আশা করছিলাম? ভদ্রতা? ঐক্য? যারা নিজের বাস্তবজ্ঞান হারিয়ে একটা পার্ভাট কে আড়াল করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে! মিটিং এর নামে এখানে সবাইকে নিয়ে আসা হলেও কেউ কারও মতামত দেয়ার সুযোগ পাচ্ছে না! সভাপতি সাহেব ঠিক কোন অধিকারে সবার সাথে চেচামেচি করছিলেন, তাচ্ছিল্য করছিলেন, পার্সোনাল এট্যাক করছিলেন, তা আমি জানি না। শুধুমাত্র দু তিনজন সদস্য (ইনারা লিটন ভাইয়ের আদরের কি না!) ছাড়া আমরা কেউ কিছু বলতে পারলামনা, উল্টো আমাদের চিঠি পড়ে শুনানোর তাড়াহুড়ো পড়ে গেলো, যে ‘চিঠি’ লিখার আগেই মতামত নেয়ার কথা সেই চিঠি ইনারা নিজেদের মত লিখে কষ্ট করে আমাদেরকে শুনাতে চাচ্ছিলেন, সময় কম! তারা খুব ব্যস্ত কি না!
আমাকে এই কয়দিনে নিজেদের অবস্থানের অস্বচ্ছতা দেখিয়ে প্রতিদিন কথাকলির হর্তাকর্তারা বুঝিয়ে দিলেন যে তারা নীতি, আদর্শ এসবের শিক্ষা পান নাই, অথবা উনাদের পরিবার উনাদেরকে এই শিক্ষা দিলেও উনারা তা হর্তাকর্তা হওয়ার লোভে বিক্রি করে দিয়েছেন। আমি আসলে অনেক কিছু লিখতে চাচ্ছিলাম কিন্তু বারবারই আমার মনে হচ্ছে মিটিং’র নামে যারা মারমুখী হয়ে যায়, তাদেরকে নিয়ে কথা বলা আমার রুচি বহির্ভূত। আমাদের এডভোকেট আপাকে নিয়ে যে পোস্ট দিয়েছিলাম, উনার মত আমিও হাহা রিয়েক্ট দিয়ে ডিলেট করে দিলাম পোস্টটা। কারন, আমাকে অনেকেই ফোন করে জানিয়েছেন, এই আপা একজন “Less Important” এই মুহুর্তে, তোমার স্ট্যাটাসে এরকম কাউকে দেখবো আশা করি না। আমার মনে হলো, হ্যা কথাটা তো ঠিক! যাই হোক এ নিয়ে কথা না বলি, লেস ইম্পর্ট্যান্ট ব্যাপার।
এদিকে গেল সোমবার (১০ এপ্রিল) সিলেটের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শিশু ও নারী নিপীড়নের একাধিক অভিযোগে অভিযুক্ত সিলেটের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের নেতা আমিনুল ইসলাম চৌধুরী লিটন-এর বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ ও সকল প্রকার সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড থেকে বিরত রাখার দাবি জানিয়ে নাগরিকবন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন সিলেট ও সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলন।
সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন সিলেট জেলা শাখার আহবায়ক জান্নাত আরা খান পান্না ও সদস্য সচিব সন্দীপন শুভ্র সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সভায় সভাপতিত্ব করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়-এর যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন বিরোধী সেলের প্রধান অধ্যাপক ড. নাজিয়া চৌধুরী । সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলন-এর সমন্বয়ক আব্দুল করিম কিম। । এই কর্মসূচীতে সংহতি প্রকাশ করে ছাত্র ইউনিয়ন, সাংস্কৃতিক ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট সহ বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন কথাকলির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা অম্বরিষ দত্ত,সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন সিলেট জেলা শাখার সিনিয়র সদস্য কমরেড হিমাংশু মিত্র, কবি হরিপদ চন্দ, নাট্যকার বাবুল আহমেদ , নাট্যকার ও নির্দেশক উত্তম সিংহ রতন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের নেতা সঞ্জয় কান্তি দাস, সঞ্জয় কুমার নাথ , গনতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সাধারন সম্পাদক তানজিনা বেগম , ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য শ্রাবন দাস, নাট্যকর্মী অরুপ বাউল , নাট্যকর্মী মাসুম খান , গনজাগরন মঞ্চ এর কর্মী রাজীব রাসেল , নাট্যকর্মী দেবজ্যুতি দেবু, নাট্যকর্মী ধ্রুবজ্যোতি দে, লেখক ও সাবেক ছাত্রনেতা রিপন ঘোষ, নাট্যকর্মী রিপন চৌধুরী, নিরঞ্জন সরকার ,লালন সহ আরো অনেকে।