সিলেট শহিদমিনারে ইফতার মাহফিল!

নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ এপ্রিল ২০২৩, ১:১৩ অপরাহ্ণ
শহিদমিনার প্রাঙ্গণে ইফতার মাহফিল! ভাবছেন দৃশ্যটি হতবাক করার মতো ? মোটেই না! এর আগেও সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদমিনার প্রাঙ্গণে হতবাক করার মতো একাধিক ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু লাভ হয় নি এতোটুকুই। উপরন্তু বাঙালী জাতির শৌর্য-বীর্যের প্রতিক শহিদমিনার তালাবদ্ধ করে রেখেছে সিলেট সিটি করপোরেশেন। এতো কঠোর অবস্থানে রাখার পরও কিভাবে সেখানে ইফতার মাহফিল সম্ভব হলো-এমন বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উত্তাপ বয়ে যাচ্ছে। এর আগেও সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদমিনার প্রাঙ্গণে জন্মদিন পালন ও ইসলামী জলসা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান রবি’র কনসার্ট ব্যানারে ছেয়ে গেছে সিলেটের শহিদ মিনার। বই মেলার নামে শহিদমিনারের ভিতর-বাহির ভরে যায় বিভিন্ন পণ্যের পসরায়। তবুও নির্বিকার থাকে সিলেটের সাংস্কৃতিক অঙ্গণের অভিভাবক দুই সংগঠন। ভুক্তভোগীরা বলছেন, সাংস্কৃতিক কর্মীদের সীমাহিন ব্যর্থতার কারণে তদারকি প্রতিষ্ঠান দায়সারা দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।
ইফতার মাহফিলের ঘটনার খবর পেয়ে শহিদ মিনারের পাহাড়াদার আফতাব উদ্দিনকে ফোন দেন সিলেটের বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ ও জাতীয় সমাতান্ত্রিক দল জাসদের কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি লোকমান আহমদ। এ সময় আফতাব ইফতার অনুষ্ঠানের বিষয়টি স্বীকার করেন।
শনিবার (১৫ এপ্রিল) সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে এই ইফতারির আয়োজন করে সিলেটস্থ দোয়ারাবাজার থানা সমিতি। ইফতার পরবর্তী থানা সমিতির একটি পেইজ থেকে ইফতার মাহফিলের সংবাদটি প্রচার করা হয়। পরবর্তীতে সংবাদকর্মী দেবব্রত রায় দিপন নিজের ফেসবুকে শহিদ মিনারে ইফতার মাহফিলের দৃশ্যটি পোস্ট করে সেখানে লিখেন, ‘এখন ইফতার মাহফিলও হয় সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদমিনারে! ঘটনা-শনিবার ১৫ এপ্রিল। বিস্তারিত পরে লিখছি’ । এর পরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয় তোলপাড়।
ওই পোস্টে মন্তব্য করেন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান আফসানা সালাম। তিনি লিখেন-‘শহীদমিনার ভাড়া দেয়ার পরিকল্পনা যেখানে সম্ভব, তখন শহীদ মিনারের এসব নতুন নতুন ব্যবহারও দেখতে হতে পারে। সামনে হয়তো বিবাহ-শাদীও আয়োজিত হবে, কে জানে!
সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলনের আহবায়ক আবদুল করিম কিম লিখেন, বাহ্। ওয়াজ মাহফিল কবে হচ্ছে? মেয়রের সাথে মিটিং করে যারা শহীদ মিনারের ব্যবহারবিধি ঠিক করেছেন দয়া করে ট্যাগ তাদের করুন।’
বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের প্রেসেডিয়াম সদস্য মতিউর রাফি লিখেন, শহীদ মিনারের চেতনাকে যারা মুছে দিতে চায় তারা ভেতরে ও বাহিরে সংঘবদ্ধ। ফলে, এই বিষয়টাকে দ্রুত আমলে নিয়ে আমাদের সকলের বসা জরুরি। সম্মিলিত নাট্য পরিষদ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটসহ সিলেটের প্রগতিশীল রাজনীতিবিদ ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব যাঁরা আছেন তাঁদের নিয়ে অতি শীঘ্রই একটা জরুরি সভা আহ্বান করা জরুরি। কিছুদিন আগে একটা কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানও দুঃসাহস দেখিয়েছিল। সুফিবাদ এর নামে দেখলাম তুর্কিস্থান! সুতরাং এই ঘটনাগুলো কোনভাবেই বিচ্ছিন্ন নয়। এর সাথে একটা স্বার্থান্বেষী মহল ওতপ্রোতভাবে জড়িত বলেই মনে হচ্ছে। শহীদ মিনারের চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক যেকোনো কর্মসূচি কোনভাবেই করতে দেওয়া যাবে না। অনতিবিলম্বে আশু করণীয় নির্ধারণে সকলের বসা জরুরি বলেই মনে করছি।
খাদিমপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আফসর আহমদ লিখেন, ‘একটা বিয়ের অনুষ্ঠান করতে চাই কার কাছ থেকে অনুমতি নিব।’
সংস্কৃতি অঙ্গণে অনিয়মের বিরুদ্ধে বরাবরই যিনি সোচ্চার, তিনি নাট্যকর্মী হুমায়ুন কবির জুয়েল। তিনি ছবিটি নিজের ফেসবুক পোস্টে শেয়ার করে সেখানে লিখেন, ‘সিলেট কেন্দ্রিয় শহিদ মিনার নিয়ে প্রায়শ: তুঘলকি কাণ্ড ঘটে। সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দ দায়সারা দৌড়াঝাঁপ-বক্তব্য দেন। সিলেট সিটি করপোরেশনের হাস্যকর কথাবার্তা অবলীলায় আমরা হজম করি। অথচ, বিষযটা কোনভাবেই অপরিকল্পিত বলার সুযোগ নেই। এই ঘটনা কারা ঘটিয়েছেন? সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেট, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সিলেট, সিলেট সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের বক্তব্য কি?
ওই পোস্টে মন্তব্য করেন কথাকলি সিলেটের সভাপতি শামসুল বাসিত শেরো। তিনি লিখেন, ‘মেয়রের সাথে গত সভায় বারবার বলেছিলাম একটা সংগঠনকে দায়িত্ব দেন এসব দেখার। মেয়র মহোদয় নিশ্চিত করেছিলেন বিশেষ করে জন্মদিনের কেক কাটা ও ইফতার মাহফিল করতে দেবেননা।সদর ভাই,বেদানন্দদা াজাদ ভাই সহ অনেকেই ছিলেন ঐ সভায়। অপেক্ষায় থাকলাম বিয়ে গায়ে হলুদ ইত্যাদির জন্য। শহিদ মিনার ব্যবহারের অনুমতি দেয়ার দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। একটা নীতিমালাও উনারা করেছেন। সেটা বাস্তবায়নের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। আমরা বার বার সিটির উদাসীনতা আমাদেরকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
শামসুল বাসিত শেরোর মন্তব্যের রিপ্লাইয়ে হুমায়ুন কবির জুয়েল ফের লিখেন, ‘শামসুল বাসিত শেরো ভাই বেশ কয়েক বছর আগে জানতে পারলাম, রক্ষণাবেক্ষণের পাশাপাশি ব্যবস্থাপনার দায়িত্বও সিটি করপোরেশনকে দেয়া হয়েছে। তখনই সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দকে বলেছিলাম, ‘বিরাট ভুল হচ্ছে। কারণ, সিটি করপোরেশনে ভিন্ন ভিন্ন আদর্শের মানুষ আসতে পারেন। রক্ষণাবেক্ষণর দায়িত্ব তাদের কাছে থাকুক কিন্তু ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেট, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সিলেট, বাস্তবায়ন পরিষদ এবং আরো প্রয়োজন হলে, সমাজের প্রগতিশীল অংশের ব্যক্তিবর্গের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির হাতে থাকুক।’ উনার কথা না শুনে কি কি জানি বললেন-যা আজো আমার বোধগম্য হয়নি। ফল এখন নিয়মিতই দেখছি।
সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সভাপতি রজত কান্তি গুপ্ত লিখেন, এবিষয়ে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রধান প্রকৌশলী মহোদয়ের কাছে এই আয়োজন সম্পর্কে তাদের বক্তব্য ও করণীয় কি জানতে চেয়েছি।
খোঁজ নিয়ে দেখেছি কতৃপক্ষের কোনো অনুমতি না নিয়ে দোয়ারা সমিতি সিলেট এই আয়োজন করেছেন। তিনি শহিদ মিনার এর কেয়ারটেকার আপ্তাব ভাইয়ের অনুমতি নিয়ে আয়োজন করেছেন।
সিলেট শহিদমিনার বাস্তবায়ন পরিষদের অন্যতম সদস্য এনামুল মুনীর লিখেন, শর্ষের ভিতর ভুত ! আস্তিনে দুমুখো সাপ ঠিক বলেছো আম্বিয়ার বাপ ! যারা সাফ কবালা করে দিতে গেছেন সঠিক জবাবটা তারাই দেবেন বলে প্রত্যাশা করি।
দেবজ্যোতি দেবু লিখেন, ‘ছবি দেখে মনে হচ্ছে দিনমজুরদের ইফতার করানোর মত কিছু একটা! কিন্তু এভাবে টেবিল বসিয়ে ৫০/৬০ জনকে বসিয়ে ইফতার করানোর মত কাজ অনুমতি ছাড়া করানো কোনভাবেই সম্ভব না। এই অনুমতি কে দিয়েছে তা বের করতে হবে। পাশাপাশি কেয়ারটেকারকেও ধরুন। সেও নিশ্চই জানে।
সুপ্রিয় দেব পুরকায়স্থ লিখেন, ‘যতটুকু জানি, সিলেট সিটি কর্পোরেশনে বিগত শহিদ মিনার সংক্রান্ত সভায় একটি প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহিত হয় যে, কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠান করার জন্য অনুমতি প্রদান করা হবে না। তারপরও সিটি কর্পোরেশন কিভাবে এটার অনুমতি দিলো সেটা বোধগম্য নয়। নাট্য পরিষদ, জোট যৌথ বিবৃতির মাধ্যমে মেয়রকে বিষয়টা জিজ্ঞেস করা উচিত।’