যে ভয় মেয়র আরিফের..

নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ এপ্রিল ২০২৩, ৫:০৫ পূর্বাহ্ণ
সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচন ২১ জুন। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক তপশীল ঘোষণার পর থেকেই শুরু হয় সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ। শুরুতে সবার মনোযোগ সৃষ্টি করেন আওয়ামী লীগের প্রায় ১০ জন প্রার্থী। গেল ৯ এপ্রিল দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার পর এখন সকলের মনোযোগ কেবল মেয়র আরিফুল হকের প্রার্থীতা ঘোষণা নিয়ে। তবে আরিফুল হক চৌধুরী বিভিন্ন সময়ে গণ মাধ্যমে প্রার্থী হওয়া নিয়ে সবাইকে অপেক্ষায় রেখেছিলেন। এরই মধ্যে সিদ্বান্ত গ্রহণের জন্য তিনি যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত নিজ দলীয় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যনের সাথে দেখা করেন। সেখান গিয়েও লাভ হয় নি আরিফুল হক চৌধুরীর। যুক্তরাজ্য বিএনপির একটি বিশ্বস্থ সূত্র জানায়-ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরিফুল হক চৌধুরীকে মেয়র নির্বাচনের জন্য অনুমতি দেন নি। এ সময় আরিফুল হক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ একটি পদ দাবি করলে, তাতেও সম্মতি দেন নি তারেক রহমান। তবে আরিফুল হকের দলীয় পদের বিষয়টি বিবেচনা করে দেখা হবে বলে শান্তনা দেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
তবে নাছোড়বান্ধা আরিফুল হক। তিনি যুক্তরাজ্যে অবস্থানকালীনই দেখা করেন তারেক রহমানের ছোটো ভাই কোকো’র স্ত্রী শর্মিলা রহমানের সাথে। অবশেষে আরিফুল হকের পক্ষে সমর্থন আদায় করতে ঈদের আগে দুই কন্যাসহ দেশে আসেন শর্মিলা রহমান। শ্বাশুড়ী খালেদা জিয়ার সাথে এ বিষয়ে কথা বলেন তিনি। এরই প্রেক্ষিতে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির এক অনির্ধারিত সভা থেকে তিনটি সিটিতে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়। শর্ত অনুযায়ী স্বতন্ত্র্য প্রার্থী হিসেবে ঘোষিত তিনটি সিটি হলো, সিলেট, খুলনা ও গাজিপুর।
এদিকে দলীয় সিদ্বান্তের পরও সিদ্বান্ত হীনতায় ভুগছেন আরিফুল হক চৌধুরী। কোনোভাবেই যেন অংক মেলাতে পারছেন না তিনি। ফলে যুক্তরাজ্য সফরের আগে এবং পরে এমনকি দলীয় সম্মতির পরও জিইয়ে রেখেছেন অপেক্ষা। কেন আরিফুল হক চৌধুরীর সময় ক্ষেপন- এমন বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কাছ পাওয়া গেছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
বাম ঘরাণার একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে, আরিফুল হক একজন বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ। তিনি সময় ক্ষেপণের মধ্য দিয়ে নিজেই একটি পর্যবেক্ষন সম্পন্ন করেছেন। শুরুতেই সম্মতি প্রদান করলে হয়তোবা এমন পর্যবেক্ষণের সুযোগ পেতেন না। দ্বিতীয়ত ইভিএম পদ্বতিতে ভোট প্রয়োগ আরিফুল হকের কাছে আশঙ্কার। তৃতীয়ত-এই মুহুর্তে দলের জেলা ও মহানগর নেতৃবৃন্দও পাশে নেই আরিফের। সব মিলিয়ে আরিফুল হক চৌধুরী একটি কঠিন সঙ্কটের মুখোমুখি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুশীল সমাজের একটি সংগঠনের শীর্ষ ব্যক্তি জানান, আওয়ামী লীগ প্রার্থী অনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী একজন ম্যাজিক ম্যান। যিনি নিমিষেই মানুষের কাছে পৌছে যেতে পারেন। আনোয়ারুজ্জামান কি জিনিস গেল তিন মাসেই তিনি সিলেটবাসীকে বুঝিয়ে দিয়েছেন। সুতরাং আরিফুল হক চৌধুরী এখানে কিছুটা অসহায় বোধ করছেন। তিনি আরও জানান, যদি আরিফুল হক চৌধুরী মেয়র প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হতে না পারেন, সেক্ষেত্রে নিজ জেলায় দলের কাছেও তিনি গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে ফেলবেন। তার মতে, তিনি সব শেষ মেয়র প্রার্থী না হয়ে সিলেট-১ অথবা সিলেট-৪ আসনের জন্য প্রার্থীতা ঘোষণাও করতে পারেন।
এদিকে শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) ৪১ নং ওয়ার্ডের কুচাই জামে-মসজিদে জুম’আর নামাজ আদায় করতে গিয়েছিলেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। সেখানে স্থানীয় মুসল্লীদের সাথে কুশল বিনিময় করে দোয়াও চেয়েছেন তিনি। তবে সিসিক নির্বাচনে তার প্রার্থীতার বিষয়ে তখনও কোনো স্পষ্ট ঘোষণা দেন নি। তবে আবারও তিনি অপেক্ষার কথা জানিয়েছেন।
ওই দিন আরিফুল হক চৌধুরী ইভিএম নিয়েও সমালোচনা করেন। তিনি মুসল্লীদের প্রশ্ন করেন, আমরা ইগুত কেউ অভ্যস্ত নি? সবাই নেতিবাচক জবাব দিলে মেয়র বলেন, ইগুত অনো টিফা মারলে হনো যারগি। আমরার মা বোন হকলেও জানইন না। তিনি সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে ইঙ্গিত করে বলেন, তারার যদি সদিচ্চা থাকতো তে তারা ৬ মাস আগে ট্রেনিং দিত আছিল। এখন আন্দাইর ঘরো আপনারা গেলা সবে ভোট দিতা। পরে দেখা গেলো, আফনে এ’ত ভোট দিলা, গেলোগি বিলোত। মেয়র আরিফের এ বক্তব্য একটি ফেসবুক চ্যানেলে প্রচারিত হলে প্রচুর কমেন্ট পড়ে। মন্তব্যকারীদের কেউ কেউ তার প্রশংসা করলেও অধিকাংশই তার কঠোর সমালোচনা করেছেন।
মোহাম্মদ রাশেদ ইসলাম নামক একজন লিখেছেন, মাথায় টুপি দিয়ে আর পবিত্র জুম্মার নামাজ পড়ে এসে মিথ্যার ফুলঝুরিতে কাজ হবে মেয়র সাহেব? আপনার গোমর ফাঁস হয়ে গেছে। মির্জা জামাল নামক এক দর্শকের মন্তব্য, মানুষকে বিভ্রান্ত না করে, সুন্দরভাবে ভোট চাওয়া উচিত। কারণ আমরা এ ভি এম মিশিনে ভোট দিয়েছি, এ- থেকে বি- তে ভোট যেতে দেখিনি। তুহেল আহমদ মুসা লিখেছেন, ইতা মাতে কাম আইতনায়বা। নাহিদ আহমদ লিখেছেন, ১ বছরের উপরে আমরা সিটি কর্পোরেশন এর অন্তর্ভুক্ত হয়েছি। এতদিন পর আরিফ সাহেবের মনে পড়ল আমাদের কথা। মাসুম আহমদ লিখেছেন, ইলেকশন আইলে কোলাকোলি করতে করতে বুকুর কাল-বাকল তুলিলাইন। কামরুল ইসলাম লিখেছেন, ইবার আর ভঙ্গি কাম আইতনায়। ইবার নৌকা।
ইমরান ফারহাত নামক একজনের মন্তব্য, আওয়ামী লীগর খাইয়া ধানর গান গায়। এর লেজ এইবার সোজা হবে।
ওই ফেসুবক চ্যানেলে আরও কঠোরসব মন্তব্যের ছড়াছড়ি। কেউকেউ তাদের মন্তব্য সিসিক মেয়রকে বিশ্রাম নেয়ার পরামর্শও দিয়েছেন।