সিসিক নির্বাচন : মুন্নী ইস্যুতে সঙ্কটে বাবুল

নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ জুন ২০২৩, ৫:৩৮ পূর্বাহ্ণ
দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহের আগেই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী। সিসিক নির্বাচনে অন্যতম শক্তিশালী এ প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করায় শুরুতেই মাঠ অনেকটা ফাঁকা হয়ে যায়।
তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর বিপক্ষে বাধা ছিলেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল ও ইসলামী আন্দোলনের মাহমুদুল হাসান। এবার খুলনা ও বরিশাল সিটি নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ তুলে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন মাহমুদুল হাসান। সোমবার (১২ জুন) রাতে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দেন তিনি।
হঠাৎ করে মাহমুদুলের প্রস্থানে একেবারে ফাঁকা মাঠে দৌড়াচ্ছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।
অন্যদিকে, বিএনপি নির্বাচনে না যাওয়ায় বর্তমানে আনোয়ারুজ্জামানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির নজরুল ইসলাম বাবুল। সিলেট নগরীর বর্ধিত এলাকা বৃহত্তর টুকের বাজার, দক্ষিণ সুরমা ও কুচাই এলাকায় জনপ্রিয়তায় এগিয়ে রয়েছেন তিনি। তবে জাপার এ প্রার্থী শুরু থেকেই ইমেজ সংকটে ভুগছেন। সম্প্রতি তার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর সেই সংকট আরো ঘনীভূত হয়েছে। ফলে তিনিও ভোটারদের আস্থা হারাতে বসেছেন।
নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপির ভোটের ওপর নির্ভর করবে কে হবেন নগরপিতা। যার ফলে বিএনপির ভোটের দিকে চেয়ে আছেন প্রার্থীরা। তবে নির্বাচন বয়কটের কারণে ভোটকেন্দ্রেও বিএনপি যাবে না বলে জানিয়েছেন সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন।
আগামী ২১ জুন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন। সব কেন্দ্রেই ইভিএমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনী প্রাচরণায় সরগরম এখন সিলেট। মাইকিং, সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা। সোমবার ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মাওলানা মাহমুদুল হাসান নির্বাচন বয়কট করায় বর্তমানে ভোটের মাঠে রয়েছেন সাত প্রার্থী। তারা হলেনÑ আওয়ামী লীগের আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, জাতীয় পার্টির নজরুল ইসলাম বাবুল ও জাকের পার্টির প্রার্থী মো. জহিরুল আলম। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আবদুল হানিফ, মো. ছালাহ উদ্দিন, মো. শাহ্ জামান মিয়া ও মোশতাক।
এদিকে, বিএনপি ও ইসলামী আন্দোলেন নির্বাচন বয়কটের কারণে ভোটের মাঠ অনেকটা ফাঁকা থাকলেও বসে নেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। দিনভর চষে বেড়াচ্ছেন নগরীর পাড়া-মহল্লায়। দিন-রাত যাচ্ছেন ভোটারদের দুয়ারে। যাচ্ছেন সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগে। প্রচারণায় এগিয়ে থাকলেও শঙ্কা কাটছে না আওয়ামী লীগের এ প্রার্থীর। সিসিক নির্বাচনে ভোটের মাঠ সম্পূর্ণ অনুকূলে থাকার পরও দুশ্চিন্তায় আনোয়ারুজ্জামান।
আওয়ামী লীগের একটি বিশ্বস্ত সূত্র বলছে, যুক্তরাজ্য থেকে ছুটে এসে সিসিক নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছিল। কিন্তু দলের স্বার্থে সব বিভেদ ভুলে আনোয়ারুজ্জামানের পক্ষেই কাজ করছেন তারা। তবে আনোয়ারুজ্জামানকে জয়ী করতে হলে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রমুখী করতে হবে। ভোটারদের কেন্দ্রে আনতে না পারলে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারেন আওয়ামী লীগের এ প্রার্থী।
এদিকে, সিলেট সিটি করপোরেশনে আগে ছিল ২৭টি ওয়ার্ড। ১৫টি ওয়ার্ড বেড়ে এখন ৪২টি। নতুন বর্ধিত ১৫টি ওয়ার্ডে ভোটার রয়েছেন ১ লাখ ২৬ হাজার ৯০০। এই নতুন ভোটাররাই এখন ফ্যাক্টর। মেয়র পদে নির্বাচিত হতে হলে নতুন ভোটারদের ভোটই মূলশক্তি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিসিকের নতুন ওয়ার্ডের মধ্যে বৃহত্তর টুকের বাজার, আখালিয়া, কুচাই ও দক্ষিণ সুরমা এলাকায় এগিয়ে রয়েছেন জাপার নজরুল ইসলাম বাবুল। তবে শাহপরাণ এলাকায় নৌকার প্রার্থীর ভোট ব্যাংক রয়েছে।
একটি সূত্র বলছে, টুকের বাজার এলাকা সব সময়ই আওয়ামী লীগের একটি বিরোধী পক্ষ রয়েছে। এরা কোনো সময় নৌকায় ভোট দেয় না। অন্যদিকে, জাতীয় সংসদে বিদ্যুৎ বিল বাড়ানো নিয়ে বক্তব্য দেওয়ায় দক্ষিণ সুরমা এলাকার মানুষ সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিবের ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছেন। এর প্রভাব পড়েছে সিটি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর ওপর। যার কারণে এ দুই এলাকায় এগিয়ে রয়েছেন নজরুল ইসলাম বাবুল। তবে শাহপরাণ, মেজরটিলা ও আশপাশ এলাকায় নৌকা ভালো অবস্থানে রয়েছে।
উল্লেখ্য, সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে ভোটার বেড়েছে ১ লাখ ৬৬ হাজার ২১ জন। ১৫টি নতুন ওয়ার্ড অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় ও ২৭টি ওয়ার্ডে গেল পাঁচ বছরে ৩৯ হাজার ১২১ ভোটার বৃদ্ধি পাওয়ায় এবার সিসিকের ৪২ ওয়ার্ডে ভোটার হচ্ছে ৪ লাখ ৮৭ হাজার ৭৫৩ জন। নতুন ১৫ ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা হচ্ছে ১ লাখ ২৬ হাজার ৯০০। গত সিসিক নির্বাচনে ২৭ ওয়ার্ডে ৩ লাখ ২১ হাজার ৭৩২ ভোটার ছিল। এছাড়া বেড়েছে ভোট কেন্দ্রের সংখ্যাও। গত বছর ছিল ৫৬টি ভোট কেন্দ্র। এবার ভোটকেন্দ্র ৪৪১টি। মোট ভোটারের মধ্যে পুরুষ ভোটার হলো ২ লাখ ৫৪ হাজার ৩৬৩ জন, আর ২ লাখ ৩৩ হাজার ৩৮৪ জন হলো নারী ভোটার।