সিসিক নির্বাচন : ১৯০ ভোটকেন্দ্রে ভোটকক্ষ ১ হাজার ৩৬৭ টি

নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ জুন ২০২৩, ৫:৪৩ পূর্বাহ্ণ
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন আগামী ২১ জুন। এরই মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্বাচনের গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ) কেন্দ্রের তালিকা প্রস্তুত করেছে। তালিকা অনুযায়ী প্রায় ৭০ শতাংশ কেন্দ্রই ‘ঝুঁকিপূর্ণ’। এ তালিকা অনুযায়ী ১৯০টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৩২টি কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ। বাকি ৫৮টি কেন্দ্র সাধারণ (ঝুঁকিমুক্ত) বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। মহানগরীর ৪২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৮টি ওয়ার্ডের সবগুলো কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এদিকে তফসিল অনুযায়ী আজ সোমবার মধ্যরাতের পর থেকে প্রার্থীরা আর প্রচারণা চালাতে পারবেন না। ফলে শেষ সময়ের প্রচারে ব্যস্ত সময় কাটছে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের। গতকাল প্রচার প্রচারণায় উত্তপ্ত ছিল সিলেট নগরী। বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিরামহীন প্রচারণা চালিয়েছেন প্রার্থীরা। অন্যদিকে শক্ত প্রতিদ্ব›িদ্বহীন ভোটের মাঠে সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়রপ্রার্থী। তবু আশা ছাড়ছেন না প্রতিদ্ব›িদ্বরা। কাউন্সিলর পদে মিলছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস। জয়ের মালা উঠবে কার গলায় তা নিয়ে নানা হিসাব কষছেন ভোটাররাও। সব মিলিয়ে নির্বাচন ঘিরে সিলেটে যখন উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে।
ঝুঁকিপূর্ণ ১৩২টি কেন্দ্র : সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ) কেন্দ্রের তালিকা প্রস্তুত করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তালিকা অনুযায়ী প্রায় ৭০ শতাংশ কেন্দ্রই ‘ঝুঁকিপূর্ণ’। এরমধ্যে ১৮টি ওয়ার্ডের সবগুলো কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই তালিকা অনুযায়ী ১৯০টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৩২টি কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ। বাকি ৫৮টি কেন্দ্র সাধারণ (ঝুঁকিমুক্ত) বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সূত্র অনুযায়ী, নগরে মোট ভোটার ৪ লাখ ৮৭ হাজার ৭৪৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৫৪ হাজার ৩৬৩ জন ও নারী ভোটার ২ লাখ ৩৩ হাজার ৩৮৪ জন। নির্বাচনে মেয়র পদে ৮ জন, সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ২৭৩ জন এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৮৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। ১৯০টি কেন্দ্রে মোট ভোটকক্ষ রয়েছে ১ হাজার ৩৬৭টি। অস্থায়ী ভোট কক্ষের সংখ্যা ৯৫টি।
এসএমপির একটি সূত্র জানিয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ ও ঝুঁকিমুক্ত কেন্দ্রকে ‘সাধারণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ওই গুরুত্বপূর্ণ ও সাধারণ কেন্দ্র অনুযায়ী ভোটের দিন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, কেন্দ্রে নিরাপত্তাবেষ্টনী না থাকা, কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে সহিংসতার শঙ্কা, যোগাযোগ বিড়ম্বিত কেন্দ্র, অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার শঙ্কাসহ নানা দিক বিবেচনা করে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ কেন্দ্র চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। এবারের তালিকা অনুযায়ী ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ১৫, ২২, ২৪, ২৫, ২৬, ২৮, ২৯, ৩০, ৩১, ৩৬, ৩৮, ৩৯ ও ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের সব ভোটকেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়া ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের সব কটি কেন্দ্র ঝুঁকিমুক্ত।
এবারের সিলেট সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে মোট আটজন প্রতিদ্বদ্বিতা করছেন। তারা হলেন, আওয়ামী লীগ থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নজরুল ইসলাম বাবুল ও ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মাওলানা মাহমুদুল হাসান (হাত পাখা), জাকের পার্টির মো. জহিরুল আলম (গোলাপ ফুল) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আবদুল হানিফ কুটু (ঘোড়া), মো. ছালাহ উদ্দিন রিমন (ক্রিকেট ব্যাট), মো. শাহ্ জাহান মিয়া (বাস) ও মোশতাক আহমেদ রউফ মোস্তফা (হরিণ)। তবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী নির্বাচন বয়কট করে সরে দাঁড়িয়েছেন।
গত ২ জুন প্রতীক পাওয়ার পর থেকে মেয়রপ্রার্থীরা নানা প্রতিশ্রতি নিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটেছেন। নগর উন্নয়ন ও নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধির আশ্বাসও দিয়েছেন অহরহ। তবে ভোটের দিনে সব কেন্দ্রে ভোটকক্ষগুলোতে (বুথ) আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী এজেন্ট দিলেও জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল দিতে পারেনি। কারণ রাজনৈতিকভাবে অপেক্ষাকৃত দুর্বল হওয়ায় অধিকসংখ্যক কর্মী জোগাড় করা তার পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছে। এটা নিয়েও শঙ্কিত জাতীয় পার্টি, কারণ নির্বাচনী পর্যবেক্ষকরা অন্যান্য দলের এজেন্ট দেখতে না পেয়ে বিরূপ মনোভাব প্রকাশ করতে পারেন। এছাড়া অন্যান্য মেয়র প্রার্থীদেরও একই অবস্থা। সবগুলো ভোটকক্ষে দেওয়া হয়নি এজেন্ট। তবে অর্ধেকের বেশি বুথে এজেন্ট পাঠানোর চেষ্টা রয়েছে জাতীয় পার্টির। দলটির মেয়রপ্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল বলেন, প্রতিটি কেন্দ্রে একজন করে পোলিং এজেন্ট চ‚ড়ান্ত করা হয়েছে। তবে সব বুথে এজেন্ট দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
ঢাকা থেকে ভোট পর্যবেক্ষণ : সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এবার ১৯০টি ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে। ভোটকক্ষ রয়েছে ১ হাজার ৩৬৭ টি। নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র ও কক্ষে কোনো অনিয়ম হচ্ছে কি না, তা ঢাকা থেকে পর্যবেক্ষণ করবে নির্বাচন কমিশন। এজন্য প্রতিটি ভোটকক্ষে একটি ও কেন্দ্রের সুবিধাজনক স্থানে একটি করে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হচ্ছে। মোট ১ হাজার ৫৫৭টি সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে সবগুলো ভোটকেন্দ্র।
নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব সিসি ক্যামরায় ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সার্বিক্ষণিক পর্যবেক্ষণ ও রেকর্ড রাখা হবে। যদি কোনো কেন্দ্রে বা কক্ষে অনিয়মের খবর পাওয়া যায়, তাৎক্ষণিকভাবে তা দেখা যাবে। রিটার্নিং কর্মকর্তা তার নিজ কাযালয়ে বসে ও নির্বাচন কমিশনাররা ঢাকায় নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে বসে সার্বক্ষণিক ভোটের চিত্র পর্যবেক্ষণ করবেন।
এ ব্যাপারে রিটার্নিং কর্মকর্তা ফয়সল কাদির বলেন, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হবে। কোনো ধরনের সংঘাত সৃষ্টি হলে তা ক্যামেরাতে রেকর্ড থাকবে, যা দেখে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। কোনো কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে ভোট বন্ধ করে দেওয়ার বিধান রয়েছে।
চার স্তরের নিরাপত্তা : বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে গুরুত্বপূর্ণ ও সাধারণ ভোটকেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সিটি নির্বাচনে মোট ৪২টি মোবাইল টিম মাঠে থাকবে। প্রতি তিনটি সাধারণ ওয়ার্ডে পুলিশের ১৪টি স্পেশাল স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকার পাশাপাশি ৪২টি ওয়ার্ডে র্যাবের ২২টি মোবাইল টিম থাকবে।
এছাড়াও র্যাব-পুলিশের সাদা পোষাকের পৃথক পৃথক বিশেষ টিম সার্বক্ষণিক মাঠে মোতায়েন থাকবে। একটি সাধারণ ভোট কেন্দ্রে ৫ জন সশস্ত্র পুলিশ ও ১২ জন আনসারসহ মোট ১৭ জন দায়িত্ব পালন করবেন। পাশাপাশি মঙ্গলবার থেকে মাঠে নামবে ১০ প্লাটুন অর্থাৎ ৫০০ বিজিবি সদস্য। তারা ম্যাজিস্ট্রেটের অধীনে মাঠে থাকবে।
প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন করে মোট ৪২ ওয়ার্ডের জন্যে থাকবেন ৪২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এছাড়াও নির্বাচনী অপরাধসমূহ আমলে নিয়ে তা সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে বিচার সম্পন্নের লক্ষ্যে বিচার বিভাগের ১৪ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আজ সোমবার থেকেই মাঠে নামছেন। নির্বাচনকালীন আইনশৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে টানা ৫ দিন মাঠে থাকবেন তারা।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপকমিশনার সুদীপ দাস বলেন, গুরুত্বপূর্ণ ও সাধারণ কেন্দ্রের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। সুষ্ঠু ভোট গ্রহণের স্বার্থে কেন্দ্রগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তৎপর থাকবেন।