সুনামগঞ্জ-১ আসন : রতনে হতাশা, ভোটারদের ভরসা সেলিম

স্টাফ রিপোর্ট :
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ আগস্ট ২০২৩, ৪:০৪ পূর্বাহ্ণ
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল নভেম্বরে। নির্বাচনকে সামনে তৎপরতা শুরু হয়ে গেছে প্রার্থীদের। সুনামগঞ্জ-১ আসনেও থেমে নেই প্রার্থীদের তৎপরতা। নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে বিএনপির অবস্থান এখনও অস্পস্ট। তবুও আওয়ামী লীগের পাশাপাশি ধীরগতিতে বিএনপির প্রার্থীরা জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন যথারীতি। বসে নেই জাতীয় পার্টিও। পাশাপাশি জামায়াত ইসলামসহ অন্যান্য দলগুলো নির্বাচনে অংশ নিতে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।
সুনামগঞ্জ-১ আসন যার সংসদীয় আসন নং ২২৪। তাহিরপুর, জামালগঞ্জ ও ধর্মপাশা উপজেলা নিয়ে গঠিত হলেও সম্প্রতি ধর্মপাশা উপজেলাকে ভেঙে মধ্যনগর নামে আরেকটি নতুন উপজেলা ঘোষণা করায় আসনটি আরও সম্প্রসারিত হয়েছে। এখন চারটি উপজেলার আসন হওয়ায় সবচেয়ে বেশি মনোনয়ন প্রত্যাশীও এই আসনে। জেলার পাঁচটি সংসদীয় আসনের মধ্যে এটিই এখন আয়তন ও জনসংখ্যার দিক থেকে সবচেয়ে বড় আসন। এই আসনে আওয়ামী লীগের হয়ে লড়তে চান অন্তত ৮ জন প্রার্থী। এই আসনে আওয়ামী লীগের হয়ে টানা তিনবারের এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতন। তাছাড়া নির্বাচনে অংশ নিতে মাঠে পুরোপুরি প্রস্তুত আরও অনেকে। বিশেষ করে বর্তমান সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন একধিক ঘটনায় বিতর্কিত এবং সমালোচিত। যে কারণে এবারের নির্বাচনে দল থেকে তিনি বাদ পড়তে পারেন। এমন ভাবনায় এই আসনে প্রার্থীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। তবে রতন ঘনিষ্টরা বলছেন, তিনি এবারও নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন চাইবেন এবং বিজয়ী হবেন। অধিকাংশ ভোটার জানান, এমপি রতন ফের দলীয় মনোনয়ন পেলে টানা তিনবারের এই আসনটি হাতছাড়া হবে আওয়ামী লীগের। ফলে এই আসনে আওয়ামী লীগের হয়ে নৌকা প্রতীকের হয়ে লড়তে চান সুনামগঞ্জ ফাউণ্ডেশনের চেয়ারম্যান এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মো. সেলিম আহমদ। ভোটারদের কাছেও তিনি বেশ জনপ্রিয়। দীর্ঘদিন থেকে এলাকায় গণসংযোগসহ দলীয় কর্মসূচীতে যোগ দিচ্ছেন তিনি। অসহায়-দরিদ্র মানুষের সাহায্যে অব্যাহত রেখেছেন সহযোগীতা। একজন ব্যবসায়ী হিসেবে জেলার সেরা করদাতাও তিনি। এ ছাড়াও সম্ভাব্য প্রার্থীদের মাঝে রয়েছেন আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির টিম সদস্য ও সাবেক যুগ্ম সচিব বিনয় ভূষণ তালুকদার ভানু। এই নামটি ভোটারদের কাছে কম পরিচিত থাকায় আগ্রহ নেই ভোটারদের। পরিচিতি রয়েছে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রনজিত সরকারের। তিনি দীর্ঘদিন থেকেই নির্বাচনের লক্ষ্যে গণসংযোগসহ নানা কর্মসূচী পালন করে যাচ্ছেন। ডা. রফিকুল ইসলাম চৌধুরীও চাইছেন দলীয় মনোনয়ন। তাছাড়ও আলোচনায় রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হায়দার চৌধুরী লিটন,তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করুনাসিন্ধু চৌধুরী বাবুল,জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতারুজ্জামান সেলিম ও সুনামগঞ্জ-মৌলভীবাজার সংরক্ষিত আসনের বর্তমান এমপি শামীমা আক্তার খানম।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে তেমন তোড়জোড় নেই বিএনপির। নীরবে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন জাতীয় পার্টি এবং জমিয়তে উলামা ইসলামসহ অন্য দলের প্রার্থীরা। সম্ভাব্য প্রার্থীরা ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টারে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন। ফেসবুকে চালিয়ে যাচ্ছেন প্রচার। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে নিজেদের প্রার্থিতার কথা বলছেন। মনোনয়নপ্রত্যাশীরা কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে লবিং করছেন।
বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন সুনামগঞ্জ জেলা কৃষক দলের সভাপতি আনিসুল হক ও বিএনপি থেকে সাবেক সংসদ সদস্য নজির হোসেন এবং জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজ্জামান কামরুল। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে তিনজন প্রার্থী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিলেও শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত মেনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। এবারও তারা মাঠে আছেন। ভোটারদের সঙ্গে সভা, মতবিনিময় করছেন। তবে তারা বলছেন, আমরা নির্বাচনের জন্য নয়, সরকারবিরোধী আন্দোলনের জন্য মাঠে আছি। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। অবশ্য মাঠে তেমন দেখা যায় না নেতাদের। তবে হাটবাজারে নিজেদের প্রার্থিতার আভাস দিয়ে যাচ্ছেন।
নির্বাচনে অংশ নিলে প্রার্থী নিয়ে ঝুঁকি কম বিএনপির। অপরদিকে আওয়ামী লীগের তালিকা হচ্ছে দীর্ঘ । তাছাড়া এমপি রতনকাণ্ডে বিব্রত দলীয় হাই কমান্ড। একের পর এক এমপি রতনের অনিয়ম, দূর্নীতি এবং সমালোচনার ঘটনায় ক্ষুব্ধ স্থানীয়রাও। রতনের শাসনামলে দলীয় কার্যক্রমে স্তবিরতা, কোন্দল মাথাছাড়া দিয়ে উঠায় সাংগঠনিক দিক থেকেও পিছিয়ে আওয়ামী লীগ। সবশেষ দলীয় সিদ্বান্তে এমপি রতন মনোনয়ন বঞ্চিত হলে শতভাগ সম্ভাবনা সেলিম উদ্দিনের বলে জানান ভোটারা। একজন ত্যাগী এবং মানবিক নেতা হিসেবে ভোটারদের কাছে সেলিম উদ্দিন ব্যাপক জনপ্রিয়। দলীয় কর্মসূচীগুলোতে সেলিমের নেতৃত্বে সমাগম ঘটে হাজার হাজার মানুষের। আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান হিসেবে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে দীর্ঘদিন ধরে মাঠে প্রচারে আছেন তিনি।
দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তির বিষয়ে সুনামগঞ্জ ফাউণ্ডেশনের চেয়ারম্যান মো. সেলিম আহমদ বলেন,উন্নয়ন বান্ধব সরকারের প্রধানমন্ত্রী দু’হাত উজার করে টাকা দিয়েছেন এলাকার উন্নয়নে। সেই টাকায় পকেট ভারি হয়েছে দুর্নীতিবাজ সংসদ সদস্য ও তাঁর পরিবারের। টানা তিনবার ক্ষমতায় থাকার পরও দলীয় কার্যক্রম নেই। সাংগঠনিক কার্যক্রম অগোছালো। তিনি বলেন, জাতির পিতার আদর্শে উজ্জীবিত হয়েছি সেই ছাত্রজীবন থেকে। সুতরাং দল বিক্রি করে নয়, দলীয় আদর্শকে ধারণ করেই শেখ হাসিনার উন্নয়ন ধারার রাজনীতির সুফল পৌছে দিতে চাই অবহেলিত এই অঞ্চলে। সেলিম উদ্দিন বলেন, বর্তমান সংসদ সদস্য বিএনপি-জামায়াতের লোকজনকে নিয়ে জলমহাল, বালু মহাল ভোগ করছেন। আমি তৃণমূল নেতাকর্মীদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। বর্তমান সরকারের উন্নয়ন চিত্র সাধারণ মানুষের মাঝে তুলে ধরছি। দল আমাকে মনোনয়ন দিলে সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব। জেলার সর্ববৃহৎ নির্বাচনি এলাকা জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, ধর্মপাশা ও মধ্যনগরবাসীর কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করতে চাই।
এ ব্যাপারে মধ্যনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পরিতোষ সরকার বলেন, মোয়াজ্জেম হোসেন রতন দলীয় নেতাকর্মীদের কখনোই মূল্যায়ন করেন না। আওয়ামী লীগের সঙ্গে তার কোনো রকম সম্পর্ক নেই।
মনোনয়নপ্রত্যাশী বিনয় ভূষণ তালুকদার ভানু বলেন, সারাজীবন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের আদর্শের রাজনীতি করে এসেছি, জননেত্রী শেখ হাসিনা মেধাবী ও প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ নেতৃত্ব পছন্দ করেন। প্রধানমন্ত্রী যদি আমাকে মনোনয়ন দেন আমি আমার সাংগঠনিক কর্মদক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে নিষ্ঠার সঙ্গে দল, এলাকা ও দেশের জন্য কাজ করে যাব।
মনোনয়নপ্রত্যাশী হায়দার চৌধুরী লিটন বলেন, আমি ও আমার পরিবার সারাজীবন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের আদর্শের রাজনীতি করে এসেছি, আওয়ামী লীগের তৃণমূলকে শক্তিশালী করতে কাজ করে যাচ্ছি। আগামী নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকা নিয়ে নির্বাচন করতে চাই।