সুনামগঞ্জ-২ আসন : আ’লীগের মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে আল-আমিন চৌধুরী

স্টাফ রিপোর্ট :
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ আগস্ট ২০২৩, ৫:১২ পূর্বাহ্ণ
চলতি বছরের শেষেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে নভেম্বর মাসেই তপশিল ঘোষণার কথা জনিয়ে দিয়েছে। তবে এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রচার প্রচারণা শুরু না হলেও সুনামগঞ্জ-২ ( দিরাই- শাল্লা) আসনে বইছে আগাম নির্বাচনী হাওয়া। পাড়া-মহল্লাতে তৈরি হয়েছে জাতীয় নির্বাচনী আমেজ। ভোটারদের মন জয় করতে নানা রকম প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন আ.লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। নির্বাচনে অংশ গ্রহণ নিয়ে বিএনপির কোনো ঘোষণা না থাকলেও পিছিয়ে নেই প্রার্থীরা। দলের হয়ে মনোনয়ন নিতে মাঠ পর্যায়ে প্রার্থীদের পক্ষে চলছে গণসংযোগ। একসময় ন্যাপ-কমিউনিষ্ট পার্টির দুর্গ হিসেবে পরিচিত এই আসনে বর্তমানে সক্রিয় নেই সংগঠনদ্বয়। তাই ধারণা করা হচ্ছে, বাম ঘরাণার কেউই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ গ্রহণ না করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ আসনে আ.লীগ থেকে সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত তিন বারসহ মোট আট বার এমপি নির্বাচিত হোন। ২০১৭ সালে সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত মারা যাওয়ায় শূন্য আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হন সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের স্ত্রী ড. জয়া সেন গুপ্তা। ২০১৮ সালের সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এ আসনে তিনি নৌকা প্রতীক পেয়ে এমপি হন। অপরদিকে সাবেক বিচারপতি ও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মিফতা উদ্দিন চৌধুরী রুমী ১৯৯৬ সালের ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে বিএনপির এমপি ছিলেন।আগামি নির্বাচনেও সুনামগঞ্জ-২ আসনটি ধরে রাখতে আ.লীগ বদ্ধপরিকর। তবে দুই উপজেলায় সাংগঠনিক কার্যক্রম অনেকটাই অগোছালো বলে মনে করছেন আওয়ামী অনুসারী ভোটাররা। দলে সাংগঠনিক তৎপরতা ফিরিয়ে আনার দাবিও রয়েছে তাদের।
ভোটারদের তথ্য অনুযায়ী এই আসনে দলীয় মনোনয়ন পেতে কেন্দ্রে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দিয়েছেন অনেকেই। সরকারের ধারাবাহিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরতে ভোটারদের দ্বারস্থ হচ্ছেন তারা। অপরদিকে বিএনপির প্রার্থীদের অপেক্ষা করা ছাড়া নির্বাচনী কর্মকাণ্ড অনুল্লেখযোগ্য। তবে সম্ভাব্য নির্বাচন ধরে নিয়ে কেন্দ্রীয় নানা কর্মসূচির মাধ্যমে কৌশলে ভোটের প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রার্থীরা।
এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ড. জয়া সেন গুপ্তা ফের অংশ নিচ্ছেন নির্বাচনে। এমনটি তাঁর অনুসারীরা প্রচার করে বেড়ালেও অন্য পক্ষ বলছে, তিনি শারীরিক অসুস্থ্যতা জনিত কারণে নির্বাচন থেকে বিরত থাকতে পারেন। তবে তিনি ব্যর্থ হলে স্বামীর দীর্ঘদিনের এই আসনটি ধরে রাখার জন্য সেন পরিবারের কাউকে প্রার্থী করাতে পারেন। এ ছাড়াও এ আসনে আ.লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় রয়েছেন শাল্লা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ। ভোটারদের কাছে ক্লিজ ইমেজ হিসেবে নাম রয়েছে এই নেতার। একজন সহজ-সরল মানুষ হিসেবেও ভোটারদের কাছে তিনি রয়েছেন তালিকার শীর্ষে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক উপকমিটির সাবেক সদস্য ব্যারিস্টার অনুকুল তালুকদার ডাল্টনও রয়েছেন মনোনয়র তালিকায়। তিনি এলাকায় অনেক আগ থেকেই গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। তালিকায় আরও যাদের নাম রয়েছে তাঁরা হলেন, যুক্তরাজ্য শ্রমিকলীগ নেতা ডক্টর সামছুল হক চৌধুরী, এপিপি অ্যাডভোকেট শামছুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাড: অবনী মোহন দাশ, বিমান বাহিনীর অরসরপ্রাপ্ত স্কোয়াড্রন লিডার, স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) প্রাক্তন ডেপুটি ডিরেক্টর তানভীর তুলী, সাবেক সচিব মিজানুর রহমান মিজান, হাইকোর্টের আইনজীবী এডভোকেট সুবীর নন্দী দাস ও ঋতেশ রঞ্জন দেব।
অপরদিকে বিএনপি থেকে মনোয়নের প্রত্যাশী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন বিএনপির জাতীয় কমিটির সদস্য সাবেক এমপি নাছির উদ্দীন চৌধুরী ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী জেলা বিএনপির উপদেষ্টা এডভোকেট তাহির রায়হান চৌধুরী পাবেল। তবে বিএনপির নাছির উদ্দীন চৌধুরী শারীরিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় রাজনীতির মাঠে বিচরণ কম। সে তুলনায মাঠে সক্রিয় রয়েছেন অ্যাডভোকেট তাহির রায়হান চৌধুরী পাবেল। তাছাড়া যুক্তরাজ্য বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজমল হোসেন চৌধুরী জাবেদের নামও সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকায় রয়েছেন।
এ আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান সাংসদের অন্যতম প্রতিদ্বন্দী ভাবা হচ্ছে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদকে। তার অনুসারীরা বলছেন, হাইকমান্ড থেকে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে গ্রীন সিগন্যাল পেয়েছেন তিনি। যে কারণে প্রতিদিনই বিভিন্নপাড়া-মহল্লায় গনসংযোগের পাশাপাশি দলীয় সাংগঠনিক ও উন্নয়ন কর্মকান্ডে অংশ নিচ্ছেন। বিএনপির দুই সম্ভাব্য প্রার্থী প্রবাসে থাকায় ও সাবেক এমপি নাছির উদ্দীন চৌধুরীর অসুস্থজনিত কারনে আগামি সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিএনপির কোনো বক্তব্য জানা যায়নি।
এদিকে চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ আল আমিন চৌধুরী জানিয়েছেন, বৃহৎ দল হিসেবে আওয়ামী লীগে একাধিক প্রার্থী থাকাটা স্বাভাবিক। এই প্রক্রিয়ায়ই দলীয় প্রধানের কাছে নিজের মনোনয়ন চাইবো। তিনি বলেন, মনোনয়ন চাওয়ার অর্থ এই নয় যে, আমি অপর প্রার্থীর বিপক্ষে কিংবা কারো থেকে আমি বেশি জনপ্রিয়। আসলে মাঠ পর্যায়ে প্রার্থীদের আমলনামা যাচাই-বাছাই শেষে অধিকতর যোগ্য কিংবা জনপ্রিয় ব্যক্তিকেই দল থেকে মনোনয়ন দেয়া হবে। তিনি বলেন, দল ও জনগণের কল্যাণ বিবেচনা করে যার হাতেই নৌকা প্রতীক তোলে দেওয়া হবে, দিনশেষে তাদের হয়েই নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করতে সবাই একজোটে কাজ করবো। প্রয়াত জাতীয় নেতা বাবু সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের নাম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে তিনি বলেন, দিরাই-শাল্লা আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ড. জয়া সেনগুপ্তাকে মাইনাস করে রাজনীতি করার উদ্দেশ্য আমার নেই। এ আসনে যিনিই দলীয় মনোনয়ন পাবেন নৌকার বিজয় ধরে রাখতে তিনি তার পক্ষেই নির্বাচনী মাঠে কাজ করবেন।
সুনামগঞ্জ-৩ আসন নিয়ে রোববার (২০ আগষ্ট) পড়ুন বিস্তরিত