যুক্তরাজ্যে প্রবাসী বাঙ্গালীদের প্রাণের উৎসব শুরু ২ সেপ্টেম্বর

বাঙালীর সংস্কৃতি শত বছরের সমৃদ্ধ। শুদ্ধ সংস্কৃতির এই আলো ছড়িয়ে যাবে দশ দিগন্তে। প্রবাসের মাটিতে হাজারো বাঙ্গালীর কণ্ঠে ধ্বণিত হবে-আমার সোনার বাংলা/আমি তোমায় ভালোবাসি। প্রবাসীদের এমনই একটি উদ্যোগ এখন সারা জাগাচ্ছে যুক্তরাজ্যে। প্রবাসী একদল শেকঁর সন্ধানী মানুষের আয়োজনে যুক্তরাজ্যের মাটিতে শুরু হচ্ছে বইমেলা। তবে এই আয়োজন শুধু বইমেলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে না। ১৩ বছরের সফল ধারাবাহিকতায় এবার আরো ব্যাপক পরিসরে ১৪তম লণ্ডন বাংলা বইমেলা ও সাংস্কৃতিক উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আগামী ২-৩ সেপ্টেম্বর পূর্ব লন্ডনের ব্রাডি আর্টস সেন্টারে বইমেলা ও সাংস্কৃতিক উৎসবকে সফল ও উৎসবমূখর করে তুলতে সবার স্বতঃস্ফূূর্ত উপস্থিত কামনা করা হয়েছে আয়োজকদের পক্ষ থেকে। আয়োজক সংস্থা লন্ডন বাংলা বইমেলা উদযাপন পর্ষদের নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, বিলেতের বাংলা ভাষাভাষি লেখক—সাহিত্যিক—সাংস্কৃতিক ও সাংবাদিকসহ বইপ্রেমীদের প্রাণের এই মেলায় সহযোগীতায় রয়েছে বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি,লণ্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন ও সৃষ্টি বিশ্বময় নামের সাংস্কৃতিক সংগঠন। বাংলাদেশে অনুষ্ঠানের সমন্বয় করবেন বিশিষ্ট গণসঙ্গীত শিল্পী অলক দাস গুপ্ত।

দু’দিনব্যাপী এই বইমেলা ও সাংস্কৃতি উৎসবে অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ ও বৃটেনের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত থাকার পাশাপাশি অনেকগুলো বাংলাদেশী প্রকাশনা সংস্থা তাদের প্রকাশিত বিপুলসংখ্যক বই নিয়ে মেলায় অংশ নেবে বলে আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়। এছাড়া সাংস্কৃতিক উৎসবকে প্রাণবন্ত করে তুলতে কবিতা আবৃত্তি, স্বরচিত কবিতা পাঠ, গান এবং শিশু—কিশোরদের চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠিত হবে।

উৎসবে অতিথি হিসেবে সামিল হবেন দেশের প্রখ্যাত লোকসঙ্গীত শিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায়। অতিথিদের তালিকায় আছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. গহর রিজভী, শিক্ষা উপমন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী এমপি,লণ্ডনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সৈয়দা মুনা তাসনিম, বাংলা একাডেমির সভাপতি প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহাম্মদ নূরুল হুদা মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, মহাপরিচালক জাতীয় জাদুঘর,পরিচালক শিল্পকলা একাডেমী জতিকা পাল জয়তি (অভিনেত্রী) কবি সৌম সালেক,সহকারী পরিচালক শিল্পকলা একাডেমী। মেলা উদ্বোধন করবেন টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমান।

বইমেলা ও সাংস্কৃতিক উৎসব উপলক্ষ্যে ১৮ অগাস্ট শুক্রবার পূর্ব লণ্ডনের ব্রাডি আর্ট সেন্টারে আয়োজিত এ সংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলনে বইমেলা ও সাংস্কৃতিক উৎসবের বিস্তারিত কর্মসূচী তুলে ধরে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন লণ্ডন বাংলা বইমেলা উদযাপন পর্ষদের সদস্যসচিব, ছড়াকার দিলু নাসের। স্বাগত বক্তব্য রাখেন উপস্থিত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন মেলা উদযাপন পর্ষদের প্রধান সমন্বয়ক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গোলাম মোস্তফা। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মেলা উদযাপন পরিষদের সমন্বয়ক যথাক্রমে কবি মাশূক ইবনে আনিস, উপদেষ্টা এডভোকেট কবি মুজিবুল হক মনি, কবি গোলাম কবির মেলা কমিটির সমন্বয়ক যথাক্রমে সাংবাদিক মিসবাহ জামাল, কবি ফয়জুর রহমান ফয়েজ, তৌফিকুর রহমান তরফদার প্রমুখ্য।

বইমেলা ও সাংস্কৃতিক উৎসবকে আলোকিত করার জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করে বক্তারা বলেন, এধরনের বইমেলা ও উৎসব নিজেদের সাংস্কৃতিক বিকাশে বড় ভূমিকা রাখে। এধরনের অনেকগুলো মেলা ও উৎসবে কোনো অসুবিধা নেই মন্তব্য করে বক্তারা বলেন, আমাদের সাহিত্য—সংস্কৃতি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয়াই আমাদের মূখ্য উদ্দেশ্য এবং আমরা চাই এসবের মাধ্যমে দেশপ্রেম জাগ্রত হোক। তৃতীয় বাংলা খ্যাত বিলেতে এখন আর বাংলা বইয়ের দোকান নেই উল্লেখ করে তারা বলেন, বেশী বেশী বইমেলা ও সাংস্কৃতিক উৎসবের মাধ্যমেই বইপ্রেমীদের কাংখিত বইটি পাওয়ার সম্ভাবনা ও সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে।

সংবাদ সম্মেলনে এবারের বইমেলা ও সাংস্কৃতিক উৎসব সফলে ইতোমধ্যে গঠন করা উপদেষ্টা কমিটি, কমিটিতে বিলেতের বিশিষ্ট সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক, সাংবাদিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করা হয়েছে।

স্বাগত বক্তব্যে প্রধান সমন্বয়ক গোলাম মোস্তফা বলেন, বাংলা একাডেমি ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় সম্মিলিত সাংস্কৃতিক পরিষদ যুক্তরাজ্যের উদ্যোগে ২০১০ সালে লণ্ডন বাংলা বই মেলা ও সাংস্কৃতিক উৎসব শুরু হয়। যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন সাহিত্য—সাংস্কৃতিক সংগঠন, কবি—সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিককর্মীসহ নানা পেশার বাঙালিরা এসব উৎসবের আয়োজক ছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সাল থেকে লণ্ডন বাংলা বইমেলা নামে নতুন রূপে এর কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

আয়োজক কমিটির অপর সদস্য কবি মাশুক ইবনে আনিস দুইদিন ব্যাপী বাঙ্গালীর এই প্রাণের উৎসবে প্রবাসী সকল বাঙ্গালীর স্বত:স্ফুর্ত অংশগ্রহণ কামনা করেছেন। দুই দিনের কর্মসূচী তোলে ধরে তিনি বলেন, প্রথম দিন ২রা সেপ্টেম্বর, শনিবার মেলা শুরু হবে দুপুর ২টায় এবং এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে বিকেল সাড়ে ৫ টায়। বিকেল ২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত শিশু—কিশোরদের রয়েছে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। দ্বিতীয় দিন ৩রা সেপ্টেম্বর রোববার মেলা শুরু হবে দুপুর ১২টায় এবং উন্মোক্ত থাকবে রাত ৯টা পর্যন্ত। ওইদিন সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় থাকবে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, তাল—তরঙ্গ এবং অংশ নেবেন স্থানীয় বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পীবৃন্দ। সাহিত্য সংগঠন শিকড় এবং আবৃত্তি সংগঠন বর্ণনের পরিবেশনায় থাকবে বিশেষ অনুষ্ঠান এবং সেমিনার। এছাড়া রোববার দিনব্যাপী আলোচনাসহ স্বরচিত কবিতা পাঠ, আবৃত্তি এবং অন্যান্য সাংস্কৃতিক সংগঠন ও শিল্পীবৃন্দের পরিবেশনা থাকবে। এবার প্রথম বারের মতো বইমেলা পর্ষদের পক্ষ থাকে বিলেতে সাহিত্য সংস্কৃতিতে বিশেষ অবদানের জন্য একাধিক ব্যক্তিকে সম্মাননা পদক প্রদান করা হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।