শ্রীমঙ্গলে ৯ দিনেও মেলেনি মজুরি, চা শ্রমিকদের মানবেতর দিন

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি :
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ আগস্ট ২০২৩, ১১:০৮ অপরাহ্ণ
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার হোসনাবাদ চা-বাগানে সাপ্তাহিক মজুরি ও রেশন না পেয়ে ৯ দিন ধরে মানবেতর জীবন পার করছেন আন্দোলনরত চা শ্রমিকরা। শনিবারও (২৬ আগস্ট) ন্যায্য মজুরি ও রেশনের দাবিতে কালিঘাট বালিশিরা মেডিকেল ডিপার্টমেন্ট এলাকায় বাগানের প্রধান ফটকে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছেন শ্রমিকরা।
দাবি আদায়ের জন্য হোসনাবাদ চা-বাগানের প্রধান ফটকে বিক্ষোভ ও সভা করেন শ্রমিকরা। এ সময় মজুরি আটকে রাখার দায়ে বাগানের মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দাবি জানান তারা।
এদিকে আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে একাত্ব ঘোষণা করে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বালিশিরা ভ্যালির সভাপতি বিজয় হাজরা, ইউনিয়নের সহ-সভাপতি পংকজ কন্দ।
আন্দোলনরত চা-শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সপ্তাহের মজুরি ও রেশন দেওয়ার কথা থাকলেও দুই সপ্তাহ ধরে দেওয়া হচ্ছে না। এতে প্রায় অর্ধাহার-অনাহারে দিন পার করতে হচ্ছে তাদের।
বাগানের নারী চা-শ্রমিক লক্ষ্মী কর্মকার বলেন, ‘আমাদের পেটে খানা নাই, চাল নাই, ডাল নাই, খাবারের জন্য বাচ্চারা কান্নাকাটি করছে। অনেক যন্ত্রণা নিয়ে আমরা বাগানে কাজ করি। অনেক রোগ নিয়েও আমরা বাগানে কাজ করি, কিন্তু বাগানে কোনো এমবিবিএস ডাক্তার নাই, ভালো ওষুধ নাই। বাড়ি ঘর ভাঙা, মেরামত করে দেয় না।’
লক্ষ্মী কর্মকার বলেন, আমরা কী অপরাধ করেছি যে, বাগান মালিক আমাদের এভাবে সাজা দিচ্ছে?
ফুল মালা নামে আরেক শ্রমিক বলেন, ‘আমরা দুই সপ্তাহ কাজ করছি, আমাদের বেতন রেশন বন্ধ। ২ সপ্তাহ ধরে তলব আনতে গিয়ে খালি ব্যাগ নিয়ে ফিরে এসেছি, বাজার আনতে পারিনি। ঘরে এসে দেখি খাবারের জন্য বাচ্চারা কান্নাকাটি করছে।’
হোসনাবাদ চা বাগান পঞ্চায়েতের সাধারণ সম্পাদক মালেক মিয়া বলেন, চা শ্রমিকরা এই মজরি দিয়ে সারা সপ্তাহের বাজার সদাই করে থাকেন। এখন কয়দিন পর পর সেই মজুরির জন্য আমাদের আন্দোলন করতে হয়।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বালিশিরা ভ্যালি সভাপতি বিজয় হাজরা বলেন, ‘হোসনাবাদ চা বাগান মালিক ১০-১২ বছর ধরে নিয়মিতভাবে শ্রমিকদের মজুরি দিচ্ছেন না। বাগান কর্তৃপক্ষের কাছে শ্রমিকদের আগের বকেয়া থাকলেও, তা পরিশোধ করা হচ্ছে না। বিভিন্ন সময় বাগান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শ্রমিক ইউনিয়নের আলোচনায় নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো অন্যান্য বাগান বাস্তবায়ন করেছে, কিন্তু হোসনাবাদ চা বাগান কর্তৃপক্ষ তা মানছে না। এখন শ্রমিকদের নিয়মিত মজুরি-রেশন দিচ্ছে না। এ নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।’
চা শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি পংকজ কন্দ বলেন, ‘হোসনাবাদ চা বাগান কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করছে। মালিক পক্ষ এই চা বাগানের শ্রমিকদের মানুষ বলে মনে করেন না।’
অভিযোগ বিষয়ে জানতে হোসনাবাদ চা বাগানের ব্যবস্থাপক মো. জাকির হোসেনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিক বার যোগাযোগ করেও বন্ধ পাওয়া যায়।
জানতে চাইলে শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত বাংলাদেশ শ্রম দপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. নাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি যেটুকু জানি, বাগান কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি প্রদানে রাজি হয়েছে। আগামী সোমবার বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের কার্যালয়ে সরকার, শ্রমিক ও মালিক পক্ষকে নিয়ে একটি বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানে বিষয়টির সমাধান হবে বলে আশা করছি।’
জানতে চাইলে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই।’ বিষয়টি শ্রীমঙ্গলের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান তিনি।