ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ঢাকায় আসছেন রোববার

বাংলানিউজ এনওয়াই ডেস্ক :
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৯:৫৬ অপরাহ্ণ
ভারতে জি-২০ সম্মেলন শেষে রবিবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুই দিনের সফরে ঢাকায় আসছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। ৩৩ বছর পর বাংলাদেশে কোনো ফরাসি প্রেসিডেন্টের এটিই হবে প্রথম সফর। এর আগে ১৯৯০ সালের ২২ থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সফর করেছিলেন সাবেক ফরাসি প্রেসিডেন্ট মিতেররান্ড।
সূত্র জানায়, রবিবার সন্ধ্যায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁকে বহনকারী বিমান। এর কিছু সময় আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমান অবতরণ করবে। এরপর সেখানেই ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টকে বরণ করে নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর ঢাকা সফরে বাণিজ্যিক, প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিক বিষয় প্রাধান্য পেলেও সময় ও ভূ-রাজনৈতিক কারণে এটিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, একদিকে এই সফরের মাধ্যমে ইউরোপের একটি শক্তিশালী দেশের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক স্থাপনের যেমন একটি সম্ভাবনা তৈরি হবে, অন্যদিকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক দৃঢ় করার মাধ্যমে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সুবিধা আদায়ের সুযোগ তৈরি হতে পারে। অর্থনৈতিক সহযোগিতা, জলবায়ু পরিবর্তন ও নিরাপত্তার বিবেচনার বাইরেও ফ্রান্স বাংলাদেশের সঙ্গে তার সম্পর্ককে আরো শক্তিশালী করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ফরাসি প্রেসিডেন্টের এই সফরে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক চুক্তি সইসহ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল তথা ভূ-রাজনৈতিক ইস্যুতে আলোচনা হতে পারে।
সূত্র আরো জানায়, গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক বিষয়াদির বাইরেও ঢাকা ঘুরে দেখতে চান ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। বিশেষ করে প্রত্যক্ষ করতে চান রাতের ঢাকা। তিনি ধানমন্ডি লেক পরিদর্শন করবেন। এছাড়া জলের গানের ব্যান্ডের লিড ভোকালিস্ট রাহুল আনন্দের বাসায় গিয়ে আনন্দ উদযাপনের পাশাপাশি শুনবেন গান। রাহুল আনন্দের বাসা থেকে হোটেলে ফিরে যাবেন ম্যাক্রোঁ। পরদিন ১১ সেপ্টেম্বর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট। সেখানে তাকে অভ্যর্থনা জানাবেন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা ও তার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি।
এরপর ম্যাক্রোঁ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। বৈঠক শেষে চুক্তি স্বাক্ষর হবে বলে জানা গেছে। সবশেষে দুদেশের একটি যৌথ প্রেস ব্রিফিং হতে পারে। এরপর একান্তে কিছু সময় কথা বলবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ম্যাক্রোঁ। সেখান থেকে ফ্রান্স দূতাবাসে দুপুরের ভোজে অংশ নেবেন ম্যাক্রো।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ১১ সেপ্টেম্বর ঢাকা ছাড়বেন ম্যাক্রোঁ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুুল মোমেন তাকে বিমানবন্দরে বিদায় জানাবেন। এ সময় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাথরিন কোলোনাও উপস্থিত থাকবেন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং বাংলাদেশে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা গুরুত্বপূর্ণ এই সফরকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন।
ফ্রান্স বর্তমানে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিয়েছে এবং এই অঞ্চলের ভৌগলিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ফ্রান্স-বাংলাদেশ সম্পর্ক যথেষ্ট অগ্রসর হয়েছে। দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে তিন বিলিয়ন ইউরোর বেশিতে দাঁড়িয়েছে। চলতি বছরের জুন মাসে ঢাকায় নিযুক্ত ফরাসি রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশি কোম্পানিগুলোকে ফ্রান্সে বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। এছাড়া চলতি বছরের জুলাইয়ের শুরুতে ফরাসি নৌবাহিনীর একটি জাহাজ চট্টগ্রামে শুভেচ্ছা সফর করে এবং বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সঙ্গে যৌথ মহড়ায় অংশ নেয়। এসময় বাংলাদেশে নিযুক্ত ফরাসি রাষ্ট্রদূত ম্যারি মাসদুপুয়ের একটি বিবৃতি দেন। মূলত এসবের মাধ্যমে ভারত মহাসাগরের বৃহত্তর অঞ্চলে বাংলাদেশের কৌশলগত গুরুত্বকেও স্বীকার করে নেয় ফ্রান্স।