ইবনেসিনা হাসপাতালে দায়িত্বে অবহেলায় রোগীর মৃত্যু!

স্টাফ রিপোর্ট :
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৮:৫০ অপরাহ্ণ
হাসপাতালে দায়িত্বে অবহেলার কারণে এক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এমন অভিযোগ করেছেন মৌলভীবাজার জেলার রাজনগরের কাটাজুড়ি গ্রামের মৃতের ছেলে আরাফাত ময়নুল খান। ঘটনাটি ঘটে ৬ সেপ্টেম্বর সিলেট ইবনে সিনা হাসপাতালে। অভিযোগকারী ময়নুল খান জানান, তাঁর মা সৈয়দা হাজেরা খাতুন দীর্ঘদিন থেকে ক্যান্সার জনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। এর আগেও তিনি হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. নাজমুল ইসলামের পরামর্শে একাধিকবার ইবনে সিনা হাসপাতালে মায়ের চিকিৎসা করিয়েছেন।
এদিকে চলতি বছরের গেল ২৪ জুলাই মা সৈয়দা হাজেরা খাতুনকে আশংকাজনক অবস্থায় ইবনে সিনা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ভর্তিকালীন দীর্ঘ দেড় মাস সময়ে কর্তব্যরত স্টাফদের একাধিক অভিযোগ কতৃপক্ষের নজরে আনার চেষ্টা করেন ময়নুল খান। কিন্তু কিছু সময়ের জন্য কর্তৃপক্ষ দায়িত্বশীল হলেও পরক্ষনেই ফের অনিয়ম চলে বলে জানান তিনি।
এ অবস্থায় ঘটনার দিন মা সৈয়দা হাজেরা খাতুনের শ্বাস-কষ্টের প্রকোপ বৃদ্ধি পেলে তিনি কর্তব্যরত নার্সকে বিষয়টি অবহিত পূর্বক দ্রুত অক্সিজেন সরবরাহ করার অনুরোধ করেন। দায়িত্বরত নার্স এ সময় জানায়, এগুলো স্বাভাবিক বিষয়, অক্সিজেনের কোনো প্রয়োজন নেই। মায়ের এমন অবস্থায় নার্সের কথায় ভরসা রাখতে পারেন নি তিনি। তিনি বারবার কর্তব্যরত চিকিৎসককে কল করার অনুরোধ করেন। তবে কথায় সাড়া দেননি দায়িত্বরত নার্স। এভাবেই সময় চলে যায় প্রায় এক ঘন্টা। এ সময় ময়নুল খান খাবারের জন্য বাহিরের গেলে সিঁিড়তেই দেখা মিলে চিকিৎসকের। তিনি অভয় দিয়ে ময়নুলের সাথে চলে যান রোগীর কেবিনে। পরীক্ষা-নীরিক্ষার পর চিকিৎসক জানান, অনেক দেরি হয়ে গেছে। রোগীকে আরও আগে অক্সিজেন দেওয়ার প্রয়োজন ছিল। এ সময় ময়নুল জানান, দায়িত্বরত নার্সকে বারবার অক্সিজেন সরবরাহের কথা বলার পরেও তিনি কর্ণপাত করেন নি। এর কিছুক্ষণ পরই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন মা সৈয়দা হাজেরা খাতুন।
মায়ের এই মৃত্যুতে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে ছেলে ময়নুল। তিনি এই মৃত্যুকে কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারেন নি। হাসপাতালের বেডেই ময়নুলের গগনবিদারী চিৎকারে কেঁেপ উঠে বিশাল ভবন। তিনি এ সময় হাসপাতালের সিসি ফুটেজে নার্সের সাথে কতোপোকথনের বিষয়টিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চেক করার বিষয়টি বলতে থাকেন এবং কর্তব্যরতদের দায়িত্বে অবহেলার বিষয়টি তোলে ধরে বারবার বিলাপ করতে থাকেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে তিনি নিজের ফেসবুক পেইজে লাইভ করে সকলের দৃষ্টিতে আনেন ময়নুল। বিষয়টি বুঝতে পেরে হাসপাতাল কতৃপক্ষ কথা বলেন ময়নুলের সাথে। এ সময় হাসপাতালের চেয়ারম্যান মাওলানা হাবিবুর রহমান ময়নুলকে সর্বোচ্চ তিনদিনের মধ্যে ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে সুষ্টু সমাধান করবেন বলে আশ্বস্থ করেন। কিন্তু ঘটনার এক সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও হাসপাতালের চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে ময়নুলকে কিছুই জানানো হয় নি। উপরন্তু চেয়ারম্যানের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন বলে জানান ময়নুল।
হাসপাতাল কতৃপক্ষের নিষ্ঠুরতার অভিযোগ তোলে ধরে ময়নুল বলেন, মায়ের চিকিৎসার বিল বাবদ মোট টাকার পরিমান ছিল ২ লাখ ৯৩ হাজার টাকা। সেখানে আমাকে ছাড় দিয়ে হাসপাতাল কতৃপক্ষ ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা পরিশোধের কথা বলেন। এর আগে ১৭ আগষ্ট ময়নুল ব্র্যাক ব্যাংকের নিজ একাউন্ট থেকে ৬০ হাজার টাকা ইবনে সিনা হাসপাতালের একাউন্টে প্রেরণ করেন। যার রেফারেন্স নং এস ৫৪১৭৩০৪৯ । অবশিষ্ট ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা ঘটনার দিন হাসপাতালে ক্যাশ প্রদান করেন। মানি রিসিটের বিবরণ অনুযায়ী রেজি নং ১৭২৭৭৩, এমআর নং-১৮৪৮১২ কেবিন নং-বি-৪০৫।
ময়নুল বলেন, মাকে হারিয়েছি। এখন আর মাকে পাবো না। কিন্তু হাসপাতাল কতৃপক্ষ ঘটনার সময় কয়েকটি অনলাইন টিভি চ্যানেলকে জানায়, আমি না কি চিকিৎসা খরচ কমানোর জন্য এমনটি করেছি এবং টাকা ২ লাখ ৫০ হাজার পরিশোধ করার তথ্য না দিয়ে টাকার পরিমান ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছি বলে তথ্য জানায়। ময়নুল বলেন, মায়ের চিকিৎসার জন্য ইতোপূর্বে ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা খরচ করেছি। কারো কাছে দয়া কিংবা হাত পাতিনি। শুধু মাকে সুস্থ্য এবং স্বাভাবিক দেখতে চেয়েছি। কিন্তু ইবনে সিনা হাসপাতালে কর্তব্যরতদের দায়হিনতার কারণে মাকে চলে যেতে হয়েছে।
ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য হাসপাতালের চেয়ারম্যান মাওলানা হাবিবুর রহমানের ব্যক্তিগত সেলফোনে এই নাম্বার থেকে (০১৭১১-৯৬৮১৪৬) একাধিকবার ফোন করা হলেও কল রিসিভ না করায় মন্তব্য আদায় করা সম্ভব হয় নি।