সিলেট-৬ > আওয়ামী লীগে শঙ্কা, আগ্রহ নেই বিএনপিতে

স্টাফ রিপোর্ট :
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ অক্টোবর ২০২৩, ৮:১৮ অপরাহ্ণ
মাঠে ময়দানে চলছে নির্বাচনী আলোচনা। পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে কর্মী-সমর্থকরা এখন সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। বিভিন্ন সম্ভাব্য প্রার্থীর প্রচারে এলাকাবাসীর ব্যানারে প্রচারপত্র, পোস্টার সাঁটানো চলছে। অনন্য সৌন্দর্যময় নৈসর্গিক দুটি উপজেলা গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার নিয়ে গঠিত সিলেট-৬ আসন। দুই উপজেলাই প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে বেশ পরিচিতি রয়েছে। ইতিহাস-ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ এই এলাকায় রয়েছে কয়েকটি গ্যাসক্ষেত্র।
বিয়ানীবাজার শেওলা স্থলবন্দরের মাধ্যমে ভারত বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি ব্যবসা দেশের রাজস্ব খাতে অবদান রেখে চলেছে। গোলাপগঞ্জ নামের উৎপত্তি সম্পর্কীয় ইতিহাস আজও রহস্যাবৃত। এ সম্পর্কে এখনো কোনো প্রামাণ্য দলিল পাওয়া যায়নি। অনেকের মতে, কোনো ব্যক্তি বিশেষের বিশেষ করে কোনো রাজা-বাদশাহ, স্থানীয় শাসকের নাম গোলাপগঞ্জ নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে।
অন্যদিকে বিয়ানীবাজার উপজেলার পূর্ব নাম ছিল পঞ্চখণ্ড। তৎকালীন সময়ে পঞ্চখ- গহীন জঙ্গল ও টিলা বেষ্টিত ছিল। সিলেটের প্রথম রায় বাহাদুর হরেকৃষ্ণ রায় চৌধুরীর পুত্র কৃষ্ণকিশোর পাল চৌধুরী এখানে একটি বাজার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। হিংস্র জীবজন্তুদের ভয়ে লোকজন সকালবেলা বাজার শেষ করে নিজ নিজ আশ্রয়ে ফিরতেন। স্থানীয় ভাষায় বিয়ানবেলা এই হাট বসত। তাই এর নাম হলো বিয়ানীবাজার, যা কালের আবর্তনে বিয়ানীবাজার নাম ধারণ করেছে।
এই আসন থেকে একাধিকবার নির্বাচিত বর্তমান সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ ছিলেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী। একজন ক্লিন ও পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ হিসেবেও তার সুনাম রয়েছে। এই আসনে প্রবাসীদের দাপট রয়েছে। জাতীয় এবং স্থানীয় নির্বাচন এলে প্রবাসীদের তৎপরতা দেখা যায়। কেউ কেউ নির্বাচনে প্রার্থী হতে দেশে আসেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রবাসীরাও মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।
গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার নিয়ে গঠিত সিলেট-৬ আসনের মোট ভোটার ৩ লাখ ৯৩ হাজার ১১৫ জন। পুরুষ ভোটার এক লাখ ৯৫ হাজার ৩৯৬ এবং নারী ভোটার এক লাখ ৯৭ হাজার ৭৪৬ জন। মোট কেন্দ্র ১৯১টি।
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে একাধিক প্রবাসী মনোনয়নপ্রত্যাশী মাঠে রয়েছেন। সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ছাড়াও আওয়ামী লীগের শক্তিশালী আরেক প্রার্থী হচ্ছেন কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সারওয়ার হোসেন। নির্বাচনী মাঠে এই দুই নেতার অবস্থানকে কেন্দ্র করে দলের নেতাকর্মীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। আওয়ামী লীগের অপর প্রার্থীরা হলেন, গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এলিম চৌধুরী ও বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগের সভাপতি আলেয়া সারোয়ার ডেইজী।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ক্ষমতায় থাকাকালে নিজে সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু সেসময় তার আশপাশে থাকা কিছু লোক সুবিধা নিয়েছেন। আর যারা সুবিধা পাননি আজ তারা তার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তবে অভিযোগও রয়েছে বিস্তর। এই আসন থেকে একাধিকবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য হলেও পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান এবং রাস্তাঘাটের খুব একটা উন্নয়ন হয়নি। প্রবাসী অধ্যুষিত হলেও প্রবাসীদের প্রত্যাশা অনুযায়ী খুব একটা উন্নয়ন হয়নি। স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গেও তার কিছুটা দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। তবে শিক্ষা ব্যবস্থাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে এই নির্বাচনী এলাকায় যথেষ্ট উন্নয়ন হয়েছে। একটা সময় বিদ্যুৎ ও গ্যাসের যথেষ্ট সংকট থাকলেও এই অঞ্চলের মানুষকে এখন বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংকটে পড়তে হয় না বললেই চলে। কারণ বিয়ানীবাজার গ্যাসফিল্ড থেকে গ্যাস গোটা এলাকাতে বিতরণের ফলে রান্নায় গ্যাস ব্যবহারের সুবিধা পাচ্ছেন এলাকাবাসী। আর এসব উন্নয়নের রূপকারই হচ্ছেন নুরুল ইসলাম নাহিদ।
আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, পদ-পদবি বা নমিনেশনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত নেবেন, আমি সেটাই গ্রহণ করব। দেশ একটা উন্নয়নের গতিধারায় এগিয়ে যাচ্ছে এটা শুধু আমরা নয়, সারা দুনিয়া স্বীকার করছে। কে ক্ষমতায় গেল না গেল সেটা আসল নয়, তার চেয়ে বড় হচ্ছে লক্ষ্যটা কাজে লাগিয়ে আমাদের দেশটা এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
এদিকে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে মনোনয়ন যুদ্ধে নুরুল ইসলাম নাহিদ ছাড়াও একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। ইতোমধ্যে তাদের অনেকেই প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। অনেকেই দলের সর্বোচ্চ পর্যায়ে তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। নতুন মনোয়নপ্রত্যাশীরা দলীয় বলয়ের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সাধারণ ভোটারদের নিয়ে উঠান বৈঠকসহ সভা-সামবেশ করে যাচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তাদের অনুসারীরা প্রচার চালাচ্ছেন।
আগামী নির্বাচনে এই আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা সারওয়ার হোসেন এখন মাঠে সক্রিয়। তিনি ২০০৮ সাল থেকে এই আসনে নৌকার মনোনয়ন চেয়ে আসছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। সারওয়ার হোসেন কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। বিগত ১৫ বছর ধরে তিনি এলাকায় সক্রিয় রয়েছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে একের পর এক সভা-সমাবেশ এবং নিজ এলাকার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করে আসছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তার ব্যাপক প্রচার লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
আওয়ামী লীগের অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী মঞ্জুর শাফি চৌধুরী এলিম গেল ১৮ সেপ্টেম্বর সংবাদকর্মীদের সাথে মত বিনিময়ের মাধ্যমে নিজের প্রার্থীতা ঘোষণা করেন। এ সময় তিনি বলেন, আমি কাজের মানুষ, কাজ করতে চাই। দেশে-বিদেশের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে জয় করতে চাই মানুষের ভালোবাসা এবং বিশ্বাস। বিগত দিনে আমার কর্মের ধরণ এবং কল্যাণধারার রাজনীতিই আমার দায়বোধকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। কাজ এখনও অনেক বাকি। জাতির পিতার কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের ডাকে সাড়া দিতে হবে সবাইকে। এই যাত্রায় প্রয়োজন স্মার্ট জনপ্রতিনিধি। তিনি সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটিরও সদস্য।
এলিম চৌধুরী বলেন, দলীয় সভানেত্রী আমাকে সুযোগ দিলে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৬ আসন (গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার) থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে চাই। তিনি বলেন, যোগ্য নেতৃত্ব ছাড়া কোনো ক্ষেত্রেই সফল হওয়া সম্ভব নয়। যোগ্য অভিভাবক থাকলে একটি পরিবার যেমন সফলতার দিকে এগিয়ে যায়। দেশ ও সমাজও তেমনইভাবে যোগ্য নেতৃত্বের কারণেই এগিয়ে যায়। নেতৃত্বের গুণ না থাকলে শুধু প্রভাব বা পারিবারিক পরিচয়ে কেউ কোনো দায়িত্বে এলে সফল হতে পারবে না। তার কাছ থেকে দেশ ও সমাজ কিছু আশা করতে পারে না। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে যোগ্য নেতৃত্বের কোনো বিকল্প নেই।
অন্যদিকে ২০০৮ সালের নির্বাচনে জোটের শরিক জামায়াতকে আসনটি ছেড়ে দিলেও এবার ছাড় দিতে রাজি নয় বিএনপি। এজন্য অনেকটা প্রস্তুতি নিচ্ছেন দলটির মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা। বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবুল কাহের চৌধুরী শামীম, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী ও সিলেট জেলা বিএনপির সদস্য ফয়সল আহমদ।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে এ আসনে মনোনয়ন পেয়েছিলেন জেলা ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক ফয়সল আহমেদ। নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পেয়েছিলেন এক লাখ আট হাজার ৮৯ ভোট। বিপরীতে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী নুরুল ইসলাম নাহিদ এক লাখ ৯৬ হাজার ১৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন।
বিএনপি থেকে এবার মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। তিনি নিয়মিত এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন। স্থানীয় পর্যায়ে নেতা কর্মীদের সঙ্গে রয়েছে তাঁর সুসম্পর্ক।
>> সিলেট-৫ আসন নিয়ে প্রতিবেদন পড়ুন ৬ অক্টোবর শুক্রবার