লিডিং ইউনিভার্সিটির সীমাহীন অনিয়ম নিয়ে উত্তপ্ত সিলেট

স্টাফ রিপোর্ট :
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ অক্টোবর ২০২৩, ৩:৩৯ অপরাহ্ণ
লিডিং ইউনির্ভার্সিটি নিয়ে এখন উত্তপ্ত সিলেট। ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষক স্থপতি জেরিনা হোসেন এবং রাজন দাশকে নিয়ম বহির্ভুত চাকুরীচ্যুতির ঘটনায় শিক্ষার্থীসহ সুশীল সমাজের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ এবং চাকুরীচ্যুতদের পুনর্বহাল দাবিতে আন্দোলন করে যাচ্ছেন। একই সাথে সোমবার সিলেটের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষদের অংশগ্রহণে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ থেকে ৭২ ঘন্টার মধ্যে পুনর্বহাল এর দাবি জানিয়ে অন্যথায় কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন নেতৃবৃন্দ।
এদিকে ঘটনার প্রতিবাদ ও চাকুরীচ্যুত শিক্ষকদের স্বপদে বহালের দাবি জানিয়ে সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদমিনারে ছাত্র ও যুব ইউনিয়ন সিলেট জেলা সংসদের আহবানে আরও একটি মানববন্ধন ও সমাবেশ আহবান করা হয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার লিডিং ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ প্রদর্শণ করেন। এ সময় আন্দোলনকারী দুজন শিক্ষার্থীকে অবরুদ্ধ করে রাখার খবর ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজনা আরও ছড়িয়ে পরে।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বলেন, লিডিং ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষক স্থপতি রাজন দাশ এবং জেরিনা হোসেনকে ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০’ এর স্পষ্ট লঙ্ঘন করে বহিষ্কার করার প্রতিবাদে এবং অবিলম্বে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে শিক্ষকদের পুনর্বহালের দাবিতে আজকের এই বিক্ষোভ সমাবেশ।
শিক্ষার্থীদের দাবি, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ এর লঙ্ঘন করে দুর্নীতিবাজচক্র সম্পুর্ণ অগণতান্ত্রিক ও অন্যায়ভাবে দেশখ্যাত স্থপতি জেরিনা হোসেন এবং রাজন দাশকে বহিস্কার করার মধ্য দিয়ে লিডিং ইউনিভার্সিটিকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা করছে। এই বহিস্কারাদেশের সাথে জড়িত প্রশ্নবিদ্ধ কোষাধ্যক্ষ বনমালী ভৌমিক ও ট্রাস্টি বোর্ডের প্রশ্নবিদ্ধ সদস্যদের চিহ্নিত করে অবিলম্বে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য্য কাজী আজিজুল মাওলা চলতি মাসের ৪ অক্টোবর একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারে যোগ দিতে ১৫ দিনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনে যান। এ সময় তিনি কাউকে দায়িত্ব না দিয়ে গেলেও ট্রেজারার বনমালী ভৌমিক ভারপ্রাপ্ত উপচার্যের দায়িত্ব নিয়ে এখতিয়ার বহির্ভূত কর্মকাণ্ড শুরু করেন। এরমধ্যে স্থাপত্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রাজন দাসকে ১১ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে পরদিনই বরখাস্ত করেন। যদিও যুক্তরাষ্ট থেকে ইমেইলের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য ড. কাজী আজিজুল মাওলা বরখাস্তের চিঠিটি খারিজ করে দেন। একই ভাবে গত ১৩ অক্টোবর তারাহুড়ো করে একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেট মিটিং করেন। এছাড়া একই সময়ে বিভিন্ন বিভাগীয় প্রধানদের পরিবর্তন ও প্রক্টরিয়াল বডিতে পরিবর্তনসহ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ পরিপন্থী কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। যা তার দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে না।
প্রাপ্ত তথ্যে আরও জানা যায়, লিডিং ইউনিভার্সিটিতে ট্রেজারার হিসেবে যোগ দিয়ে অনিয়ম দুর্নীতির উৎসবে মেতে উঠেন বনমালী ভৌমিক। যেখানে ট্রেজারার হিসেবে তার নিয়োগ প্রক্রিয়াটিই প্রশ্নবিদ্ধ সেখানে উপাচার্যের অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য দাবি করে অবৈধ কাজ করে যাচ্ছেন কোনো নিয়ম নীতি তোয়াক্কা না করেই। এদিকে রাগীব আলীর মেয়ে রুজিনা কাদির বিশ্ববিদ্যালয়কে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাওয়ার জন্য সাদিকা জান্নাত ও পালক পুত্র সাকিব ও ট্রেজারার বনমালীকে দায়ী করছেন।
বনমালী ভৌমিক সাবেক উপ সচিব। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ অনুযায়ী ট্রেজারার হতে গেলে ১৫ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা মেন্ডাটরি হলেও তার নিয়োগে এ বিষয়টিকে পাশ কাটানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়ে নানা অপকর্ম করেই চলেছেন বনমালী। ওয়ার্ক অর্ডার ছাড়া নিজের ভাই এর কোম্পানী স্কিলটেক ইনিশিয়েটিভ এন্ড ভেঞ্চারকে সফটওয়ার কেনার জন্য ২০১৮ ও ২০১৯ সালে ১২ লক্ষ টাকা দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য্য কাজী আজিজুল মাওলা সরাসরি পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন লঙ্ঘন বলে এ বিষয় তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
গত ফেব্রুয়ারি মাসেও বর্তমান উপাচার্যের যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালি ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে ট্রেজারার বনমালী ভৌমিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সিন্ডিকেট মিটিং পরিচালনাসহ বিভিন্ন বিতর্কিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন যা তার প্রাপ্ত দায়িত্বের এখতিয়ার বহির্ভুত ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় আইনের পরিপন্থী। বৈধ উপাচার্যের অনুপস্থিতিতে সিন্ডিকেট মিটিং পরিচালনা এবং এখতিয়ার বহির্ভুত বিভিন্ন সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছেন। উপাচার্যের অনুমোদন ব্যতীত বিভিন্ন বিতর্কিত ব্যক্তিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ প্রদান এবং কারো কারো নিয়োগ চুক্তির মেয়াদ দুই বৎসর পর্যন্ত বর্ধিত করেছে। নিজকৃত বিভিন্ন আর্থিক অনিয়মের বৈধতা প্রদানসহ এক্তিয়ার বহির্ভূতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সম্পর্কহীন একটি স্থানে অপ্রাসঙ্গিকভাবে একটি মাটির রাস্তা (প্রায় ০.৬ কি.মি.) নির্মাণের কাজ করান প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকা খরচ করে, যা বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ এর স্পষ্ট লঙ্ঘন।
সম্প্রতি মঞ্জুরি কমিশনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য ও ট্রেজারার পরস্পরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দেন। অভিযোগের বিষয়ে সরেজমিন তদন্ত করতে ড. কাজী আবু তাহেরের নেতৃত্বে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি ইউজিসির তদন্ত কমিটি গত ২৭ জুলাই ক্যাম্পাস পরিদর্শন করেন। এসময় তারা বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান রাগীব আলী, ট্রেজারার বনমালী ভৌমিক ও উপচার্য ড. কাজী আজিজুল মাওলার সাথে পৃথক পৃথক বৈঠক করেন।
এর আগে ২০২১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি লিডিং ইউনিভার্সিটির ৬৮টি লেনদেনে অনিয়মের বিষয়ে জানতে রেজিস্ট্রার বরাবরে চিঠিও দেয় কমিশন। যদিও এর কোন উত্তর দেয়নি কর্তৃপক্ষ। পরে তদন্ত কমিটি এ বিষয়ে তদন্ত করে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের উপসচিব ড. মো. ফরহাদ হোসেন স্বাক্ষরিত গত ১ ফেব্রুয়ারির এক চিঠিতে জানানো হয় ২০০৬ সালের ১১ সেপ্টেম্বর লিডিং ইউনিভার্সিটির সাময়িক অনুমতির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ অনুযায়ী দ্রুততম সময়ের মধ্যে স্থায়ী সনদ অথবা সাময়িক অনুমতির মেয়াদ বাড়ানো না হলে ধারা ১২ ও ৪৯ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে চিঠিতে। এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজারো শিক্ষার্থীর জীবন পড়েছে অনিশ্চয়তার মধ্যে।
২০১৮ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সিলেট সদর রেজিস্ট্রি অফিসে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের রেজিষ্ট্রি করা হয়। তাতে দেখা যায় ভারতীয় নাগরিকের পাশাপাশি সাজাপ্রাপ্ত আসামি ও বেতনভুক্ত কর্মচারীদের নিয়ে লিডিং ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করা হয়েছে। ট্রাস্টিবোর্ড সদস্য সাদিকা জান্নাত চৌধুরী (পাসপোর্ট নং K 3920850) ভারতের আসাম প্রদেশের কাছার জেলার সোনাইমুখ তোলাগ্রামের শাহনেওয়াজ চৌধুরী ও রত্না চৌধুরীর মেয়ে । এছাড়া লিডিং ইউনিভার্সিটির চেয়ারম্যান রাগীব আলী থেকে শুরু করে অন্তত ছয়জনের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য হওয়ার বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ। এদের মধ্যে রাগীব আলী ও তার ছেলে আব্দুল হাই জালিয়াতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি। এ ছাড়া ১০ম ও ১১তম সদস্য হিসেবে যথাক্রমে রয়েছেন দেওয়ান সাকিব আহমেদ ও মো. জাকির হোসেন। এদের মধ্যে সাকিব আহমেদ ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান রাগীব আলীর ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) হিসেবে বেতনভুক্ত। একইভাবে জাকির হোসেন লিডিং ইউনিভার্সিটির উপ-সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত। দেশের ট্রাস্ট আইন ১৮৮২ অনুযায়ী, ট্রাস্টি সদস্য ট্রাস্টের অধীন কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন না। অথচ সাকিব ও জাকির দুজনই লিডিং ইউনিভার্সিটিতে বেতনভুক্ত হিসেবে কর্মরত।
এদিকে ইউজিসি বরাবরে লিডিং ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ড. আজিজুল মাওলা বনমালীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির যে অভিযোগ করেছেন তা হলো,বিশ্ববিদ্যালয়ে চেয়ারম্যানের নির্দেশে নিয়োগ কমিটির মিটিং ছাড়াই রেজিস্ট্রার পদে, অর্থ-পরিচালকের পদে, বিভিন্ন বিভাগের প্রফেসর পদে এবং তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর পদে নিয়োগ। পূর্বতন বোর্ড সদস্যসচিবকে অপসারণ করে, ডেপুটি রেজিস্ট্রার লুৎফর রহমানকে কোন সিন্ডিকেট বা বোর্ড অব ট্রাষ্টিজের সিদ্ধান্ত ছাড়াই বোর্ড অব ট্রাষ্টিজের সচিব হিসেরে পদায়ন করা হয়। উপাচার্যের অনুমোদন ব্যতীত ট্রেজারার বনমালী ভৌমিকের প্ররোচনায় ও চেয়ারম্যানের নির্দেশে দায়িত্বরত প্রক্টরকে বাদ দিয়ে নতুন প্রক্টর মাহবুবুর রহমানের নিয়োগ। উপাচার্য কর্তৃক তা বাতিল করা হলেও মাহবুবুর রহমান জোরপূর্বক প্রক্টর অফিস ব্যবহার করছেন।
উপাচার্যের অনুমোদন ব্যতীত আইন বিভাগের কতিপয় বিতর্কিত এবং পূর্বে পরীক্ষাসংক্রান্ত গুরুতর অনিয়মের অপরাধে শাস্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত আইনী বিষয়াদি, শৃংখলা-স্বচ্ছতা-নৈতিকতা ইত্যাদি বিষয় নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি কমিটি গঠন করলে উপাচার্য তার প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এই কমিটি বাতিল করে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দেন। কিন্তু ট্রেজারার বনমালী ভৌমিক আইন বিভাগের উপরোক্ত বিতর্কিত শিক্ষকগণের সহায়তায় ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে উপাচার্যের গৃহিত কমিটি বাতিলের চিঠির বিপরীতে আরেকটি চিঠি ইস্যু করেন যা ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানের এখতিয়ার বহির্ভুত ।
উপাচার্য গত ৩০ মে ২০২৩ তারিখে ব্যবসায় প্রশাসনের ডিন হিসেবে ডঃ রাশেদুল আজিমকে নিয়োগ দেন। প্রাক্তন ডিন ডঃ বশির আহমেদ ভূঁইয়া (যার নিয়োগই অবৈধ) এতে সংক্ষুব্ধ হয়ে সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন এবং ট্রেজারারের মদদে নতুন ডিনকেও তার পদ ছাড়তে নানাভাবে হুমকি দেন। হুমকি সত্ত্বেও ৩১শে মে ২০২৩ তারিখে নতুন ডিন তার দায়িত্ব বুঝে নিতে গেলে প্রাক্তন ডিন ডঃ বশির আহমেদ ভূঁইয়া এবং ব্যবসায় প্রশাসনের সহযোগী অধ্যাপক ডঃ শাহেন শাহ মোল্লা তাকে সরাসরি অপদস্থ করেন। উল্টো দূর্ব্যবহারের অভিযোগ তুলে পরে তারা সম্মিলিতভাবে নতুন ডিনের অপসারনের দাবী তুলেন এবং চেয়ারম্যান অবৈধ চিঠির মাধ্যমে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত ডিন ডঃ রাশেদুল আজিমকে চাকরিচ্যুত করেন।
লিডিং ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ড বৈধ নয়। ২০১৬তে রেজিস্ট্রিকৃত একটি দলিল রয়েছে, ২০১৮ তে আরেকটি এবং অতি সম্প্রতি গত ২৬ জুন ২০২৩ এ তৃতীয় ট্রাস্ট দলিল করা হয় অতি গোপনে উপাচার্যকে না জানিয়ে, যদিও উপাচার্য পদাধিকারবলে ট্রাস্টি বোর্ডের এক্স-অফিসিয়ো মেম্বার।
বিগত ফেব্রুয়ারি মাসে উপাচার্যের যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালীন তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য বনমালী ভৌমিক এক্তিয়ার বহির্ভূতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সম্পর্কহীন একটি স্থানে অপ্রাসঙ্গিকভাবে একটি মাটির রাস্তা (প্রায় ০.৬ কি.মি.) নির্মাণের কাজ করান প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকা খরচ করে, যা বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ এর স্পষ্ট লঙ্ঘন।
রাগীবনগরের স্থায়ী ক্যাম্পাসে আসার পূর্বে সিলেট শহরে ‘সুরমা টাওয়ার’ নামক ১২ তলা ভবনের ৬ ও ৭ তলা মিলে প্রায় ১৬০০০ বর্গফুট ফ্লোর স্পেস ‘নর্থ-সুরমা সিন্ডিকেট’ নামক কোম্পানীর কাছ থেকে ৬ কোটি ১০ লক্ষ টাকায় ক্রয় করা হয়, যার কোনো বৈধ দলিলাদি নেই।
২০১৩-১৪ সালে প্রায় ০৪ (চার) কোটি টাকার একাধিক চেকের মাধ্যমে জমিক্রয় বাবদ খাত উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল থেকে টাকা প্রদান বা উত্তোলন করা হয়। কিন্তু বাস্তবে ঐ সময়ে ঐ সকল চেকের বিপরীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে কোন জমি ক্রয় করা হয়নি। যা তৎকালীন চেক ইস্যুর রেজিস্ট্রার খাতা, ব্যাংক স্টেটমেন্ট ও পেমেন্ট নোটসিট গুলো যাচাই করলে বিস্তারিত জানা যাবে। যা হিসাব শাখায় রক্ষিত আছে। তখন মিঃ কবির আহমদ পরিচালকের (অর্থ ও হিসাবের) দায়িত্বে ছিলেন।
২০১৪ থেকে ২০২২ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল থেকে প্রায় ২৬ একর জমি চেয়ারম্যান মহোদয়ের ছেলে ও বিভিন্ন ট্রাষ্টি ও অন্য ব্যক্তিদের নামে ক্রয় করা হয়। কিন্তু তন্মধ্যে মাত্র কয়েক একর জমির বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুকূলে দলিল রয়েছে। বাকিগুলো অন্যান্যদের নামেই বর্তমানে দলিল বিদ্যমান, যা ভূমি সংক্রান্ত ফাইল, চেক ইস্যু রেজিস্ট্রার, ব্যাংক স্টেইটমেন্ট ও পেমেন্ট নোটসিট পর্যবেক্ষণ করলে পাওয়া যাবে। ভূমি সংক্রান্ত বিষয়ের দায়িত্বে রয়েছেন ডেপুটি-রেজিস্ট্রার লুৎফর রহমান।
০৭/০৯/২০১৫ তারিখে চেক নং ৫২৭৮৯৩৬ এর মাধ্যমে ০১ (এক) কোটি টাকা “বাংলা টিভির” শেয়ার ব্যক্তি-নামে ক্রয় করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল থেকে উক্ত টাকা প্রদান করা হয়, যা বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যয় নয়।
২০১৩ সালে চেয়ারম্যান মহোদয়ের রাগীবনগরস্ত গ্রামের বাড়িটি রিনোভেট করা বাবদ বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল থেকে প্রায় ৪০ (চল্লিশ) লক্ষ টাকা প্রদান করা হয়। যা তৎকালীন চেক ইস্যু রেজিস্ট্রার, ব্যাংক স্টেটমেন্ট ও পেমেন্ট নোটে বিদ্যমান। তখন মিঃ কবির আহমদ অর্থ পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন।
‘রাগীব রাবেয়া স্পোর্টস একাডেমি’ বাবদ ২০১৩ সাল থেকে প্রতিমাসে কর্মচারীদের বেতনবাবদ লক্ষ লক্ষ টাকা বিশ্বাবিদ্যালয়ের তহবিল থেকে প্রদান করা হচ্ছে, যে প্রতিষ্ঠান লিডিং ইউনিভার্সিটির সঙ্গে কোনোভাবেই সংযুক্ত নয়।
ট্রাষ্টি বোর্ডের সদস্য (অবৈধ) হিসেবে দেওয়ান সাকিব আহমদ ও জাকির আহমদ বিশ্বিবদ্যালয়ের এমপ্লয়ি হিসেবে প্রতিমাসে বেতন বাবদ অর্থ গ্রহণ করতেন। যা নিয়ম অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলে ফেরত আনা উচিত।
ডেপুটি রেজিস্ট্রার লুৎফর রহমানকে কোন সিন্ডিকেট বা বোর্ড অব ট্রাষ্টিজের সিদ্ধান্ত ছাড়াই বোর্ড অব ট্রাষ্টিজের সচিব হিসেরে পদায়িত করা হয়। অথচ তিনি যখন ২০১৭ সালে ভারপ্রাপ্ত সচিবের দায়িত্বে ছিলেন তখন উনার নিজ নামে বিবিধ খাত উল্লেখ করে বিশ্বিবদ্যালয়ের তহবিল থেকে প্রায় ৫৮,৫০,০০০/- (আঠান্ন লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা উত্তোলন করেন। সেই খরচের কোন যৌক্তিক বা বৈধ বিল বা প্রামানিক কাগজপত্র নাই। সকল পেমেন্ট নোটসিটগুলো যথাযথ অনুমোদন বা প্রক্রিয়ার বিষয়টি যাচাই করা উচিত।
ট্রাষ্টি বোর্ডের সদস্য (অবৈধ) দেওয়ান সাকিব আহমদের নামে বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা প্রদান করা হয়।
বিগত ২৪ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে বিশ্ববিদ্যালয়ের সফট ওয়্যার ইন্সটলেশনের জন্য একটি ইন্ডিয়ান কোম্পানিকে ১২,০০,০০০/- (বারো লক্ষ) টাকার কাজ প্রদান করা হয় এবং উক্ত কাজের জন্য অগ্রীম তিনটি কিস্তিতে প্রায় ৮,৫০,০০০/- (আট লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা এ কোম্পানিকে প্রদান করা হয়। কিন্তু ১২ লক্ষ টাকার একটি কাজের ক্ষেত্রে একটি বিদেশী প্রতিষ্টানকে নিয়োগ করার ক্ষেত্রে কোন ধরনের নিয়ম মানা হয়নি বা কোন টেন্ডার ডাকা হয়নি। এমনকি ওই কোম্পানী কোনো কাজও জমা না দিয়েই সমুদয় টাকা (১২ লক্ষ এর মধ্যে ৮ লক্ষ ৫০ হাজার) নিয়ে যায়। ট্রেজারার বনমালী ভৌমিক মহোদয়ের পরিচিত এই কোম্পানীকে তারই মদদে ও তারই স্বাক্ষরিত চেকের মাধ্যমে টাকাটা প্রদান করা হয়।
২০১৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় সমাবর্তনের সময় “বরেন্দ্র” নামীয় একটি ইভেন্ট মেনেজমেন্ট কোম্পানিকে এই অনুষ্ঠানের ইভেন্ট ম্যানেজসেন্টের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। এই কাজের জন্য মোট প্রায় ৮০ (আশি) লক্ষ টাকা তাদেরকে প্রদান করা হয়। কিন্ত এতোবড় অংকের টাকার একটি কাজে কোন ধরণের টেন্ডার নোটিশ করা হয়নি। বিষয়টি খুবই আশ্চর্যজনক। কোম্পানিটি ট্রেজারার বনমালী ভৌমিকের পূর্বপরিচিত ও তারই মদদে কাজ পায়। তারই স্বাক্ষরিত চেকের মাধ্যমে টাকাও প্রদান করা হয়।
২০১০ সালে অবৈধভাবে রাগীব-রাবেয়া ফাউন্ডেশনের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল থেকে ১৬ লক্ষ টাকায় ক্রয় করা হয় টয়োটা ফিল্ডার গাড়ি যা এখন ট্রাস্টিরা ব্যবহার করেন।
২০১৮ সালে টয়োটা এ্যাক্সিয়ো গাড়ি বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল থেকে ক্রয় করা হয় যা এখন ট্রাস্টিরা ব্যবহার করেন। এরকম অসংখ্য অভিযোগ দিয়েছেন ভিসি ড. মওলা।
এসব অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে ট্রেজারার বনমালীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি। বোর্ড অব ট্রাস্টিজ এর চেয়ারম্যান রাগীব আলী সাংবাদিকের সাথে কথা বলতে রাাজ হননি।