ওসমানী হাসপাতালে রওশন-জব্বার গ্যাংদের হাতে জিম্মি লোকজন

স্টাফ রিপোর্ট :
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ অক্টোবর ২০২৩, ১২:৫১ পূর্বাহ্ণ
সিলেট ওসমানী হাসপাতালে এক মুর্তিমান আতঙ্কের নাম ওয়ার্ড মাস্টার রওশন হাবীব। যার অনিয়ম, দুর্নীতি আর ঘুষ বাণিজ্যের সাতকাহন হাসপাতালের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নজরে রয়েছে। তবুও থেমে নেই রওশন হাবীবের নিয়মবহির্ভুত ত্রাস বাণিজ্য। বড় কর্তাদের ম্যানেজ করেই যথারীতি চলে রওশন হাবীবের সীমাহিন অনিয়ম। অবশ্য এ ব্যাপারে অন্য কারো কথা বলার সাহস নেই। হাসপাতালের কর্মচারীরাও মুখ খুলতে পারে না রওশন হাবীবের বিরুদ্ধে। উপরন্তু হাসপাতালের ৪র্থ শ্রেনীর কর্মচারীদের সভাপতি (সিকিউরিটি) আব্দুল জব্বারকে নিয়ে এই চক্রের সীমাহিন অনিয়ম দূর্ণীতি এখন সকলের মুখে মুখে।
হাসপাতালে ঘুষ বানিজ্য,ঔষধ চুরি, দালাল সিন্ডিকেট, বিভিন্ন শ্রেনীর কর্মচারীদের কাছ থেকে দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক বখরা আদায় এই চক্রের নিত্য নৈমিত্তিক কাজ। রয়েছে সরকারি কোয়ার্টার ভাড়া দিয়ে প্রতি মাসে কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ। কথায়-কথায় কর্মী ছাঁটাই, ভালো পজিশনে ডিউটি বন্টন, সনদ বাণিজ্য সবই হচ্ছে এই দুই জনের হাত ধরে।
সম্প্রতি ঘুষ না দেওয়ায় রওশন হাবীব ও জব্ববার চক্রের হাতে চাকুরিচ্যুত হয়েছেন আউসোর্সিংয়ে কর্মরত ইসলাম উদ্দিন নামের জনৈক ব্যক্তি। যার আইডি নং ২৪০। দীর্ঘ ৭ বছর থেকে হাসপাতালে বিভিন্ন সিকিউরিটি কোম্পানীর অধীনে চাকরি করে আসলেও মোটা অংকের ঘুষ না দেওয়ায় রওশন ও জব্বার তাদের চাকুরীচ্যুত করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ইসলাম উদ্দিন অভিযোগ করেন,তিনি প্রতিমাসে নির্দিষ্ট অংকের টাকা জব্বারকে ঘুষ দিয়ে আসছিলেন। হঠাৎ করে বড় অংকের টাকা দাবী করলে ইসলাম টাকা দিতে অপরগতা স্বীকার করায় তাকে একটি রুমে আটক করে সাদা কাগজে সাক্ষর নিয়ে চাকরিচ্যুত করেন। ইসলাম উদ্দিন এ বিষয়ে পরিচালক বরাবরে অভিযোগ করলে তা গায়েব করে দেন রওশন হাবিব ও আব্দুল জব্বার। ফলে ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হন ইসলাম উদ্দিন। এর আগে রওশন হাবিবের বিরুদ্ধে নারী কর্মচারীকে যৌন হয়রানীর জন্য থানায় জিডি পর্যন্ত হয়ে হয়েছিলো আর সভাপতি আব্দুল জব্বারকে হাসপাতালের মালামাল চুরির জন্য বিগত ২১/১/২০২১ ইং তারিখে হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডাক্তার হিমাংশু লাল রায় কর্তৃক সাময়িক চাকরীচ্যুত হয়েছিলেন। সে সময় জব্বার হাসপাতালের ৬টি বারান্ধার গ্রিল, ছোট বড় ১৯ প্যাকেট টাইলস প্যাকেট, পিপিআই আড়াই বস্তা,সহ আরো দুই কার্টুন পিপিই, কাচের জানালা একটি, এক কার্টুন মাস্ক ও সংগঠনের ব্যবহারের জন্য ক্রয়কৃত আসবাব পত্র চুরি করে নিয়ে যায়। চুরির ঘটনাটি ২০/১/২১ ইং ধরা পড়লে ২১/১/২০২১ ইং জব্বারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে পাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। যার স্মারক নং ওমকেহাসি/ই-২/২০২১ (৩৮৭/১(৪)। যাহা পরবর্তীতে ফেরত দেওয়ার শর্তে আব্দুল জব্বার আর জীবনে চুরি করবেনা মর্মে অঙ্গিকার করলে তিরস্কার করে সতর্ক করে তাকে চুরির দায় গতে ৩১/১/২১ ইং তারিখে অব্যাহতি দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এবং চোরোইকৃত মালামাল হাসপাতালের ষ্টোরে জমা দিতে নির্দেশ প্রদান করা হয়।
হাসপাতাল সুত্র জানায়, আব্দুল জব্বার হাসপাতালের নিরাপত্তা প্রহরী এবং ৪র্থ শ্রেনীর কর্মচারী সমিতির সভাপতি বনে যায় রাতারাতি। ফলে ওয়ার্ড মাষ্টার রওশন হাবিবের সাথে যোগসাজসে হাসপাতালে সকল ধরণের অপকর্ম করে গেলেও কর্তৃপক্ষ এখন নিরব রয়েছে।
সরেজমিন সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ঘুরে জানা গেলো, রওশন হাবিব ও আব্দুল জব্বারের অপকর্মের বিস্তর অভিযোগ। হাসপাতালের কর্মচারীদের উিউটি রোষ্টার তৈরী, দায়িত্ব বন্টন, সবই করে থাকেন ওয়ার্ড মাষ্টার রওশন হাবিব ও আব্দুল জব্বার। ফলে কর্মচারীদের কাছ থেকে নিয়মিত বখরা আদায়ের বিনিময়ে আব্দুল জব্বার কর্মচারীদের ভালো জায়গায় পোষ্টিং করে থাকেন। বিনিময়ে দৈনিক মাসিক নির্দিষ্ট পরিমান টাকা দিতে হয় জব্বারকে। সম্প্রতি জব্বারের এসব কাজের প্রতিবাদ করায় ইসলাম নামের আউটসোর্সিংয়ের এক কর্মচারীকে বিনা অপরাধে চাকরিচ্যুত করে তার ডিউটি বন্ধ করে দেন আব্দুল জব্বার। ইসলামের অপরাধ তিনি আব্দুল জব্বারের কথা মতো প্রতি মাসের তাকে নির্দিষ্ট পরিমান বখরা দিতে অপারগতা স্বীকার করা। সেই বখরা না পেয়ে তিনি ঐ কর্মচারীকে সাজিয়েছেন দালাল। অথচ এর আগে হাপসপাতালের মালামাল চুরির করতে গিয়ে ধরা পড়েন এই জব্বার। পরে জীবনে এমন কাজ করবেন না বলে লিখিত ভাবে ক্ষমা চেয়ে চাকরি ফিরে পান তিনি।
আব্দুল জব্বার হাসপাতালের দালালী ছাড়াও যখমী সনদ, মেডিকেল সার্টিফিকেট বানিজ্য, অপরেশনের সিরিয়াল পাইয়ে দেওয়া ও ঔষধ চুর সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত রয়েছেন তিনি। তার রক্ষাকর্তা ওয়ার্ড মাষ্টার রওশন হাবিব। দুজন মিলে হাসপাতালের নিয়মিত বখরা আদায়, হাসপাতালের সরকারি কোয়ার্টার ভাড়া দিয়ে প্রতি মাসে প্রায় ২ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এর মধ্যে পুরাতন মেডিকেল ক্ষেত্রিপাড়া সরকারি কোয়াটার থেকে আব্দুল জব্বারের মাসিক আয় লক্ষাধিক টাকা। সরকারি কোয়ার্টার ভাড়া দিয়ে অফিস সহায়ক কামরুল ইসলামের কাছ থেকে ঘর ভাড়া প্রতি মাসে ৩ হাজার টাকা নেন জব্বার। ফারুক ভুইয়া নামের আরেক জনের কাছে সরকারি কোয়ার্টারের ২টি রুম ভাড়া দিয়ে জব্বার মাসিক ৪ হাজার টাকা নেন। এমএলএস আবুল কালাম সরকারি দুটি ঘর ব্যবহার করেন বিনিময়ে জব্বারকে মাসিক ৫ হাজার টাকা দিয়ে থাকেন।
পরিচ্ছন্নকর্মী শহিদ সরকারি একটি ঘর ব্যবহার করেন। বিনিময়ে জব্বারকে মাসিক ৩ হাজার টাকা দিয়ে থাকেন। বহিরাগত জনৈক ব্যক্তি সরকারি একটি কোয়াটারে ভাড়া থাকেন। বিনিময়ে জব্বারকে ৫ হাজার টাকা দিয়ে থাকেন তিনি। জমাদার নুরুল ইসলাম তার ঘর থাকার পরও ছেলে ও ছেলের বউ সরকারি কোয়াটারে থাকেন। বিনিময়ে জব্বারকে ৫ হাজার টাকা দিয়ে থাকেন তিনি। কাচাঁঘর ১২ টি রয়েছে, প্রতি ঘর থেকে মাসে ১২ টাকা করে নেন জমাদার নজরুল, জমাদার আলমগীর, তাহের ও সভাপতি আব্দুল জব্বার।
এদিকে সংক্রামনব্যধি হাসপাতালের কোয়াটার থেকে আব্দুল জব্বার আয় করেন মাসে লাখ টাকা। বাবুর্চি আজাদ (রিটায়ার্ড) প্রতিমাসে ঘর ভাড়া দেন ৩ হাজার টাকা। অফিস সহায়ক মিজান একটি রুমের ভাড়া দেন ৮ হাজার টাকা। বহিরাগত জনৈক আরেক ব্যক্তি কোয়ার্টারে থাকেন, তিনি মাসে ভাড়া দেন ৫ হাজার টাকা। বাবুর্চি খায়রুল তিনটি রুম নিয়ে থাকেন জব্বারকে ভাড়া দেন ১৫ হাজার টাকা। এ থেকে রওশন হাবিব ১০ হাজার টাকা নেন। বাকি ৫ হাজার নেন আব্দুল জব্বার। রাকিব আলীর তিনিটি পরিবার কোয়ার্টারে বসবাস করেন। তারা প্রতিমাসে জব্বারকে ভাড়া দেন ১০ হাজার টাকা। পরিচন্নতাকর্মী তুরুন মিয়া হাসপাতালে ডিউটি না করে শুধু ফিঙ্গার দিয়ে চলে যান। বিনিময়ে জব্বারকে দিতে হয় ৬ হাজার টাকা।
অভিযোগের বিষয়ে ওয়ার্ড মাস্টার রওশন হাবীবের ব্যক্তিগত সেলফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ না করায় মন্তব্য আদায় করা সম্ভব হয় নি।