সিলেটে প্রথম রেফ্রিজারেটর ও বান্ধব মিষ্টান্ন ভাণ্ডার

অম্বরিশ দত্ত >
প্রকাশিত হয়েছে : ০২ নভেম্বর ২০২৩, ৫:৪৮ পূর্বাহ্ণ
না জানালেই নয়। বাংলাদেশে অন্য কোথাও ছিল কি না জানিনা, মনে হয়না ছিল, নগর সিলেটে আজ থেকে বিরাশি বছর আগে, গত শতাব্দীর চল্লিশের দশকের শুরুর বছরেই বান্ধব মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে রেফ্রিজারেটর ছিল। রেফ্রিজেটরের সন্দেশ ও সরবৎ পাওয়া যেতো।
বান্ধব মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, বন্দর বাজার, সিলেট ছিল একটি পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। মালিক ছিলেন আপন তিন ভাই। আমাদের নাট্যগুরু প্রয়াত হেমচন্দ্র ভট্টাচার্য(বাবুলদা)র বাবা, কাকা তিনভাই। দুইজনের নাম মনে আছে, শ্রী হিমাংশু ভট্টাচার্য ও শ্রী হিরন্ময় ভট্টাচার্য। বাবুলদার বাবার নামটা কিছুতেই স্মরণ করতে পারছি না। সবাই নাট্যামোদী ছিলেন। ইনাদের মধ্যে আমরা সবচে বেশি কাছে থেকে দেখেছি শ্রী হিরন্ময় ভট্টাচার্য মহোদয়কে। ত্রিবেনী নাট্য সংসদের মহড়াতে দেখেছি উনাকে তাঁদের বাসার বাইরের মাঝখানের ঘরে। তিনি অকৃতদার ছিলেন। সিলেট সম্মিলিত নাট্যপরিষদের পক্ষ থেকে ১৯৮৬ বা ১৯৮৭ খ্রীস্টাব্দে তাঁকে প্রবীন নাট্যকর্মী সম্মাননা দেয়া হয়েছিল।
বান্ধবের বিশালাকৃতির পিওর ছানার রসগোল্লা যারা খেয়েছেন, ‘এটম’ নামটা নিশ্চয় তারা ভুলেননি আজও। আজকে যেমন ব্র্যান্ড বলে একটা শব্দ বহুল প্রচলিত, বান্ধব নামটাও তখনকার সময়ে ব্র্যান্ড নেম ছিল। অনুষ্ঠানাদিতে বান্ধবের মিষ্টি থাকা ছিল সামাজিক মর্যাদা নির্দেশক।
বান্ধব মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের উপরের তলায় ছিল ঐ পরিবারেরই আলাদা আধুনিক ঘরানার রেস্টুরেন্ট। নানা সময়ে নাম পাল্টেছে ঐ রেস্টুরেন্টের। প্রথমে নীরালা, তারপর ইলোরা, পরে শুধু নীরা রেস্টুরেন্ট। ঐ রেস্টুরেন্টের চপ, সমোচা, কাটলেটও ব্র্যান্ড ভ্যালু বহন করতো। নীরার বিরিয়ানিরও যথেষ্ট কদর ছিল। দুপুরের সবজি, মুড়িঘন্ট যারা খেয়েছেন, তারাও ভুলবেন না। সব ছাপিয়ে নীরার আকর্ষণের প্রধান বিষয় ছিল সত্যিকারের ছিমছাম পরিচ্ছন্ন পরিবেশ আর সুরুচি সম্পন্ন সেবা।
নীরা চালাতেন প্রধানতই বাবুলদা নিজে। নীরা রেস্টুরেন্ট যে কারণে সবচে বেশি নাম কুড়িয়েছিল তা হচ্ছে সিলেটের প্রগতিশীল রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, সাহিত্য বা ক্রীড়া অঙ্গনে যুক্ত মানুষের নৈমিত্তিক সান্ধ্য আড্ডা। জাতীয় পর্যায়ে নানা ক্ষেত্রে খ্যাতিমান অনেকেই নীরার আড্ডায় সামিল হয়েছেন।
নব্বই দশকের শেষাবধিও তা বহাল ছিল। নীরার আড্ডা থেকে অনেক কিছু জেনেছি, শিখেছি, ঋদ্ধ হয়েছি। বাবুলদার অপত্য স্নেহের কথাও সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করি। শেষ জীবনে একা হয়ে যাওয়াতে এবং শারিরীক অসুস্থতার কারণে বাবুলদা প্রায় সাত শতাব্দী প্রাচীন ব্যবসাটা বন্ধ করে দিতে অনেকটা বাধ্য হন। এখনও চালু থাকলে শতবর্ষের কাছাকাছি পৌঁছে যেতো।
যদি কারো কাছে এমন কোনো তথ্য থাকে বাংলাদেশে সেই সময়ে কোনো হোটেল, রেস্টুরেন্ট বা বাসা বাড়িতে কোথাও রেফ্রিজারেটর ছিল, জানালে কৃতজ্ঞ হবো। উনিশশো একচল্লিশ খ্রীস্টাব্দে রবীন্দ্র স্মরণ উপলক্ষে প্রকাশিত একখানা স্মারকগ্রন্থে বান্ধব মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের বিজ্ঞাপনের ছবিটা পোস্ট না করলে অবিশ্বাস্য মনে হবে বিষয়টা।
লেখক : প্রবীণ নাট্যজন