তিন মাসে বাণিজ্য ঘাটতি ২০ হাজার কোটি টাকা
বাংলানিউজ এনওয়াই ডেস্ক :
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ নভেম্বর ২০২৩, ৫:২৭ অপরাহ্ণডলার সংকটের সঙ্গে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় চাপে পড়েছে দেশের অর্থনীতি। পরিস্থিতি সামাল দিতে শর্ত দিয়ে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। এতে করে বাণিজ্য ঘাটতি কিছুটা কম হচ্ছে। তবে এখন দেশে বৈদেশিক মুদ্রার আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হওয়ায় আর্থিক হিসাবের বড় ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে। এতে অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ১৮১ কোটি ৮০ লাখ (১ দশমিক ৮১ বিলিয়ন) ডলারের বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি এক ডলার ১১১ টাকা ধরে) এর পরিমাণ ২০ হাজার ১৮০ কোটি টাকা। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্যের (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট) চিত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
ব্যাল্যান্স অব পেমেন্টের তথ্য বলছে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে এক হাজার ২৯৩ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। এ সময় আমদানি হয়েছে এক হাজার ৪৭৫ কোটি ডলারের পণ্য। এতে করে অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ১৮১ কোটি ৮০ লাখ ডলারের বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি এক ডলার ১১১ টাকা ধরে) এর পরিমাণ ২০ হাজার ১৮০ কোটি টাকা। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে বৈদেশিক বাণিজ্যের আর্থিক হিসাবে ৩৯২ কোটি ৯০ লাখ ডলার ঘাটতি হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের ৮৪ কোটি ডলার উদ্বৃত্ত ছিল।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের খাত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে আর্থিক হিসাব ভালো রাখাটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই সূচকের ওপরই দেশের ঋণমান নির্ভর করে। আর্থিক হিসাবে ঘাটতি থাকলে বিদেশী বিনিয়োগকারীরাও বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হন না। ঋণ দেওয়ার সময় বিভিন্ন শর্তজুড়ে দেয়। বাংলাদেশ ব্যাংকও বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে ১৬ শতাংশের বেশি। দুই বছরে তা প্রায় ৩০ শতাংশ। এক বছর আগে ১ ডলার কিনতে খরচ হয়েছে ৯৫-১০০ টাকা, ২ বছর আগে ছিল ৮৪-৮৬ টাকা। সবশেষ বৃহস্পতিবার আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার কিনতে খরচ করতে হচ্ছে ১১১ টাকা।
কর্মকর্তারা জানান, আমদানি কমলেও আশানুরূপ রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয় আসছে না। বিশ্ববাজারে জ্বালানিসহ সব ধরনের পণ্যের মূল্য ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। এ ছাড়া বিদেশী বিনিয়োগ কমে যাওয়া ও আগের দেনা পরিশোধ বেড়ে যাওয়া এ ঘাটতির সৃষ্টি হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে পরিশোধ ঝুঁকি এড়াতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রচুর পরিমাণ ডলার বিক্রি করছে। ফলে রিজার্ভও ধারাবাহিক কমছে। কেননা, গত অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলার দেশে আনেননি রপ্তানিকারকরা। হুন্ডি ও অর্থপাচারের কারণে রেমিটেন্স আশানুরূপ আসছে না। ফলে ডলার সংকট চরম আকার সৃষ্টি হয়েছে।
সবশেষ তথ্য বলছে, জুলাই-সেপ্টেম্বরে চলতি হিসাবে উদ্বৃত্তের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৯ কোটি ২০ ডলার। আগের অর্থবছরে একই সময়ে এই হিসাব ঘাটতি ছিল ৩৬৮ কোটি ডলার। আবার সামগ্রিক লেনদেন (ওভারঅল ব্যাল্যান্স) হিসাবে প্রথম তিন মাসে সামগ্রিক লেনদেনের (ঋণাত্মক) পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৮৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এ সূচকটি আগের বছর একই সময় ঘাটতি ছিল ৩৩১ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এসময় ৫০৬ কোটি ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশীরা। আগের বছর একই সময় পাঠিয়েছিলেন ৫৮১ কোটি ডলার। সেই হিসাবে তিন মাসে রেমিটেন্স কমেছে ১৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআই) সামান্য বেড়েছে। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে বাংলাদেশ যেখানে ১৪৩ কোটি ২০ লাখ ডলারের এফডিআই পেয়েছিল। চলতি অর্থবছরে একই সময় এসেছে ১৪৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার। আলোচিত সময়ে নিট বিদেশী বিনিয়োগ সামান্য বেড়েছে ৫২ কোটি ৫০ লাখ ডলার হয়েছে। আগের অর্থবছরে এ সময় নিট বিদেশী বিনিয়োগ ছিল ৫০ কোটি ৫০ লাখ ডলার। একইসঙ্গে শেয়ারবাজারে বিদেশী বিনিয়োগ (পোর্টফলিও ইনভেস্টমেন্ট) ৪ লাখ ডলার কমে গেছে।
২০২১ সালের আগস্টে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ ছিল ৪ হাজার ৮০০ কোটি বা ৪৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি। সেই রিজার্ভ এখন ২ হাজার ৬৪২ কোটি ডলারে। আন্তর্জাতিক হিসাবপদ্ধতি ব্যালেন্স অব পেমেন্টস অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট পজিশন ম্যানুয়াল (বিপিএম ৬)’ অনুযায়ী, রিজার্ভ বর্তমানে ২ হাজার ৬৬ কোটি ডলার।
বাংলানিউজ এনওয়াই/এনসি