বিএনপির সংস্কার চাইলেন মেজর হাফিজ
বাংলানিউজ এনওয়াই ডেস্ক :
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ নভেম্বর ২০২৩, ২:১৪ অপরাহ্ণবিএনপি ছেড়ে তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দিয়ে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে যাচ্ছেন এমন গুঞ্জন সম্পর্কে মুখ খুলেছেন মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। অসুস্থার কারণে রাজনীতি থেকে নিস্ক্রিয় আছেন এমনটা জানিয়ে বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান বলেছেন, বিএনপি নির্বাচন করলে দলের সঙ্গেই নির্বাচন করব। বিএনপির সদস্য হিসেবেই রাজনীতি থেকে বিদায় নিতে চাই। বুধবার (৮ নভেম্বর) সকালে রাজধানীতে নিজ বাসায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে হাফিজ উদ্দিন এসব কথা বলেন। এসময় বিএনপির বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কড়া সমালোচনা করে বেশ কিছু পরামর্শও দেন দলটির এই শীর্ষ নেতা।
দলে সত্য কথা বলার লোক নেই- এমন দাবি করে হাফিজ উদ্দিন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বিএনপিতে সংস্কার আনার পরামর্শ দেন।
রাজনীতিতে আর আগ্রহ নেই জানিয়ে তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানের আদর্শ থেকে সরে আসায় আজ বিএনপির এই অবস্থা। অনেক ভুল সিদ্ধান্ত ছিল বিএনপির, এ কারণে ক্ষমতা থেকে দূরে দলটি। বিএনপিতে সত্যি কথা বলার লোক নেই। সাইফুর রহমান বলতে পারতেন।
২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ উচিত ছিল এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে শারীরিক অবস্থার কারণে অংশগ্রহণ সম্ভব নয়। বিএনপির এই নির্বাচনে যাওয়া উচিত। কেয়ারটেকারের ওপর জোর না দিয়ে আন্তর্জাতিক সহায়তা নিয়ে মধ্যস্থতা পেলে বিএনপির নির্বাচনে যাওয়া উচিত। বিএনপি জনপ্রিয় দল। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি ক্ষমতায় যাবে।
হাফিজ বলেন, আন্তর্জাতিক যোগাযোগে বিএনপি বরাবর দুর্বল। বিএনপি সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেনি।
মেজর (অব.) হাফিজ বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর শুনেছিলাম বিএনপির নেতাদের সাথে নাকি সমঝোতা হয়েছিল, ৮০টি আসন দেওয়ার কথা ছিল।
নিজের আক্ষেপের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০২০ সালের ১৪ ডিসেম্বর আমাকে কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়েছে, আমি নাকি সংস্কারপন্থি, কাজ করি না। এসব অসত্য অভিযোগ ছিল। আমি নোটিশের উত্তর দিয়েছিলাম, এখনো জানানো হয়নি নোটিশের বিষয়ে। ৩১ বছর রাজনীতির পর এ ধরনের ব্যবহার ডিজার্ভ করি না।
হাফিজ উদ্দিন বলেন, আমাকে টপকে অনেক নেতা স্থায়ী কমিটির সদস্য হলেও আমি ভাইস চেয়ারম্যানই রয়ে গেলাম। কোনো আক্ষেপ নেই। আমি পদ-পদবির জন্য রাজনীতি করি না। জিয়াউর রহমানের অনেক ঘনিষ্ঠ ছিলাম।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ গত সোমবার দাবি করেন, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বিএনপি ভেঙে নতুন দল করছেন। এরপর থেকে বিএনপির এই নেতা সম্পর্কে নানা গুঞ্জন বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে। এ ব্যাপারে গতকাল তিনি কয়েকটি গণমাধ্যমের সঙ্গে বিচ্ছিন্নভাবে ফোনে কথা বললেও আজ তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন।
একাত্তরে স্বাধীনতা যুদ্ধে জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন ‘জেড’ ফোর্সে ছিলেন হাফিজ উদ্দিন। যুদ্ধে সাহসিকতার জন্যে তিনি বীরবিক্রম খেতাব পান। সামরিক বাহিনী থেকে অবসরের পর তিনি রাজনীতিতে যুক্ত হন।
হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ভোলা-৩ (লালমোহন-তজুমদ্দিন) থেকে ছয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর মধ্যে দুইবার জাতীয় পার্টি, একবার স্বতন্ত্র এবং তিনবার বিএনপি থেকে নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে খালেদা জিয়া সরকার গঠন করলে তিনি পানিসম্পদ মন্ত্রী ছিলেন। দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন তিনি। সরকারের দমননীতির বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে কারাগারও যেতে হয়েছে তাকে।
দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে এক কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ায় ২০২০ সালে দলের ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও শওকত মাহমুদকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দল ভেঙে নতুন বিএনপি গড়ার প্রক্রিয়ার সঙ্গেও তিনি জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।