কানাইঘাট সীমান্ত যেন অবৈধ চিনির বাজার : সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব

কানাইঘাট (সিলেট) প্রতিনিধি :
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ নভেম্বর ২০২৩, ৭:৩৫ অপরাহ্ণ
সিলেটের কানাইঘাট উপজেলা সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারত থেকে অবৈধ পথে প্রতিদিনই আসছে বিপুল পরিমাণের চিনি। দেশের বাজারের তুলনায় দামে কম পাওয়ায় এ চিনির কারবার বেড়েই চলেছে দিনদিন। উপজেলাসহ জেলার অধিকাংশ বাজার ভারতীয় অবৈধ চিনিতে সয়লাব। অবৈধভাবে চিনি আসায় সরকার হারাচ্ছে বড় অঙ্কের রাজস্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সেটি অব্যাহত রয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, উপজেলার ১ ও ২নং লক্ষীপ্রসাদ ইউনিয়নের সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে আনা হচ্ছে ভারতীয় চিনি। ইউনিয়নের সুরইঘাট, লোভা, ডোনা সীমান্ত এলাকা দিয়ে অবৈধ পথে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ ভারতীয় চিনি দেশে প্রবেশ করছে। একশ্রেণির চোরাকারবারি সীমান্ত এলাকার নিম্নআয়ের মানুষদের চিনি চোরাচালানের কাজে ব্যবহার করছেন। কাঁটাতারের বেড়া পার করে বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের পাশাপাশি রাতে পিকআপ ভ্যানে করে এসব চিনি ছড়িয়ে যায় কানাইঘাট উপজেলা হয়ে সিলেট জেলার বিভিন্ন বাজারে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ভারত থেকে অবৈধ পথে চিনি, মাদক ও অন্যান্য পণ্য আমদানিকে কেন্দ্র করে ওই সব এলাকায় একটি শক্তিশালী চক্র গড়ে উঠেছে। চোরাকারবারিরা প্রথমে সীমান্ত থেকে মাথায় বা কাঁধে করে নিয়ে আসে চিনির বস্তা। পরে সাইকেল, মোটরসাইকেল, রিকশা ও ইজিবাইকে করে এনে স্থানীয় আন্দুরমুখ বাজার ও খুলুরমাটি গ্রামের মধ্যেদিয়ে রাতের আধারে চিনি পরিবহন করে নিয়ে সড়কের বাজার ও বাংলাবাজারের নির্দিষ্ট গুদামে মজুদ করে রাখে। প্রতিদিন মধ্যরাত থেকে ভোররাত পর্যন্ত চলে এই পাচারকাণ্ড।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকার শতাধিক মানুষ চিনি চোরাচালান ও পাচারের সঙ্গে জড়িত। প্রতিদিন প্রায় ৩০ থেকে ৪০ টন ভারতীয় চিনি অবৈধভাবে দেশে আসছে। দেশের বাজারের তুলনায় ভারতে চিনির দাম কম হওয়ায় চোরাকারবারিরা সুযোগ নিচ্ছে।
স্থানীয় বাজার ও ব্যবসায়ী সূত্রে জানা যায়, ভারতের বাজারে বর্তমানে প্রতি কেজি চিনি ৪৪ রুপি। ৫০ কেজির বস্তার দাম ২ হাজার ২০০ রুপি। একই পরিমাণ চিনি কানাইঘাট উপজেলার বিভিন্ন বাজার ও পার্শ্ববর্তী বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন বাজারে পাইকারি বিক্রেতারা ৫ হাজার ৬০০ থেকে ৫ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি করছেন খুচরা মুদি দোকানিদের কাছে। উপজেলার গ্রামের হাটবাজারগুলোতে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা দরে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, বাজারে চিনি আনতে গেলে ভারতীয় চিনি ছাড়া দেশীয় বা আমদানিকৃত চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক দোকানে বস্তা পরিবর্তন করে অন্য বস্তায় রেখে চিনি বিক্রি করছে। নিরুপায় হয়ে ভারতীয় চিনিই কিনতে হয়।
সম্প্রতি উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে প্রায় ১১ টন ভারতীয় চিনি আটক করেছে কানাইঘাট থানা পুলিশ। এরপরও বন্ধ হয়নি এ চোরাকারবার। চতুর চোরাকারবারিরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন চিনি পাচার।
কানাইঘাট থানার ওসি গোলাম দস্তগীর বলেন, অবৈধ পথে ভারতীয় চিনি আনা বন্ধে আমরা নিয়মিত কাজ করছি। সম্প্রতি অভিযানে বড় ধরনের চিনির চালান জব্দ করেছি। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এ বিষয়ে জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর থেকে বলা হয়েছে, অবৈধ পথে চিনি আনা বন্ধে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। বিগত সময়ে বেশ কিছু দোকানিকে অবৈধ ভারতীয় চিনি রাখার দায়ে জরিমানা করা হয়েছে। নিয়মিত বাজার মনিটরিং অব্যাহত থাকবে।