সুনামগঞ্জ-৪ : নৌকার মাঝি হতে আগ্রহী ৯ প্রার্থী
স্টাফ রিপোর্ট :
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ নভেম্বর ২০২৩, ২:১৪ অপরাহ্ণবিশ্বম্ভরপুর ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত সুনামগঞ্জ -৪ আসন। এই আসনের ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৪২ হাজার ৭৮৬ জন। বর্তমানে এই আসনের সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির অ্যাডভোকেট পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ। বিগত দিনের নির্বাচনী ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায় আসনটি আওয়ামী লীগের জন্য পুরোপুরি অনুকুলে নয়। উপরন্তু গেল দুই মেয়াদে জোটের শরিক জাতীয় পার্টিকে ওই আসনটি ছেড়ে দেওয়ায় দলীয়ভাবেও আওয়ামী লীগের অবস্থান অগোছালো। তবে এবার আসনটি ছাড়তে রাজী নয় জেলা নেতৃবৃন্দ। সংগঠন এবং সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম সর্বত্র পৌছে দিতে নির্বাচনে অংশ নিতে চায় আওয়ামী লীগ। এরই অংশ হিসেবে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন জেলার প্রায় ৯ জন নেতা। এর মধ্যে অবসর প্রাপ্ত সচিব ও সাবেক সংসদ সদস্যও রয়েছেন। মনোনয়ন পত্র সংগ্রহকারীরা হলেন, এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মতিউর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল হুদা মুকুট, নির্বাচন কমিশনের সাবেক সচিব ও পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক, আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদ সদস্য ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নোমান বখ্ত পলিন, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান খায়রুল হুদা চপল, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাড. শামছুন নাহার বেগম শাহানা, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোবারক হোসেন, জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি সানজিদা নাসরিন দীনা (ডায়না) আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনে জমা দিয়েছেন। তবে এই আসনে সাবেক নির্বাচন কমিশনের সাবেক সচিব ড. মোহাম্মদ সাদিক মনোনয়ন ফরম কেনার কারণে আওয়ামী লীগের কর্মী সমর্থকসহ রাজনৈতিক কর্মীদের আগ্রহ বেড়েছে।
ড. মোহাম্মদ সাদিক দেশের সাংবিধানিক সংস্থা পিএসসি’র ১৩তম চেয়ারম্যান এবং নির্বাচন কমিশনের সাবেক সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন। ২০২০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর বয়স ৬৫ পূর্ণ হওয়ায় অবসরে যান সাবেক এই সরকারি কর্মকর্তা। তিনি ১৯৫৫ সালে সুনামগঞ্জ শহরতলির ধাড়ারগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। সাদিক জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব এ্যাডমিনিস্ট্রেশন এন্ড ম্যানেজমেন্ট [বিয়াম] ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক এবং বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস প্রশাসন একাডেমির পরিচালক ও ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক পদে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নজরুল ইন্সটিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। শিল্প মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ভিন্ন ভিন্ন পদেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি সুইডেনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব এবং কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল হুদা মুকুট প্রায় ২০ বছর ধরে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি একনাগাড়ে দুইবার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এর আগে সুনামগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের তিনবারের সভাপতি এবং এফবিসিআইয়ের পরিচালক ছিলেন এই রাজনীতিক।
ব্যারিস্টার এনামুল কবির ইমন ছাত্রলীগ থেকে আওয়ামী লীগের কর্মী। তাঁর বাবা সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন, মা ছিলেন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী। সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক ইমন জেলা আওয়ামী লীগের প্রায় সাত বছর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
সুনামগঞ্জের বখত পরিবারের সন্তান নোমান বখত পলিন। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক। বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান পলিন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। তাঁর ভাই আয়ুব বখ্ত জগলুল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। অপর ভাই নাদের বখত সুনামগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান।
জেলার রাজনীতিতে প্রভাবশালী আরেক নাম খায়রুল হুদা চপল। তিনি জেলা যুবলীগের বর্তমান কমিটির আহ্বায়ক। সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান চপল এফবিসিসিআইয়ের বর্তমান সহসভাপতি।
অ্যাড. শামছুন নাহার শাহানা জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি সাবেক সংসদ সদস্য (সংরক্ষিত) ছিলেন। সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত ভিপি ছিলেন।
জেলার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বলছেন, দলের সাংগঠনিক অবস্থান সুদৃঢ় করতে হলে অবশ্যই এই আসনে এবার দলীয় প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া উচিত। একই সাথে সরকারের উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ তৃণমূল পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে দলীয় প্রার্থীর বিকল্প নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুনামগঞ্জ জেলা যুবলীগ সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খায়রুল হুদা চপল বলেন,‘শেখ হাসিনা যা কিছু করেছেন তা বাংলাদেশের ইতিহাসে কেউ করেনি। তিনি দেশকে উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, উন্নয়নশীল দেশের কাতারে নিয়ে গেছেন। মেট্রোরেল, পদ্মাসেতু, কর্ণফুলী টানেল, ফোর লেন ও এইট লেনের রাস্তা করেছেন। তিনি বা তার দল ক্ষমতায় থাকলে বাংলাদেশ ২০৪১ সালে উন্নত দেশে পরিণত হবে। এই আস্থা আমাদের রাখতে হবে।’
খায়রুল হুদা চপল বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত ও দৃশ্যমান ও চলমান মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে হলে শেখ হাসিনা সরকারকে পুণরায় বিজয়ী করতে হবে। স্বাধীনতাপ্রাপ্ত একটি দেশ মাত্র ৫০ বছরে যে জায়গায় দাঁড়িয়েছে, তা শুধু সম্ভব হয়েছে ‘শেখ হাসিনা উন্নয়ন মডেল’ এর কারণে। তিনি বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে উন্নয়নের প্রতীক নৌকা মার্কাকে বিজয়ী করা ও জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে সকলকে সম্মিলিতভাবে কাজ করে যেতে হবে।