নিজে স্কুলের গন্ডি পার হননি,পড়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের
বাংলানিউজ এনওয়াই ডেস্ক :
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১:০০ পূর্বাহ্ণজ্ঞান যে প্রথাগত শিক্ষার ধার ধারে না, তার জলজ্যান্ত উদাহরন তিনি। কেউ বলেন পুঁথি দাদু, কেউ বলেন চলমান এনসাইক্লোপিডিয়া। নিন্দুকে তো বই পাগল ও বলেন। গুরুচরণ গড়াই বললে অবশ্য সাতাত্তর বছরের এই বৃদ্ধ কে চিনতে পারবেন না প্রায় কেউই। পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডি থানার বুড়দা গ্রামের এই মানুষটিকে পুঁথি দাদু নামে এক ডাকে চেনেন ব্লকের প্রায় সকলেই। চিনবে নাই বা কেনো?
সাহিত্য হোক বা ব্যাকরণ, দর্শন হোক বা সাধারণ জ্ঞান, – – পড়ুয়াদের মুশকিল আসান পুঁথি দাদু ও তাঁর গ্রন্থাগার। পেশায় কৃষক পুঁথি দাদুর কাছে পড়তে আসেন স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের ছাত্র ছাত্রীরা। এহেন মানুষটির পড়াশোনা কিন্তু সপ্তম শ্রেণি অবধি। ছাত্র ছাত্রীদের অনায়াস দক্ষতায় যখন সাহায্য করেন, তখন কে বলবে তার প্রথাগত ডিগ্রি নেই তাঁর? সম্পূর্ণ নিজের উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন “চৈতন্য গ্রন্থাগার”। বইয়ের সংখ্যা এক হাজারের ও বেশি। সেখানে গেলেই বই পড়তে পাওয়া যায় সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে। পড়াশোনায় সাহায্যের জন্য পুঁথি দাদু প্রস্তুত সবসময়। কোন বইয়ের পাতায় কি লেখা রয়েছে, সবই তাঁর নখদর্পনে। টিউশনের পয়সার পুরোটাই প্রায় খরচ হয়ে যায় গ্রন্থাগারের জন্য। নিজেই জানালেন ছোটোবেলার কথা। মাত্র এগারো বছর বয়সে ওনার বাবা মারা গিয়েছিলেন। সংগ্রামের সেই শুরু। কিন্তু ভাঁটা পড়েনি বইপ্রীতিতে। অভাবে স্কুল যাওয়া বন্ধ হয়। চেয়েচিন্তে বই আনতেন গুরুচরণ। মা ফুটিবালা নিরক্ষর হলেও বইয়ের কদর জানতেন। হত দরিদ্র পরিবারে ধান বিক্রির টাকায় কেনা হতো বই।
স্কুল এ যাওয়া বন্ধ হওয়ার বছর তিনেক পর ১৯৫৩ সালে নিজের বাড়িতে গ্রন্থাগার গড়ে তোলেন গুরুচরণ। নাম দেন চৈতন্য গ্রন্থাগার । চাষের কাজের পাশাপাশি চলতে থাকে বই সংগ্রহের কাজ। সেই সঙ্গে পড়াশোনা। একটু স্বাচ্ছন্দ্যের আশায় ছাত্র ছাত্রীদের পড়াতে শুরু করেন। লোকমুখে খ্যাতি ছড়িয়ে পরতে বেশি সময় লাগেনি। এখানেই শেষ নয়, সাহিত্য চর্চা ও করেন গুরুচরণ। ‘কোরোক’ নামক একটি কাব্যগ্রন্থও প্রকাশিত হয়েছে ওনার। গুরুচরণের দুই ছেলেও চাষবাস করেই সংসার চালান। সংসারে টানাটানি থাকলেও বাবাকে উৎসাহ যোগান তারা।
ওনার বড়ো ছেলে শিবরাম গড়াই জানালেন, যতোই দারিদ্র থাক, বাবাকে বাঁধা দেবার কোনো প্রশ্নই নাই। একমুখ খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি। পরনে আধ ময়লা সাদা ধুতি। নিতান্তই সাধারণ চেহারার মানুষটি যে এমন অসাধারণ সাধনায় মেতে রয়েছেন, তা নিয়ে রীতিমতো গর্বিত প্রতিবেশীরাও। বুড়দা গ্রামের বাসিন্দা প্রাক্তন বিধায়ক তথা ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য কমিটির সদস্য নিশিকান্ত মেহেতা বলেন, পুঁথি দাদু ও তাঁর লাইব্রেরি না থাকলে এলাকায় এতো দ্রুত শিক্ষার প্রসার ঘটত না। এখানে এমন কেউ নেই যিনি পড়াশোনায় ওনার সাহায্য নেন নি।