নগরের ফুটপাত নিয়ে আহাদ-নূর চক্রের বাণিজ্য
নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ আগস্ট ২০২২, ৮:২৮ অপরাহ্ণঢাক-ঢোল পিটিয়ে সিলেটে হকার পুনর্বাসনে উদ্যোগ গ্রহণ করে সিলেট সিটি করপোরেশন। এর জন্য খরচ করা হয় অর্ধকোটি টাকা। তবে কাজে আসেনি এই প্রক্রিয়া। এর ফলে টাকার অপচয় হয়েছে বটে, তবে হকার মুক্ত করা যায়নি ফুটপাত। উপরন্তু এই ফুটপাতকে কেন্দ্র করে ১০ বছরে কোটি টাকার মালিক হয়েছেন মহানগর শ্রমিকদলের দুই নেতা। নগরের হকাররাজ্যের বহুল আলোচিত এই দুই কিং হলেন আবদুল আহাদ এবং নুর ইসলাম। অভিযোগ রয়েছে-হকাররাজ্যে এই দুই নেতার চাঁদাবাণিজ্যের সাথে জড়িত রয়েছেন সিসিকের অসাধু দুই কর্মকর্তা। বন্দরবাজার ফাঁড়ি পুলিশের আশির্বাদও রয়েছে এই দুই নেতার প্রতি। ফলে সিলেটের হকাররাজ্যে এককভাবে চলছে আহাদ-নূর চক্রের দুর্দণ্ড প্রতাপ।
অভিযোগ রয়েছে আহাদ এবং নুরুল গং এর উপর মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর আশীর্বাদ রয়েছে। ফলে মাঝে-মধ্যে সিসিকের ফুটপাতে অভিযান জাস্ট একটি নাটক মাত্র। আহাদ-নুরুলের রুটি রুজির পথ খোলা রাখতেই মেয়র ফুটপাত বন্ধে স্থায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে ব্যর্থ হচ্ছেন।
এর আগে নগরীর ফুটপাত মুক্তকরণের লক্ষ্যে হকার পুনর্বাসনের উদ্যোগে গ্রহণ করে সিলেট সিটি করপোরেশেন। উদ্যোগের অংশ হিসেবে নগরভবনের পিছনে পড়ে থাকা লালদীঘীর পারস্থ খালি জায়গাকে সংস্কার করে হকারদের বসার উপযোগী করা হয়। ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে ১ হাজার ১শ’ হকারের নাম তালিকাভুক্ত করে সিটি করপোরেশন। সর্বদলীয় হকার ঐক্য পরিষদের সভাপতি হিসেবে আবদুল আহাদ সেই লটারীতে ছিলেন মূল ভূমিকায়। আহাদ গংদের তালিকা অনুযায়ী ১৬ ডিসেম্বর থেকে হকারদের মধ্যে দোকান বন্ঠন করে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং ২২ ডিসেম্বর থেকে নগরের লালদীঘি মাঠে বসেন তালিকাভূক্ত হকাররা। কিন্তু সেখানেও বাধাঁ হয়ে দাঁড়ায় হকাররাজ্যের দুই কিং আহাদ-নূর গং।
হকারদের নিয়ে করা লটারীর তালিকা থেকে শুরু হয় এই বিভেদ। আর আহাদ-নূর গং সেই সূতোয় ধরে টান দিয়ে শুরু করেন নতুন খেলা। এই খেলাতেই ধীরে ধীরে লালদীঘির পার ত্যাগ করে নগরের ফুটপাতে ফের চলে আসেন হকাররা। ফলে একমাসের মধ্যেই ফাঁকা হয়ে যায় হকার পুনর্বাসন স্থান নগরীর লালদীঘির পার।
নগরের বাসিন্দারা বলছেন, হকার পুনর্বাসনের ফলে নগরের বন্দরবাজার থেকে জিন্দাবাজার হয়ে চৌহাট্টা পয়েন্ট পর্যন্ত সড়কের দুই ধারে কিছুদিন ছিল না কোনো হকার। ছিলো না ভ্রাম্যমাণ ক্রেতা-বিক্রেতারাও। এতে স্বাচ্ছন্দে চলতে পারছিলেন পথচারী, অফিস আদালত ও স্কুল কলেজ যাত্রীরা। কিন্তু কিছু দিনের ব্যবধানে পাল্টে যায় সেই চিত্র। হকাররা ফের রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে বসতে থাকে। নগরের কীনব্রিজ থেকে শুরু করে বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, জেইলরোড, জল্লারপার, চৌহাট্টা আম্বরখানাসহ এমন কোনো রোড বাকি নেই, যেখানে বসছে না হকার ও ভাসমান ব্যবসায়ী। আর প্রতিদিন ফুটপাতগুলো থেকে থেকে নির্ধারিত হারে টাকা যাচ্ছে আহাদ-নূর চক্রের হাতে।
অভিযোগ রয়েছে অভিযুক্ত এই দু’জন নগরপতি আরিফুল হক চৌধুরীর খুবই প্রিয়পাত্র। মেয়রের যেকোনো প্রোগ্রামে শ’য়ে শ’য়ে লোকবল নিয়ে অগ্রভাগে উপস্থিতি দেখা যায় এই দুই নেতার। এর মধ্যে আব্দুল আহাদ মহানগর শ্রমিক দলের সভাপতি এবং নুরুল ইসলাম মহানগর হকার দলের সভাপতি। এই দুই নেতার ইশারায় ফুটপাতে বসতে হয় হকারদের। আর এই হকার বাণিজ্যের মাধ্যমে প্রতিমাসে জ্ঞাতআয় বহির্ভুত লাখো কোটি টাকার বাণিজ্য হচ্ছে তাদের। এই দুই নেতার বসানো হকারদেরকে আবার আটক করার ভয়-ভীতি দেখিয়ে লাইনের অর্জিত টাকার একটি অংশ নিচ্ছে সিসিক’র সুপারভাইজাররা। সিসিক’র সুপারভাইজার সায়মন দৈনিক ১২ শত টাকা করে আদায় করছেন লাইনম্যানদের কাছ থেকেই। এছাড়া আরো অনেক লাইনম্যান রয়েছেন।
আহাদ-নূর চক্রের রয়েছে একটি রোডম্যাপ। সেই অনুযায়ী নিয়োজিত আছেন বেশ কয়েকজন লাইনম্যান। লাইনম্যানরা নির্ধারিত রোড অনুযায়ী দৈনিক টাকা কালেকশন করেন। উত্তোলিত এই টাকা প্রতিদিনই নেতাদের মধ্যে ভাগাভাগি হয়। পুলিশ ও সিসিকের সুপারভাইজার ও লাইনম্যানের টাকা বুঝিয়ে দিয়ে বাকি টাকা যায় আহাদ-নুর চক্রের পকেটে।
অভিযোগের বিষয়ে সিলেট মহানগর শ্রমিক দলের আহবায়ক ও সর্বদলীয় হকার ঐক্য পরিষদের সভাপতি আবদুল আহাদ বলেন, লালদীঘির পারে হকাররা ছিল বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত। ফলে ধীরে ধীরে সকল হকাররা সেখান থেকে বের হয়ে আসতে থাকে। তিনি বলেন, হকার পূনর্বাসন প্রক্রিয়ার সাথে তো আবদুর রকিবও জড়িত ছিলেন। এককভাবে আমাদের পক্ষে কিছুই করা হয় নি। হকারদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অভিযোগটি সম্পুর্ণ উদ্দেশ্য প্রণোদিত।’
মহানগর হকার্স দলের সভাপতি নুরুল ইসলাম বলেন, ‘হকার্স নেতা হিসেবে হকারদের সুযোগ-সুবিধা আমাদের দেখতে হয়। সুতরাং হকার পরিপন্থি কোনো কাজ আমরা করতে দেব না।’
আহাদ-নুরুল গংদের নিয়োজিত লাইনম্যানের হাতে টাকা তোলে দেই-দু’জন হকারের এমন অডিও রেকর্ড হাতে রয়েছে জানিয়ে মন্তব্য চাইলে নুরুল ইসলাম বলেন, এমন কিছু কেউ বলে থাকলে আমাদের কিছু করার নেই।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে নগরভবনের প্রশাসনিক কর্মকর্তার মোবাইল নাম্বারে কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ না করায় মন্তব্য আদায় করা সম্ভব হয় নি।