প্রকৃতিকে ভালোবেসে দুই সরকারি কর্মকর্তার ভালোবাসার বাগান
নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ ডিসেম্বর ২০২০, ৭:৩০ অপরাহ্ণ
বাংলাদেশের রূপ মানেই সবুজে ঘেরা এক শ্যামলিমা। সেই শ্যামলিমা এখন ইট-পাথর আর শব্দ দুষনের চাপায় ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে। দশকের পর দশক ধরে বৃক্ষ উজাড়ের মিছিল। ফলে আগের শ্যামল সিলেট সবুজ বৃক্ষের শোভা হারাচ্ছে নগর। একদিকে যেমন প্রতিদিন নতুন নতুন বহুতল ভবনের ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করা হচ্ছে। অন্যদিকে কেটে ফেলা হচ্ছে পুরনো বাড়ির চারপাশে থাকা গাছ।
তবে শতবর্ষ আগে বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আক্ষেপ করে বলেছিলেন,’দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর’। হয়তবা কবির আকুতিতে সাড়া দিচ্ছেন কেউ কেউ। তাই যান্ত্রিক শহরে অনেকে জাগিয়ে তুলছেন সবুজ প্রাণের ছোঁয়া। এমনই একজন উম্মে সালিক রুমাইয়া।
তিনি একজন সরকারি কর্মকর্তা। যান্ত্রিক নগর জীবন মাথায় নিয়ে সরকারি কর্মকর্তা হয়েও ব্যস্ত জীবনের পাশাপাশি সবুজ বৃক্ষের টানে নগরীর হাউজিং এস্টেট এলাকায় নিজ বাসস্থানে গড়ে তুলেছেন দৃষ্টিনন্দন একটি ফুলের বাগান। বাগান তো নয়, যেন এক টুকরো ভালোবাসার বাগান। যেখানে দেখা মিলে অন্যরকম স্বর্গীয় পরিবেশ। দৃষ্টিনন্দন এইবাসায় যেদিকে চোখ যায় শুধু গাছ আর গাছ। ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে বাসার চারপাশ। বেলকনিতেও ঝুলছে ঝুলন লতা। ফুটেছে নানান রঙের ফুল। বাগানের সবুজের সমারোহ দেখে যে কারোই চোখ জুড়িয়ে যাবে। তার বাসাটা যেন প্রকৃতির নির্দশন।
সবুজ সমারোহের বাগান নিয়ে জানতে চাইলে বৃক্ষপ্রেমী, উম্মে সালিক রুমাইয়া জানান,এ বাগানের নাম দিয়েছেন সায়র উদ্যান। নামকরনের কারন ও জানালেন। তিনি বলেন, আসলে বাগানের নাম ‘সায়র উদ্যান’ দিয়েছি আমি আর আমার ছোট্ট মেয়ে সখের বশে। এই নাম দেওয়ার কারণ হলো আমার ছেলে-মেয়ে দুজনের নামেই সায়র শব্দটা আছে এবং সায়র অর্থটাও কিন্তু খুব সুন্দর। সায়র শব্দের অর্থ সমুদ্র। একদিন সমুদ্রের মতই বিশাল হবে আমার সবুজের সমারোহ।
এই বাগান করতে আমার মেয়ে আমাকে সহযোগিতা করে। সে পড়ে জিন্দাবাজার সরকারি কিন্ডার গার্ডেন স্কুলে ক্লাস ওয়ানে। ছোট মেয়ে এত অল্প সময়ে বৃক্ষদের প্রতি মমতা হবে আগে জানতাম না। আমি যখন কর্মস্থলে চলে যাই তখন সে প্রতিনিয়ত পরিচর্যা করে।
সায়র উদ্যানের শুরুর গল্প সম্পর্কে উম্মে সালিক রুমাইয়া জানান, গাছ-গাছালির প্রতি টানটা আমার ছোটবেলা থেকেই।বাবার সরকারি চাকরির সুবাদে বিভিন্ন জেলায় কোয়ার্টারে থেকেছি। তখন দেখতাম বাসার সামনে সবজি ও ফুলের বাগান। ছোটবেলায় গাছ থেকে উঠিয়ে টমেটো খাওয়া আমার খুব পছন্দের একটি কাজ ছিলো। এভাবেই গাছেদের সাথে পরিচয় এর সূচনা। তারপর যখন ভার্সিটি লাইফে হলে ছিলাম সবসময় আমার বারান্দায় এবং পড়ার টেবিলে এক-দুটো গাছ থাকতো।
এরপর যখন নিজের সংসার হলো শুরু হলো বারান্দা সাজানো। শুরুতে ঢাকা শহরের ছোট বাসার ছোট্ট বারান্দা ছিলো আমার গাছেদের আবাসন। আমার হাসবেন্ডও গাছ পছন্দ করায় দুজন মিলে খুঁজে খুঁজে গাছ কিনতাম। এরপর যখন নিজের চাকরির সুবাদে সিলেটে আসলাম প্রথমেই ভেবেছিলাম বাসা যেমনই হোক বারান্দা হতে হবে সুন্দর। সেরকমটা মিলেও গেল।
উম্মে সালিক রুমাইয়া বলেন, ফুল ভালোবাসার প্রতীক। ফুলকে ভালোবাসে না এমন কাউকে পাওয়া যাবে না। প্রতিটি বাড়ির আঙিনা ও পুকুরপাড়ে ফুল এবং ফলের গাছ লাগানো উচিত। তিনি জানান, ইচ্ছা থাকলে বাসার অল্প জায়গায়ও ফুলের বাগান করা সম্ভব।
তিনি বলেন, এখন আমার পুরো বাসায় ১৫০ টিরও বেশি গাছ আছে। ঢাকা থেকে নিয়ে আসা কিছু গাছের সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে নতুন নতুন গাছের সংখ্যা। আর আমি কিন্তু শুধু গাছ পছন্দ করি তাই না, গাছেদের সাজাতেও অনেক ভালোবাসি। কোন গাছকে কোন টবে দিলে মানাবে সেই অনুযায়ী আমি টব সিলেক্ট করি। আমার বেশ সুন্দর টব ও ছোট পাথরের কালেকশন আছে। এগুলো আমি অনেকদিন ধরে বিভিন্ন জায়গা থেকে কালেক্ট করেছি। কিছু বাশ-বেতের জিনিসও আছে আমার গাছের সৌন্দর্যের জন্য।গাছেদের রাতের সৌন্দর্য দেখার জন্য আমার বারান্দা বাগানে নানা রঙ এর লাইট রয়েছে।
পুরো বাসায় দেড় শতাধিক গাছ নিয়ে তিনি বলেন, বিভিন্ন প্রজাতির গাছের মধ্যে গোলাপ, বিভিন্ন জাতের অর্কিড, বিভিন্ন জাতের পাতাবাহার, ক্রিসমাসট্রি, এলোভেরা, ছোটমরিচ, গাদা, পাথরকুচি, মানিপ্ল্যান্ট, কয়েনপ্ল্যান্ট, অনেকগুলো কালারের পর্তুলিকা, টগর, মোরগ ফুল, ঘাস ফুল, টাইম ফুল, লাকি ব্যাম্বো, এরিকা পাম, স্ন্যাক প্ল্যান্ট, স্পাইডার প্ল্যান্ট, বনসাই, তুলসি, ডাম্ব কেইন, পিস লিলি এবং অন্যান্য আরও অনেক গাছ আছে আমার বারান্দায়। প্রতিদিন একবার খুব অল্প সময়ের জন্য হলেও আমি গাছগুলোর কাছে বসি।মাঝেমধ্যেই চেষ্টা করি শত ব্যস্ততা থাকলেও গাছগুলোকে একটু সময় দিতে। মাঝেমধ্যে আমরা সবাই বারান্দায় বসি এক কাপ চা হাতে…কি যে এক প্রশান্তি ছড়িয়ে যায় তখন মনের মধ্যে । এই হলো আমার সবুজ ভালোবাসার গল্প।
এক প্রশ্নের জাবাবে তিনি বলেন, ইট-পাথরের চাপায় ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে নগরীর সবুজ রূপ। দশকের পর দশক ধরে বৃক্ষ উজাড়ের মিছিলে নগর তার আগের শ্যামল রূপশোভা হারাচ্ছে। বাংলাদেশের রূপ মানেই সবুজে ঘেরা এক শ্যামলিমা। তিনি বলেন, প্রতিদিন নতুন নতুন বহুতল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হচ্ছে, আর কেটে ফেলা হচ্ছে পুরনো বাড়ির চারপাশে থাকা গাছ। অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে ক্রমে হারিয়ে যাচ্ছে বৃক্ষতলের শীতল ছায়া। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি জনপদে জনগণের তিন গুণ গাছ থাকা দরকার। গাছ প্রেমী ও সৌখিন মানুষ উম্মে সালিক রুমাইয়া জানান, প্রত্যেকটা গাছ সংগ্রহের পেছনে রয়েছে কষ্ট আর শ্রম। এ ভাবে তিনি সবুজরে টানে নিজের বাসায় সবুজের সমারোহকে সায়র উদ্যানে পরিনত করেছেন। উম্মে সালিক রুমাইয়া বলেন, গাছের মত প্রকৃত বন্ধু আর কে আছে।
উম্মে সালিক রুমাইয়া বলেন, আমার বাসায় কিন্তু একজন কবির বসবাস। তিনি হলেন, আমার স্বামী তিনি প্রকৃতিকে ভালোবেসে কবিতা লিখেন আর প্রকৃতির সান্নিধ্যে কবিকে নতুন সৃষ্টিতে বেশ সহায়তা করে। সায়র উদ্যানের কবি মোঃ মিজাহারুল ইসলাম এই প্রকৃতিকে এভাবেই অলংকৃত করেছেন..
“বেশ আছে লতাপাতা গাছ ফুল ফল
বেশ আছে সুখ পাখি ছানাদের দল।