নারীরা নিজেরা স্বাবলম্বী হচ্ছেন, কর্মসংস্থান করছেন অন্যদেরও
নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ২:৫৭ অপরাহ্ণদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে একজন নারী শুধু চাকরি নয়, বরং নিজে উদ্যোক্তা হয়ে অন্যের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারেন। আর বর্তমানে নারীরা সেই দিকটিই বেছে নিচ্ছেন। করোনা মহামারিতে ঘরে বসে নারীরা যেমন উপার্জনের উপায় খুঁজে পেয়েছেন, তেমনি অনেক পুরুষও চাকরির পাশাপাশি ব্যবসায় ঝুঁকেছেন।
ভেনচার ক্যাপিটাল রিসার্চ ডাটাবেজ পিচবুক থেকে প্রকাশিত সর্বশেষ পরিসংখ্যান-২০১৯-এর তথ্য মতে, পৃথিবীর মাত্র দুই শতাংশ নারীর কাছে তাদের ব্যবসা পরিচালনার মূলধন থাকে। যেখানে পুরো পৃথিবী দিচ্ছে প্রতি ১০০ জনে দুই জন উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার পরিসংখ্যান, সেখানে বাংলাদেশের চিত্রটি আশার আলো দেখায়। বাংলাদেশে মোট উদ্যোক্তার শতকরা প্রায় ৬০ ভাগই নারী। নারী উদ্যোক্তা তৈরির ক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় এগিয়ে আছে বাংলাদেশ।
অনলাইনে এখন বস্ত্র, গয়না, সাংসারিক পণ্য, শিশুখাদ্য, প্রসাধন সামগ্রী থেকে শুরু করে শিক্ষণীয় বিষয়গুলোও যুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে গান শেখা, গিটার শেখা, আবৃত্তি, নৃত্য, আর্ট, কেয়ার গিভার, স্বাস্থ্যসেবাসহ যাবতীয় বিষয় এখন অনলাইনে শেখানো হয়। এসবও এক ধরনের উপার্জনের মাধ্যম। এই অনলাইন মাধ্যমে নারী উদ্যোক্তাদের উপস্থিতিই সবচেয়ে বেশি।
অনলাইনে কাজ করা ব্যক্তিরা বলেন, ঘরের বাইরে ৮/১০ ঘণ্টা সময় দিয়ে কাজ করতে হয় না বলে এই লাইনে এখন নারীর পদচারণা বাড়ছে। বাইরে বের হবার প্রতিবন্ধকতা নেই বলে অনলাইন উদ্যোগে নারীদের পদচারণা স্বাচ্ছন্দ্যের। সম্প্রতি প্রকাশিত ‘বাংলাদেশে নারী এসএমই উদ্যোক্তাদের বাজার সম্ভাবনা ও অর্থায়ন বৃদ্ধি’ শীর্ষক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ক্ষুদ্র ও মাঝারি নারী শিল্পোদ্যোক্তাদের বার্ষিক ঋণ চাহিদার ৬০ শতাংশই পূরণ করতে পারছে না ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। নারী উদ্যোক্তাদের ব্যাংক ঋণ পাওয়া সহজ করতে জামানত ছাড়াই ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়ার নির্দেশ রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের।
জানা গেছে, প্রতি বছরই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে গ্রাম পর্যায়ে নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেড়েছে। গ্রামের নারীদের এ ক্ষেত্রে আগ্রহী করার জন্য সরকারি ব্যাংকগুলো প্রতি বছরই সচেতনতামূলক বিভিন্ন প্রচারাভিযানের ব্যবস্থা করে থাকে।
বাংলাদেশে গত কয়েক বছর ধরে ব্যক্তিগত পর্যায়ে ফেসবুকভিত্তিক অনেক পেইজ তৈরি হয়েছে, যেখানে নানা ধরনের পণ্য বিক্রি হয়ে থাকে। এসব পণ্য ক্রেতা-বিক্রেতাদের বেশির ভাগই নারী এবং যাদের অনেকে ছাত্রী বা গৃহিণী। এছাড়া যারা ঘরে সন্তান লালনপালন করে চাকরিতে সময় দেওয়া দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছিল, তাড়াও এখন অনলাইনে কাজ শুরু করেছেন।
নারীরা মূলত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে হয়ে উঠেছেন প্রতিষ্ঠিত উদ্যোক্তা। তাদের ব্যবসায়িক পণ্যের মধ্যে রয়েছে—শাড়ি-পোশাক, রূপসজ্জা, গৃহসজ্জা, বিভিন্ন পদের তৈরি খাবার, অফিসের জন্য দুপুরের খাবার, মিষ্টান্ন পণ্য, বেকারি পণ্য, চকলেটসহ যাবতীয় পণ্যসামগ্রী। নারী ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের অনলাইন প্ল্যাটফরম উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম—‘উই’ বর্তমানে দেশের ৬৪ জেলার ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তাদের অন্যতম ভরসার প্ল্যাটফরম হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনলাইন প্ল্যাটফরমটিতে দেশীয় পণ্য নিয়ে কাজ করছে এমন উদ্যোক্তার সংখ্যা ১২ লাখ ছাড়িয়েছে।