এসো হে মানুষ দেবতা মানুষেরই সেবা করি
নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ এপ্রিল ২০২১, ৪:০৭ অপরাহ্ণধর্ম মানে যদি শান্তি, যদি শৃঙ্খলাই হয়ে থাকে। তাহলে আজ ধর্মের নামে কোন এতো সংঘাত, কেনো এতো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বা কেনো এতো উগ্রতা?
রাস্তায় বের হলেই শুনি শেয়ালের মতো শুধু চিৎকার চেচামেচী। ছেলে, বুড়ো সবাই চিল্লায়। আজ ছেলে বুড়ো সবার হাতে কুরআন,বাইবেল গীতার পরিবর্তে দেখি কেবল লাঠি, গ্রেনেড আর যতো বোমারু অস্ত্র।
ছোটবেলা দেখতাম আমার মুসলিম বন্ধু মোসাহীদ, সালাতুল, সানোয়ার, শাহজাহান, রুহুল ঘুম থেকে উঠেই দাঁত ব্রাশ করুক বা না করুক চোখ কচলাতে চলাতে মসজিদে চলে যেতো। ওদের বুকে বাঁধা থাকতো কুরআন শরীফ। আমরা অজানা ভয়ে কখনো মসজিদের কাছে যেতাম না। তবে দুর থেকেই শুনতাম ওদের হুজুরদের একক কণ্ঠ এবং সাথে সাথে ওরাও সমবেত কণ্ঠে হুজুরের সঙ্গে উচ্চারণ করতো আল-কোরাণের বাণী।
সেই সময়ের আলেম বা হুজুররা বর্তমান সময়ের কয়েকজনের মতো এতোটা নাম ডাক অর্জন করতে পারেন নি। কিন্তু তারা ছিলেন প্রকৃতই মুসলিম প্রকৃতই ধার্মিক। আমরা দেখতাম যখন কেউ ধর্মকে নিয়ে কটাক্ষ করছে। অথবা কেউ কোনো প্রকার খারাপ আচরণ করছ। তখন হুজুরেরা এক সাথে একডজন বেত আটি বেঁধে ওদের পেঠাতেন। আর সেই ক্ষণের পর থেকে খারাপ আচরণ করবে তো দূরের কথা নিজের বাবার নামও বোধয় তারা ভুলে যেতো।
আমার বন্ধু আলআমীন আর রাজ্জাক দের বাড়িতে দিন রাত কাটিয়েছি। এক সাথে কতো খেলেছি, তাদের বাড়ি খেয়েছি, যখন বাড়ি ফিরনতে লেট হতো তাদের বাড়িতেই শুয়েছি। কখনো আমরা সংঘাত করিনি। ধর্মকে আলাদা করে কখনো দেখিনি, দেখার সুযোগ পাই নি। আজো আমরা ভালোবাসাকে ধর্মের বস্ত্রে পার্থক্য করিনি।
কিন্তু যতো বড় হচ্ছি যতো আধুনিক হচ্ছি, গ্রাম্য কোশল ছেড়ে আমরা যতো শহুরে হচ্ছি দেখতে পাচ্ছি যে আমাদের মনন আধা কাচকলার মতো ঘোলাটে হচ্ছে দিন দিন অতিশয় স্বার্থে।
যখন কলেজে পড়তাম মাত্র দুজন ছেলেই হিন্দু ছিলাম। আমি ও রতন আর বাকি সব বন্ধুরাই তো মুসলিম ছিলো। তারা তো কখনো হিন্দু মুসলিমের ফারাক করেনি। কলেজ বন্ধু ফরহাদ, সাদি, জাহান, রেজা,কামিল,মিলন,রুবেল, আশরাফ, সাদ্দাম,জাকির, আমজাদ, মাসুম, বোরহান আরো অনেকেই আমরা এক ব্যাচের ছাত্র ছিলাম। কলেজ টুর্নামেন্ট খেলায় আমরা একসাথেই খেলেছি। তা্ছাড়া আমরা বাহিরেও গিয়ে কত খেলেছি। কতো কি কিই না করেছি সবাই মিলেমিশে। কই আমাদের মধ্যে তো কখনো বিরোধ বা অসদাচরণ কখনো হয় নি।
অথচ আজ আমরা বড় বড় ডিগ্রি নিয়ে সমাজে যখন বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আজ যখন আমরা ভালো মন্দ বুঝতে শিখেছি। এই পরিপূর্ণ সময়ে এসে দেখতে হচ্ছে সমাজে যতো অশালীনতা, অসামজিকতা। এমন কি সমাজের নানা অসঙ্গতি, কুরুচিপুর্ণ কাজগুলো কে আশ্রয় দিচ্ছি প্রতিনিয়ত।
ধর্ম যদি শান্তির পথই হয় তবে আজ কেনো ধর্মের এতো অবক্ষয়? কোনো ধর্মের নামে তো অরাজকতা? কেনো আমরা অন্ধকারে নিমজ্জিত হচ্ছি আগুনের লেলিহান বুকে জ্বালিয়ে? কেনো ধর্মকে বলির পাঠা করে রাস্তায় পিষ্ট হবে সহজ সরল নিপিড়িত মানুষ? কেনো নির্যাতনের আহাজারিতে রক্তস্নাত হবে এই বাংলা জননী?
ঘরবাড়ি জ্বালাও পোড়াও কোন সে ধর্মে আছে লেখা? ধর্ম যদি নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করার মূল হাতিয়ার হয়ে থাকে তবে এই সমাজে, এই দেশে আর ধর্ম বলতে কিছুই থাকবে না। শুনবে কেবল স্বজন হারানোর কান্না, অগ্নিদাহনে ভষ্মিভূত হবে এ জগত সংসার। হিংসা কেবল পুড়াতে জানে, হিংসা আর স্বার্থপরতার ফল কেবল ধ্বংস।
চণ্ডিদাস বলেছিলেন ‘সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই’। চলো আমরা উগ্রতা ছেড়ে নরম হই পুষ্পের মতো, চলো আবারো প্রেমেতে কোমল হই শিশুর মতো। আবারো আমরা মানবিক হই। ভালোবাসার নদী হই।
এসো গানে গানে বলি:
‘এসো হে মানুষ দেবতা মানুষেরই সেবা করি
মানুষ হয়ে আমরা সবাই সুন্দর এ ভুবন গড়ি’।
লেখক: কবি অজয় বৈদ্য অন্তর