হবিগঞ্জের খোয়াই নদী : সংস্কারের স্বপ্ন হোঁচট খাচ্ছে বারবার
নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ এপ্রিল ২০২১, ৭:৪৮ অপরাহ্ণবারবার হোঁচট খাচ্ছে হবিগঞ্জের পুরাতন খোয়াই নদী সংস্কারের স্বপ্ন। আগে দুই জেলা প্রশাসক উদ্যোগ নিয়েও বাস্তবায়ন করে যেতে পারেননি। এবার নতুন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহানও সে স্বপ্ন দেখালেন।
রবিবার (১৮ এপ্রিল) পুরাতন খোয়াই নদী পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান। এসময় তিনি মৃতপ্রায় এ নদীটিকে সংস্কারের কথা বলেন। তিনি নদীটিকে কেন্দ্র করে ওয়াকওয়ে নির্মাণসহ নাগরিক সেবার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশনা দেন।
এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন, হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহনেওয়াজ তালুকদার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) তারেক মোহাম্মদ জাকারিয়া, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মর্জিনা আক্তার, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিন্টু চৌধুরী এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) বিজেন ব্যানার্জী।
জানা গেছে, ২০১৯ সালে জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবীর মুরাদ খোয়াই সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তার নির্দেশে ওই বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর শহরের মাহমুদাবাদ ডায়াবেটিস হাসপাতালের কাছ থেকে পুরাতন খোয়াই নদী তীরের স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। অভিযানটি শুরু হতে না হতেই পরের মাসের ২৩ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে তাকে বদলি হতে হয়। শহরের নিউ মুসলিম কোয়ার্টারে প্রায় আড়াই কিলোমিটার পর্যন্ত ৫০০ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পর ৩০ অক্টোবর অভিযানটি বন্ধ হয়ে যায়। হবিগঞ্জের নতুন ডিসি হিসেবে নিয়োগ পান সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিব মো. কামরুল হাসান। যোগদানের শুরু থেকে তিনি বলে আসছিলেন শিগগিরই অভিযান শুরু হবে। চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি তার বদলির আদেশ আসে। ফলে বন্ধই থাকে উচ্ছেদ অভিযান। মো. কামরুল হাসান বদলি হয়ে চলতি বছরের ৬ মার্চ নতুন ডিসি হিসেবে আসেন ইশরাত জাহান। সেই থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১৮ মাসেও পুনরায় উচ্ছেদ অভিযান শুরু করতে পারেনি জেলা প্রশাসন।
উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ থাকার বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না হবিগঞ্জের সাধারণ মানুষ। কারণ, হবিগঞ্জের পরিবেশ রক্ষায় পুরাতন খোয়াই নদী পাড়ের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ খুবই জরুরী।
সূত্র জানায়, দুই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন করার কথা ছিল খোয়াই রিভার সিস্টেম উন্নয়ন প্রকল্প। প্রধানমন্ত্রী এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সে অনুযায়ী হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রকল্প বাস্তবায়নের স্ক্যাচম্যাপ তৈরি করেছিল।
প্রাথমিক পর্যায়ে সদর হাসপাতাল থেকে নাতিরাবাদ পর্যন্ত দুই কিলোমিটার ৩১৫ মিটার পুরাতন খোয়াই নদীকে সংস্কার করে নান্দনিক করার কথা ছিল। অনেকটা ঢাকার হাতিরঝিল প্রকল্পের আদলে এটি করার কথা হয়। নদীর দুপাড় উঁচু করে বাঁধ নির্মাণ, দুই তীরে রাস্তা, ৫টি ব্রিজ নির্মাণ ও গাছ লাগানোর কথাও ছিল। পরবর্তীতে হবিগঞ্জ পৌরসভা সেখানে পার্ক ও শিশুদের বিনোদনের ব্যবস্থা করবে। এ প্রকল্পের আওতায় পুরাতন খোয়াই নদীর দুপাড়ে প্রশস্ত ওয়াকওয়ে, ওয়াটার পিউরিফিকেশন পাম্প স্থাপন, পর্যটকদের জন্য বোটিং ব্যবস্থা, এলইডি সড়কবাতি স্থাপন ও শিশুদের জন্য কিডস কর্নার করার কথা ছিল। উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ থাকায় বাস্তবে কিছুই হয়নি।
সূত্র জানায়, হবিগঞ্জ জেলা শহরকে বন্যার কবল থেকে রক্ষা করতে ১৯৭৬ সাল থেকে দুই দফায় মাছুলিয়া থেকে কামড়াপুর পর্যন্ত খোয়াই নদীর গতিপথ পরিবর্তন করা হয়। ১৯৭৬-৭৭ সালে মাছুলিয়া থেকে রামপুর পর্যন্ত তিন কিলোমিটার এবং ১৯৭৮-৭৯ সালে রামপুর থেকে কামড়াপুর গরুর বাজার পর্যন্ত আরও দুই কিলোমিটার গতিপথ পরিবর্তন করা হয়।
এরপর থেকে নদীর পুরাতন অংশটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। আর এ ফাঁকে বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক নেতা, সরকারি চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, আইনজীবীসহ নানা পেশার মানুষ নদীর পুরনো অংশটি দখলে নিতে থাকেন। এক সময় নদী অস্তিত্ব হারিয়ে কোথাও খাল, আবার কোথাও ড্রেনে পরিণত হয়।