কম খরচে লাভ বেশি , সুনামগঞ্জে বাদাম চাষে ঝুঁকছেন কৃষক
নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ এপ্রিল ২০২১, ৪:৫৯ অপরাহ্ণদিগন্তজোড়া সবুজ মাঠ। যত দূর চোখ যায় শুধু বাদাম খেত। দক্ষিণা বাতাসে দোল খাচ্ছে বাদাম গাছ। খেতের এক প্রান্ত থেকে এসব গাছ উপড়ে মাটির নিচ থেকে বাদাম বের করছেন শ্রমিকরা। কম খরচে লাভ বেশি হওয়ায় তাহিরপুরের বালিজুরি গ্রামের কৃষকরা বাদাম চাষে ঝুঁকছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, পুরো জেলায় ১ হাজার ৪১০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি চাষ করা হয়েছে তাহিরপুরে। এই উপজেলায় ১ হাজার ১৮৫ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ হয়েছে। এ ছাড়াও বিশ্বম্ভরপুরে ৬৬ হেক্টর, দোয়ারাবাজারে ৬৫ হেক্টর, জামালগঞ্জে ৫৫ হেক্টর, সুনামগঞ্জ সদরে ২৫ হেক্টর, ধর্মপাশায় ৫ হেক্টর, ছাতকে ৫ হেক্টর এবং জগন্নাথপুরে ৪ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করা হয়েছে।
তাহিরপুর উপজেলার বালিজুরি গ্রামের বালুপাথরের ব্যবসায়ী সুলেমান ওরফে ফুল মিয়া (৫২)। জাদুকাটা নদীতে তার ব্যবসা। তবে নদী থেকে বালু উত্তোলনে সরকারি বিধি-নিষেধ থাকার কারণে সুবিধা করছে পারছেন না। ব্যবসায় এ রকম মান্দা ভাব প্রায় সময় রয়েছে। তাই আদি পেশা কৃষিকে এখনও আকঁড়ে ধরেছেন। নিজের জমিতে ধান ও বাদাম দুটোই চাষ করছেন। সেখান থেকে প্রায় ৪ লাখ টাকা আয় করেন তিনি।
একটু নিচু জমিতে বোরো ধান চাষ এবং অপেক্ষাকৃত উঁচু জমিতে চাষ করেন বাদাম। এবার তিনি ৭ কেয়ার (৩০ শতাংশে ১ কেয়ার) জমিনে বোরো ধান আবাদ করেছেন। এ ছাড়া ১৮ কেয়ার জমিতে করেছেন বাদাম চাষ। ফলন ভালো এবং লাভজনক হওয়ায় বাদাম চাষে বেশি ঝোঁক তার। ১৮ কেয়ার জমিতে পৌষ মাসে বাদাম রোপণ করেছিলাম। এখন বাদাম তোলার সময় হয়েছে। কেয়ার প্রতি বাদাম উৎপাদন হয়েছে ৪-৫ মণ। এক মণ বাদাম বিক্রি হয় ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। এতে প্রতি কেয়ার থেকে ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকার বাদাম বিক্রি হয়। তবে কেয়ার প্রতি উৎপাদন খরচ ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা।
ফুল মিয়া
তার ছেলে মো. ইয়াসিন বলেন, হাওরের মাঝে আমরা সবার আগে বাদাম চাষ শুরু করি। প্রথম দিকে কেয়ার প্রতি ৩ মণ করে বাদাম পেয়েছি। তখন ৮ হাজার টাকা মণ বিক্রি করতে পেরেছি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বালিজুরি গ্রামের প্রায় ৬০ জন কৃষক বাদাম চাষের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। বাদাম চাষে লাভবান হওয়ায় প্রতি বছরেই বাদাম চাষির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে অসহযোগিতার কথাও জানিয়েছেন অনেক বাদাম চাষি।
বালিজুরি গ্রামের আরেক বাদাম চাষি মো. শাহাবুল মিয়া (৪০)। তিনি দেড় কেয়ার জমিতে বাদাম চাষ করেছেন। তার জমিতে বাদামের বাম্পার ফলন হয়েছে। এ জন্য খুশি মনে নিজের বাদাম খেত দেখছেন। তবে সরকারি সুযোগ সুবিধা পেলে আরও বেশি জমিতে বাদাম চাষ করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
শাহাবুল মিয়া বলেন, বাদাম চাষ করে মোটামুটি লাভবান হওয়া যায়। তাই দেড় কেয়ার জমিতে বাদাম চাষ করেছি। তবে সরকারিভাবে আমরা কৃষকরা কোনো সাহায্য সহযোগিতা পাই না। এদিকে এসব বাদাম খেত থেকে বাদাম তুলতে গ্রামের নিম্ন আয়ের মানুষ ব্যস্ত সময় পার করছেন। বিশেষ করে গ্রামের নারীরা সন্তানদের সঙ্গে করে বাদাম তুলছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপরিচালক মো. ফরিদুল হাসান বলেন, জেলার মধ্যে তাহিরপুরের বাদাঘাট এলাকায় বেশি বাদাম চাষ হয়। বাদাম একটু উঁচু এলাকায় ভালো হয়। জমিতে সামান্য বৃষ্টির কারণে যদি পানি জমে যায় তাহলে গাছ পঁচে যাবে। একটু বেলে দোআঁশ মাটিতে বাদাম চাষ ভালো হয়।
সুনামগঞ্জে দুইটি মৌসুমে বাদাম চাষ হয়। অক্টোবরের শেষের দিকে বীজ বপন করা হয়। সে বীজ থেকে তিন মাস পরে বাদাম তোলা হয়। আবার জানুয়ারি মাসে বীজ বপন করে এপ্রিল-মে মাসে বাদাম তোলা হয়।
কৃষকদের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সুনামগঞ্জে ২৬৩ জন কৃষি উপসহকারী কর্মকর্তা থাকার কথা। এখন পর্যন্ত ৯৩ জন রয়েছেন। যেখানে একটি ইউনিয়নে তিনজন কৃষি উপসহকারী থাকার কথা সেখানে দুটি ইউনিয়নের দায়িত্বে রয়েছেন একজন। কম জনবল দিয়ে সেবা দিতে হচ্ছে আমাদের। তবে আমরা কৃষকদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।