খরায় চা বাগানে পোকার আক্রমন : মাধবপুরে পুড়ছে ৫ টি চা বাগান
নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ এপ্রিল ২০২১, ৩:০৬ অপরাহ্ণপ্রতি বছরই এপ্রিল মাসে দুটি পাতা একটি কুঁড়িতে সবুজে ভরে যেত প্রতিটি চা বাগান। চা বাগানে চোখ পড়লেই দেখা যেত সবুজের হাতছানি। দেখা যেত বাগান জুড়ে দল বেঁধে নারী চা শ্রমিকরা চা পাতা উত্তোলন করত। কিন্তু এবছর দীর্ঘদিন ধরে খরা ধাকায় মাধবপুর উপজেলায় তেলিয়াপাড়া, সুরমা, জগদীশপুর, বৈকন্ঠপুর ও নোয়াপাড়া ৫ টি চা বাগানে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর এপ্রিল মাসে উৎপাদন ব্যাপক হারে কমে গেছে। খরায় চা বাগানে দেখা দিয়েছে বিভিন্ন পোকার আক্রমন। উঁচু ভূমিতে চা গাছ বেঁচে থাকার প্রধান উপাদান হচ্ছে বৃষ্টির পানি। মহামারি করোনার পরিস্থিতি সামলিয়ে চা বাগানগুলো এমনিতেই লোকসানের মধ্যে রয়েছে। এখন খরায় উৎপাদন কমে বড় ধরনের ক্ষতির আশংকা করছেন বাগান সংশ্লিষ্টরা ।
নোয়াপাড়া চা বাগানের ব্যবস্থাপক ফখরুল ইসলাম বলেন, চা বাগানে গেলে কান্না আসে। খরা তাপমাত্রার পরিমান অসহনীয় পর্যায়ে চলে যাওয়ায় সবুজ চাপাতা চোখের সামনে মরে যাচ্ছে। অন্যান্য বছর খরা থাকলেও এমন দীর্ঘস্থায়ী খরা হয়নি। চা বাগানে বালিযুক্ত দোঁআশ মাটি হওয়ায় মাটি গরম হয়ে চা গাছ মরে যাচ্ছে। অনুকুল আবহাওয়া কারনে চা বাগানে দেখা দিয়েছে খরা বাহিত বিভিন্ন রোগের আক্রমন। শ্রমিকের মজুরি সহ উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় চা বাগান এখন টিকিয়ে রাখা কষ্টকর। এর পাশাপাশি এবছর সর্বনাসা খরায় চা বাগানের ভবিষ্যৎ এখন হুমকির মুখে।
তেলিয়াপাড়া চা বাগানের ব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘ ৫ মাসের খরায় তেলিয়াপাড়া চা বাগান অনেক ছোট বড় চা গাছ মরে চাপাতা লালচে বর্ণ ধারন করেছে। এ পরিস্থিতিতে গত বছরের তুলনায় এ বছর উৎপাদন অনেক কমে গেছে। চা শিল্প প্রতিযোগীতার বাজারে এমনি টিকিয়ে থাকা কঠিন। তার ওপর প্রাকৃতিক দুর্যোগ খরার কারনে এখন লোকসানের মধ্যে পড়তে হবে।
বৈকন্ঠপুর চা বাগানের ব্যবস্থাপক তছলিম উদ্দিন বলেন, দেশে ও আর্ন্তজাতিক বাজারে চায়ের দরপতন হওয়ার কারনে চা বাগান গুলো এমনিতেই লোকসানের মধ্যে। করোনার সময় গত বছর চায়ের বাজার সংকোচিত হওয়ার কারনে চা বাগানগুলো ক্ষতির মুখে পড়ে। এবছর গত বছরের তুলনায় এখন পর্যন্ত শতকরা ২২ ভাগ উৎপাদন কম হয়েছে। এর মূল কারন হচ্ছে বুষ্টিপাতের অভাবে চা গাছে নতুন সবুজ চাপাতা নেই। কিন্তু বাগানগুলোতে শ্রমিকের মজুরি, আবাসন, চিকিৎসাসহ অন্যান্য উৎপাদন খরচ বেড়েই চলেছে। এ অবস্থায় এক সময় লোকসানের ঘানি টানতে টানতে চা বাগান বন্ধ হয়ে যেতে পার।
সুরমা চা বাগানের ব্যবস্থাপাক আবুল কাসেম বলেন, দক্ষিন এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে চাশিল্পে অনেক সম্ভাবনা ও ঐতিহ্য ছিল। অনেক প্রতিকুল পরিবেশ মোকাবেলা করে চা বাগানগুলো টিকে রযেছে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে কিছু সমস্যার কারনে চা বাগানের ভবিষ্যৎ এখন ভাল নয়। আগে সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে চোরাই পথে কোন চাপাতা বাংলাদেশে প্রবেশ করতনা। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে সীমান্তদিয়ে ব্যাপক হারে নিম্ন মানের চাপাতা আসায় দেশীয় চা শিল্পে বড় ধরনের লোকসানের মধ্যে পড়েছে। মহামারি করোনায় এবং এবছর খরার কারনে চায়ের বাজার, দাম এবং উৎপাদন কমে গেছে। এ পরিস্থিতিতে চা বাগান গুলোকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হচ্ছে।