রাজনগরে বোরো ধানের বাম্পার ফলন, কৃষকদের মুখে হাসি
নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ এপ্রিল ২০২১, ২:১৪ অপরাহ্ণমৌলভীবাজারের শস্যভাণ্ডার খ্যাত রাজনগরের কাউয়াদীঘি হাওরে এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে কৃষকদের মুখে হাসির ঝিলিক লক্ষ্য করা গেছে। ফসল তোলার মুহূর্তে অনুকূল আবহাওয়ার কারণে এবার বোরো উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি হবে বলে কৃষক ও রাজনগর কৃষি বিভাগ মনে করছে।
জানা গেছে, জেলার বৃহত্তম হাওর কাওয়াদীঘিসহ উজানের প্রায় ৮০ ভাগ জমিতে চাষকৃত স্বপ্নের বোরো ধানের ফলন ভালো হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়ার কারণে যথা সময়ে ফসল ঘরে তুলতে এলাকার কৃষকরা এখন মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছে।
রাজনগর কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, যথাসময়ে কুশিয়ারা নদীর পানি প্রবেশরোধে ব্যবস্থা নেয়ার কারণে এবার বোরো মৌসুমের ফসল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও অধিক হবে। এবার হাওর কাওয়াদীঘিসহ উজানে মোট ১৩ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। এর মধ্যে হাইব্রিড আবাদ হয়েছে তিন হাজার ৬৮০ হেক্টর, স্থানীয় জাত ৭০ হেক্টর ও উফসি চাষ হয়েছে নয় হাজার ৯৮০ হেক্টর জমিতে।
এবার বোরো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৫ হাজার ২৩৭ টন (ধান)। এর মধ্যে হাইব্রিড উৎপাদন লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ২৫ হাজার ৭৬০ টন, স্থানীয় ১৫০ ও উফসি ৪৯ হাজার ৩২৭ টন। যার বাজার মূল্য ৭৫ কোটি ৭১ লাখ ১০ হাজার টাকা।
কৃষি বিভাগ আশা করছে, এই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এবার বেশি ধান ও অর্থ আয় করতে সক্ষম হবে কৃষকরা।
এ দিকে, সমন্বিত ব্যবস্থাপনা ও কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের ধানকাটার জন্য উপজেলায় সাতটি কম্বাইন্ড হার্বেস্টার মেশিন ও ১১টি রিপার মেশিন বিতরণ করা হয়েছে। মাঠের পাকা ধান দ্রুত ঘরে তুলতে ৭ এপ্রিল মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান হাওর পাড়ের সোনাটিকি এলাকায় ধানকাটার উদ্বোধন করেন।
শ্রমিক সঙ্কট ও বৈশ্বিক করোনা দুর্যোগের মুহূর্তে কৃষকের মনোবল চাঙ্গা রাখতে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক পর্যায়ের ব্যক্তিরা মাঠে ধানকাটতে কৃষকদের সহযোহিতা করে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
কৃষি অফিস বলছে, উপজেলায় চাষ হওয়া ফসলের এ পর্যন্ত ৩৮ ভাগ কাটা হয়েছে। বাকি ফসল আগামী ১৫ দিনের মধ্যে কাটা শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। কোনো প্রতিকূল পরিস্থিতি হলে দ্রুত ধানকাটার জন্য রাজনগরের চা-বাগান শ্রমিকদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।
কেওলা গ্রামের চাষি লনি মিয়া জানান, প্রতিবছরের মতো এবারো বিভিন্ন আশঙ্কার মধ্যে জমি চাষ করি। কারণ প্রতিবছরই ফসল ঘরে তোলার মুহূর্তে কুশিয়ারা নদী থেকে ফাটাসিংড়া বিলে মাছ আনয়নের নামে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল হাওরের হাজার হাজার কৃষকের স্বপ্নের ফসল পানিতে তলিয়ে দিয়ে কৃষকদের স্বপ্ন ধুলিস্যাৎ করে দিত। এ আশঙ্ এবারো ছিল। কিন্তু সরকারের যথাযথ উদ্যোগের কারণে স্বার্থান্বেষী ওই মহল সুবিধা করতে না পাড়ায় কৃষকদের মুখে হাসি ফুঁটেছে। প্রায় একই কথা বলেছেন রেতাহুঞ্জা গ্রামের কনা মিয়া, সুপ্রাকান্দি গ্রামের শাহজাহান মিয়া ও যাত্রাপুর গ্রামের জাহিদুল ইসলামসহ অনেক বোরো চাষি।
এ ব্যাপারে রাজনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহাদুল ইসলাম জানান, অনুকূল আবহাওয়া, মনু ব্যারেজ প্রকল্পের মাধ্যমে পানির যোগান ও ধানকাটার আগ মুহূর্তে হাওরে কুশিয়ারা নদীর পানি প্রবেশরোধে সরকারের যথাসময়ে ব্যবস্থায় এবার বোরো ফসল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও অধিক হবে বলে আশা করছি।
বাংলা নিউজ এনওয়াই-এবিএ