জগন্নাথপুরে বৈশাখীতে ব্যস্ত কৃষক-কৃষাণী
নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ এপ্রিল ২০২১, ৭:৪৯ অপরাহ্ণসুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার হাওরগুলোতে বৈশাখ মাসে ব্যস্ত সময় পার করছেন হাওর পাড়ের কৃষক কৃষাণী। ভোর থেকে সন্ধ্যা একদম দম ফালানোর সময় নেই হাওর পাড়ের কৃষক কৃষাণীর। পরিবারের ছোট ছেলে মেয়ে থেকে শুরু করে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের ও বৈশাখ মাসে টুকটাক কাজে সহযোগিতা করতে দেখা যায় হাওর পাড়ের বৈশাখী কাজে। কেউবা খলা তৈরি করছেন ধান শুকাতে, কেউবা ধান সিদ্ধ দিচ্ছেন, কেউবা ধান উড়ানোর কাজে ব্যস্ত, কেউবা রান্নার কাজে ব্যস্ত। কেউবা মাঠে সোনার ফসল কাটতে দলবেঁধে বাউল, সারি, মারফতি গান গেয়ে ফসল কাটছেন।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় ও হাওরপাড়ের কৃষক কৃষাণীরা জানান, একমাত্র বোরো ফসলের ওপর এ উপজেলার কৃষকরা নির্ভরশীল। বোরোধান তুলতে পারলেই কৃষক পরিবারের সারা বছরের আহার জোগানোর পাশাপাশি বিয়ে সাদি ঘর দরজা নির্মাণ সংস্কার কাজ করতে পারেন। আর বোরো ফসল ঘরে না উঠলে তাদের দুঃখ কষ্টের শেষ থাকেনা।
নলুয়ার হাওরে কথা হয় পাঁড়ারগাও গ্রামের বাসিন্দা হালিমা খাতুনের সঙ্গে। তিনি তাঁর কলেজ পড়ুয়া মেয়ে নাদিরা খাতুন কে নিয়ে ধান শুকানোর কাজ করছেন। কাজের ফাঁকে হালিমা খাতুন বলেন, বোরো ফসলের ওপর তাদের ছয় সদস্যের পরিবার নির্ভরশীল। এবার ১০ কেদার (৩০ শতাংশে এক কেদার) জমিতে বোরো আবাদ করেছেন। ফলন ভালো হওয়ায় তাঁরা খুশি।
আর নাদিরা খাতুন বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে কলেজ বন্ধ রয়েছে। তাই আনন্দ মনে ধান তোলার কাজে কৃষক বাবা মার পাশে থেকে কাজ করছেন।
নলুয়ার হাওরের সাদিপুর গ্রামের বাসিন্দা আশা বেগম বলেন, বৈশাখী এলে কৃষকরা ধান কেটে মাড়াই দিয়ে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার পর ধানগুলো শুকিয়ে ঝাড়ি দিয়ে বস্তাবন্দী ও উগারে তোলার কাজ কৃষাণীদেরকে করতে হয়। এবার প্রকৃতি অনুকূলে থাকায় আমরা খুশি মনে ধান গুলায় তুলতে পারছি।
নলুয়ার হাওর পাড়ের বাসিন্দা চিলাউড়া হলদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী সদস্য শান্তনা ইসলাম বলেন, হাওরপাড়ের ঘরে ঘরে এখন কৃষকদের পাশাপাশি কৃষাণীরা সমানতালে ধান তোলার কাজ করছেন। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পরিবারের কাজের পাশাপাশি ধান শুকানো ও সংরক্ষণের কাজ করছেন।
জগন্নাথপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শওকত ওসমান মজুমদার বলেন, উপজেলায় এবার ২১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনায় ধান তোলার কাজ চলছে। পুরুষের পাশে থেকে নারীরা ধান তোলার কাজ করায় দ্রুত ধান ঘরে উঠছে। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে ৯০ শতাংশ জমির ধানকাটা হয়ে গেছে।
জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদের নারী ভাইস চেয়ারম্যান ফারজানা আক্তার বলেন, কৃষি কাজে এখন কৃষকের পাশাপাশি সমানতালে কৃষাণীরা কাজ করছেন। ধান কাটা, মাড়াই, শুকানো ও বস্তাবন্দী করে সংরক্ষণ সব কাজে নারীরা পারদর্শী। হাওর ঘুরে ধান তোলার কাজে নারীদের কর্মচাঞ্চল্যতার আনন্দময় দৃশ্য এখন দৃশ্যমান।
বাংলা নিউজ এনওয়াই-এবিএ