শাল্লা স্বাস্থ্য কল্যাণ কেন্দ্র : কর্মস্থলে না গিয়েও বেতন নিচ্ছেন ভিজিটর
নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ এপ্রিল ২০২১, ১০:০০ অপরাহ্ণনামফলকে লেখা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র। ভেতরে রয়েছে খাট, চেয়ার-টেবিল। ফ্যানও রয়েছে প্রতিটি কক্ষে। এছাড়া চিকিৎসা সরঞ্জামও রয়েছে। কাগজে কলমে একজন মহিলা ভিজিটর দায়িত্বে থাকলেও প্রতিদিনই এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে তালা ঝুলানো থাকে। যেখানে অবহেলীত হাওরপাড়ের রোগীদের চিকিৎসা হওয়ার কথা, সেখানে এখন তালাবদ্ধ রেখে গরু এবং ভেড়ার বসবাসের উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়েছে। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অধীনে প্র্রতিষ্ঠিত ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কল্যাণ কেন্দ্রের চিত্র।
২০০৯ সালে সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার শাল্লা ইউনিয়নে এই স্বাস্থ্য কল্যাণ কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। কথা ছিল প্রতিষ্ঠার পর থেকেই চিকিৎসা পাবেন ইউনিয়বাসী। কিন্তু প্রতিষ্ঠার পর থেকেই নানা দুর্নীতি ও অনিয়মে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে এই প্রতিষ্ঠানটিকে। দীর্ঘ ১২ বছর ধরে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে সামান্য জ্বর, সর্দি ও কাশি নিয়ে উপজেলা সদরে চিকিৎসা নিতে আসতে হচ্ছে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ। অথচ এই স্বাস্থ্য কল্যাণ কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর আশার সঞ্জার জেগেছিল ইউনিয়নবাসীর। কাগজে-কলমে সপ্তাহের সাতদিন খোলা দেখানো হয়।
কিন্তু বাস্তবে মাসে একবারও খোলা পাওয়া যায় শাল্লা ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি। সোমবার বেলা ১২টায় সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, সেখানে তালা ঝুলছে। কথা হয় সাবেক মেম্বার আব্দুল আউয়াল চৌধুরী উপহারের সাথে। তিনি জানান, নামে মাত্র এই স্বাস্থ্য কল্যাণ কেন্দ্রটি। চিকিৎসা সেবা বলতে শাল্লা ইউনিয়নবাসী কিছুই পায়নি। এই ভবনটি এখন কালের স্বাক্ষী। কার্যক্রম বলতে কিছুই নেই। দু’মাসে এক ভিজিটর ম্যাডাম ঝুমা রানী আসলেও শুধু তালা খুলে আর লাগান। এটুকুতেই সীমাবদ্ধ। মানুষকে সেবা দেওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই তাদের। আরেক বাসিন্দা মিন্টু চৌধুরী জানান, আমরা জানি ঝুমা রানী রায় নামে একজন ভিজিটর রয়েছেন। কিন্তু তিন চার মাস হয়ে যায় উনাকে একদিনও অফিসে দেখিনি। অথচ কাগজে কলমে হাজিরা দেখাইয়া বেতন তুলছেন প্রতিমাসে।
উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসের সহকারি ননী গোপাল সরকার জানান, ভিজিটরের চিকিৎসা সরঞ্জামসহ সকল কিছু আছে। ঝুমা রানী রায় নামে একজন মহিলা ভিজিটরও দায়িত্বে রয়েছেন। তবে এখানে অন্যান্য পদবীর লোকবল সংকট রয়েছে। আর এই মহিলা হবিবপুর ও শাল্লা ইউনিয়নের দায়িত্বে রয়েছেন। আর আমাদের মাসিক সভায় একটি সিদ্ধান্ত হয়েছিল সপ্তাহে তিনদিন শাল্লা ইউনিয়নে কাজ করার জন্য। আর এখন হয়তো করোনার জন্য কর্মস্থলে যেতে পারেনি। আর হাজিরার খাতায় স্বাক্ষর দেখেইতো বোঝা যাবে কয়দিন কর্মস্থলে গেছেন।
এদিকে স্থানীয়রা বলছেন দুই, তিন মাসেও একবার আসেনি। আর হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দিয়ে নিয়মিত বেতন তুলছেন তিনি। শাল্লা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি জামান চৌধুরী জানান, মহিলা ভিজিটর ঝুমা রানী রায় একদিনও কর্মস্থলে ডিউটি করতে যাননি। এলাকাবাসী বারবার আমাকে অভিযোগ করছে। অথচ আমি উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মাসিক সভায় এই বিষয়ে কথা বলেছি। এমনকি আমি এটাও বলেছি অন্তত দুই-একদিন এই এলাকায় সময় দিলে ইউনিয়নবাসী কিছুটা উপকৃত হত। কিন্তু আমার এসব কথা তাদের কোনো কর্ণপাতই হয়নি। এই মহিলা কর্মস্থলে না গিয়েই হাজিরা দেখিয়ে বেতন তুলছেন প্রতিমাসে।
ঝুমা রানী রায়ের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি অতিরিক্ত দায়িত্বে আছি। সপ্তাহে ২দিন যাওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। আর আমি অন্য কর্মস্থলে যাচ্ছি। আমার মুল দায়িত্ব হবিবপুর ইউনিয়নে।
এই বিষয়ে অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা শাল্লা উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কৃষ্ণ চক্রবর্তী বলেন, সুযোগ সুবিধা না থাকায় এই এলাকায় কোনো ভিজিটর অথবা মেডিকেল অ্যাসিস্টেন্ট কর্মস্থলে থাকতে চায় না। তবে এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতেই আগামী এক মাসের মধ্যে স্বাস্থ্য কল্যাণ কেন্দ্রে ভিজিটর দেয়া হবে বলে তিনি জানান। দায়িত্বে থাকা ঝুমা রানীর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাজিরা খাতা দেখলেই আমরা বুঝতে পারবো কয়দিন কর্মস্থলে যান। এছাড়া আর কিছু বলতে চান না তিনি।