ধানের দাম কম, সুনামগঞ্জে কৃষকদের মাথায় হাত
নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ এপ্রিল ২০২১, ৫:১১ অপরাহ্ণএবারের ফসলে প্রকৃতির থাবা অনেকটাই ভিন্ন। প্রথম ধাপে শিলাবৃষ্টিতে ফসলের ক্ষতি হয়েছে। পরে গরম বাতাসে পুড়ে গেছে ধান। চোখের সামনে নিমিষেই সবুজ প্রান্তর বিবর্ণ রঙে রূপ নিয়েছে। এমন ঘটনা আগে কখনো এত ভয়াবহ হয়নি। কৃষি বিভাগের হিসাবে হাওরে ২০ ভাগের বেশি ধান নষ্ট হয়েছে। মাথায় হাত পড়েছে কৃষকের। তবে সকল ভয়কে উপেক্ষা করে ধান কাটা শেষ করে কৃষকেরা ঘরে ধান তুলেছেন। আর এই নতুন ধানগুলো দেশের বিভিন্ন মোকামগুলোতে যাচ্ছে। কিন্তু গত এক সপ্তাহ ধরে ধানের দাম দ্রুত কমে যাওয়ায় হাওরপাড়ের কৃষকরা দুশ্চিন্তায় ভুগছেন।
মাথায় ঋনের বোঝা সামনে ঈদ সকল আয়রোজগারও বন্ধ। তাই ধান বিক্রি করেই কৃষকদের জীবিকা নির্বাহের সহায়। কিন্তু ধানের দাম এমন কম থাকলে কৃষকদের উৎপাদন খরচও তুলতে পারবে না। সরকার ধান সংগ্রহের মূল্য ঠিক করে দিয়েছেন। আর এখন তা অর্ধেক দামে ধান বিক্রি হচ্ছে। দেখা গেল শাল্লা উপজেলার আনন্দপুর গ্রামের কৃষক দেবাশিষ রায় ধান বিক্রি করতে না পেরে মন খারাপ করে বসে আছেন। কথা হয় তাঁর সাথে। তিনি জানান ৭০০ টাকা মণ ধরে ১০০ মণ মোটা শুকনো ধান বিক্রি করেছেন ভ্রাম্যমান ব্যবসায়ীর (বেপারি) কাছে। হঠাৎ ধানের দাম কমানোর কথা বললে ধান বিক্রি বন্ধ করে দেন তিনি। পরে সেই ধান ৫৪০ টাকা ধরে বিক্রি করেন দেবাশিষ।
শাল্লা উপজেলায় দানের উৎপাদন বেশি। যার ফলে এখানকার ভ্রাম্যমান ব্যবসায়ীরা নৌপথে ভৈরবের সবচেয়ে বড় মোকামগুলোতে নিয়ে যান। প্রতি নৌকায় ২০/ ২৫ হাজার মণ ধান নিয়ে যাওয়া হয়। কথা হয়, ভ্রাম্যমান ব্যবসায়ী বিল্লাল মিয়ার সাথে তিনি জানান, ধানের বাজার কমে যাওয়ায় কৃষকরা ধান বিক্রি করতে আগ্রহী কম। আগে দু’দিনে নৌকা বোঝাই করতে পারতাম। আর এখন ১০ দিনেও নৌকা বোঝাই হয় না। তাই আমরাও ধান কিনতে বিপাকে পড়েছি। ধামপুর গ্রামের কৃষক আমজাদ মিয়া জানান, সরকার ১ হাজার ৪০ টাকা মণ নির্ধারণ করলেও তাদের বেচতে হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকায়। ক্ষতি কাটিয়েও হাওরে বোরোর ফলন ভাল হয়েছে।
করোনা পরিস্থিতি ও শ্রমিক সংকটের মধ্যে দিয়েও সময়মতো ধান কেটে ঘরে তুলেছেন হাওরপাড়ের কৃষক। তবে কষ্টের ঘামে ফলানো ধানের দাম নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারছেন না কৃষক। সরকার এবছর ১ হাজার ৪০ টাকা মণ দরে বোরো ধান সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। লটারির মাধ্যমে কৃষক নির্বাচন করে সংগ্রহ করা হবে এই ধান। ২৬ এপ্রিল থেকে এই কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এখনো শাল্লায় এই কার্যক্রম শুরু হয়নি। কিন্তু ধান কাটার শ্রমিকের মজুরি আর ঋণের টাকা পরিশোধের তাগাদারের দায়ে পাইকারি বাজারে ধান বিক্রি করছেন কৃষক। সেখানে দাম মিলছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নুরুল হক বলেছেন, হাওরে এখনো ধান কাটা চলছে। কৃষকেরা মাঠে। তাঁদের সুবিধার্থে ক্রয় কার্যক্রম কিছুদিন পেছানো হয়েছে। আশা করছেন সপ্তাহ খানেক মধ্যে কৃষক নির্বাচনের কাজ শেষ হবে। তিনি আরো বলেন তালিকা অনুযায়ী কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করা হবে। এখানে কোন স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতি করার সুযোগ নাই। যারা লটারির মাধ্যমে সিলেক্ট হবে তারাই ধান দিতে পারবেন।
উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার উপজেলায় ২২ হাজার হেক্টর ধানের আবাদ হয়েছে। তবে ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৭৯৭ মেট্রিক টন। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত হাওরে ৬৬.৫১ শতাংশ জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে। বিশ্বজিত দাস, হোসেন মিয়া, দিলোয়ার হোসেনসহ বেশ কয়েকজন কৃষক জানান, করোনার প্রভাবে এবার স্থানীয় বাজারগুলোতে ব্যবসায়ীরাও ধান কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। সরকারিভাবে দ্রুত ধান ক্রয় শুরু না হলে প্রান্তিক কৃষকেরা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে কম মূল্যে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হবেন। আর এই কম দামে ধান বিক্রি করলে কৃষকের লোকসান হবে। সরকার পুরোদমে কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনলে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়ত।