৫১টি জলমহালের টাংগুয়ার হাওর : দিনমান যেখানে খেলা চলে প্রকৃতির
নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ এপ্রিল ২০২১, ১২:২৫ পূর্বাহ্ণবাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব প্রান্তের, সুনামগঞ্জ জেলার (তাহিরপুর ও ধর্মপাশা) উপজেলার ১৮টি মৌজায় ৫১টি জলমহালের সমন্বয়ে ৯হাজার ৭শত ২৭ হেক্টর ভুমি নিয়ে গড়ে উঠেছে টাংগুয়ার। যেন আলাদা এক ভুবন প্রকৃতির। নিজ চোখে না দেখলে, বিশ্বাসে বাড়বে দুর্বলতা। এ যে প্রকৃতির অপূর্ব খেলা । রয়েছে মিঠা পানির মাছ,খরছ হিজল গাছের সারি, পাখির কলরবে কাঁটে সারা বেলা। পরিযায়ী পাখি আছে আনা -গোনা। রয়েছে মেঘালয় পাহাড় দাড়িয়ে’ স্রষ্টার এই অপূর্ব রহস্যের বিচার করতে করতে কেটে যাবে আপনার বেলা। সব মিলিয়ে রয়েছে, টাংগুয়ার হাওরে প্রকৃতির এক অপূর্ব মেল বন্ধন।
টাংগুয়ার প্রবেশ পথেই দাড়িয়ে আছে’ হিজল, খরছের সারি, দেখলে মনে হবে, এ যেন কে সাজিয়ে রেখেছে’ অতিথিকে জানাতে অভিবাদন । প্রকৃতির আপন গতিতে বেড়ে উঠছে হিজল খরছের সারি, মানুষের ছোঁয়া লাগেনি, নিয়তি গুছিয়ে রেখেছেন তাঁরা সৃষ্টি ।রয়েছে লতপাতাজাতীয় জলজ উদ্ভিদ, দেখলে মনে হবে’ পানির নিচে রয়েছে সবুজের স্বর্গ রাজ্য। এখানে বিভিন্ন প্রজাতির ২৪টি জলজ উদ্ভিদ সৃষ্টি হয়ে থাকে ।
হাওর পাড়ের কলম যোদ্ধা, টাংগুয়ার হাওর গ্রাম উন্নয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারন সম্পাদক আহমদ কবির বলেন, গ্রাম ছাড়া,রাঙামাটির দেশে আমার মন ভুলায় রে’ হাওরের সৌন্দর্যে বিভোর হয়ে,পাখির কলরবে মুখরিত, রাখাল বাঁজায় বাঁশি, মৎসের খেলা, সব মিলিয়ে প্রকৃতির সৌন্দর্যে ভোগ করেই এখানে কাটে হাওরবাসীর বারোমাস।
তীর ঘেঁসে রয়েছে মেঘালয় পাহাড়’ এ যে সৌন্দর্যের সমাহার। যেখানে ২৪টি ঝর্ণাধারা প্রবাহিত হয়। টাংগুয়ার হাওরে’ সন্ধ্যার পড়ে যখন পাহাড়ের ছায়া’ হাওরের জলে পড়ে রঙিন হয়ে যায়। বিভিন্ন রঙ দুইয়ের মিশ্রণ এ জলে। অপূর্ব খেলায় মেতে ওঠে টাংগুয়ার প্রকৃতি।
টাংগুয়ার হাওর মৎসের জন্য খ্যাত । এখানে ২০০ প্রজাতির মাছ ছিল” কিন্তু কালের বিবর্তনে অনেক প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এখন উল্লেখ যোগ্য মাছ রয়েছে, বাইম, গজার, টৈংরা গুলশা,তারা বাইম,তিতনা, গোতুম ,পুঁটি, বোয়াল, রুই ,কাতলা, কালা বাউশসহ আরো বিভিন্ন প্রজাতি মাছ রয়েছে। জৈষ্ট মাসে মা-মাছের প্রজনন বিস্তারের জন্য উল্লেখযোগ্য। যার জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেছে টাংগুয়ার হাওর।
হাওরে, জীববৈচিত্র নল, ঘাগরা, চাললিয়াবন, ঢেউয়ে তালে তালে যখন নড়ে, তখন মনে হয়, অতিথিকে করতালি দিতে মেতে উঠেছে। এমন দৃশ্য’ টাংগুয়ার হাওরের প্রকৃতিকে মাতিয়ে রেখেছে সর্বক্ষণ ।
এখানে ৫১ প্রজাতির পাখি বিচরণ করে । এছাড়া ৬ প্রজাতির স্তন্যপায়ী উভয়চরে ভরপুর টাংগুয়ার হাওর।যে কারণে প্রকৃতির সৌন্দর্য আরও ফুটে উঠেছে । দেশীয় পাখি পানককৌরির (পানি কাউরি) খাবারের খোঁজে এক বিল থেকে অন্য বিলে গিয়ে মাতিয়ে রেখেছে সর্বক্ষণ। যার কলরবে মুখরিত থাকে সারা বছর। তার বৃষ্টে’ মনে হয়, কে যেন সাজিয়ে রেখেছে, হিজল খরছ গাছে দিয়েছে সাদা রঙ। এক অপূর্ব রূপ ধারণ করেছে টাংগুয়ার হাওর ।
দিনের শুরু থেকেই অতিথি পাখির আগমন ঘটে। সুদূর সাইবেরিয়া,চিন মোঙ্গোলিয়া অস্ট্রিয়ার সহ শীত প্রধান দেশ থেকে ছুটে আসা আত্মরক্ষার জন্য।সেই পাখির কলরবে মুখরিত থাকে পুরো এলাকা। পাখির জাঁক এক সাথে যখন উড়ে যায় মনে হয় শত শত বিমান হামলা করেছে অন্যায় কারী কাউকে । দেখতে বেশ সুন্দর লাগে। এই পাখিগুলোর বৃষ্টে (বিট) হয়ে যায় মৎসের খাবার। অন্য দিগে অতিরিক্ত পোকা মাখর হয়ে গেলে তা খেয়ে পরিবেশর ভারসাম্য রক্ষা করতে সহযোগীতা করে অতিথি পাখি । পাখি গুলোর মধ্যে রয়েছে ল্যানজা, খোঁড়া, কালা, বইধর ইত্যাদি।
এসব সৌন্দর্য সংরক্ষণের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ আনসার বাহিনী। অন্যতম উদ্দেশ্য হলো দেশের মৎস্যসম্পদ বৃদ্ধি করা। টাঙ্গুয়ার হাওরে মা মাছ নিরাপদে ডিম ছাড়বে আর বর্ষাকালে এই মাছগুলো ছড়িয়ে পড়বে দেশের অন্যান্য নদীনালা ও খালবিলে। সেজন্য টাঙ্গুয়ার হাওরের ইজারা প্রথা বিলোপ করে মাছের অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হয়।