বংশ বিস্তারের সময় তাহিরপুরের হাওরে মৎস নিধনের প্রস্তুতি
নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ মে ২০২১, ১:৩৬ পূর্বাহ্ণনদীমাতৃক বাংলাদেশে রয়েছে অনেক হাওর বাওর। সেখানে উন্মুক্ত ভাবে মৎস বিচরণ করতে পারে’ বলেই তাকে অভয়ারণ্য ভূমি বলা হয় । কিন্তু হাওর পাড়ের দরিদ্র মৎস জীবীদের মধ্যে কিছু অসচেতন থাকায়’ প্রজনন মৌসুমেই’ মৎস শিকারে বেপরোয়া হয়ে থাকেন তারা। যার কারণে অনেক প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির পথে। সচেতনতার রয়েছে অভাব, রয়েছে ক্ষুধার জ্বালা। দিশেহারা হয়ে ছুটে চলে প্রজনন মৌসুমে। তাঁদেরকে সচেতনতা বৃদ্ধি করে বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। এমনটা জানালেন সুশীল সমাজের লোকজন। অন্যথায় সুনামগঞ্জের সুনাম”অতল গহীনে হাড়িয়ে যাবে।
এদের সাথে জড়িত রয়েছে, কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষ, অনৈতিক আহরণের জন্য এদেরকে, ব্যবহার করে। যখন ডিম দেবে ঠিক তখনই মাছ শিকারের জন্য বেপরোয়া হয়ে উঠে কিছু অসৎ মৎস্য জীবী।
প্রজনন মৌসুমে ইলিশ মাছ নিধন বন্ধে আইন প্রয়োগ করা হয়। একইভাবে এই আইন সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার হাওর বাওরে দেশীয় প্রজাতির মাছ রক্ষায় প্রয়োগ করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন অভিজ্ঞমহল। এতে করে দেশীয় মাছ বিলুপ্ত না হয়ে এক সময় দেশের মানুষের আমিষের চাহিদা পূর্ণ করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করেন তাঁরা।
সামনেই দেশীয় মাছের ডিম দেওয়ার সময়।নদীতে জোয়ার আসলেই মা মাছের অভয়ারণ্য হিসেবে খ্যাত টাঙ্গুয়ার হাওর সহ বিভিন্ন হাওরের বাঁধ ভেঙে স্রোতের সাথে জোয়ারের নতুন পানি হাওরে প্রবেশ করলেই, ডিম দেওয়ার জন্য স্রোতের অপরদিকে মা মাছ ছোটে আসে ঝাঁকে ঝাঁকে।তখনই শুরু হয় স্থানীয়দের ভাষায় (উইজ্যা)।আর এই উইজ্যা কে কেন্দ্র করে এ অঞ্চলের কিছু অসৎ জেলেরা,মা মাছ নিধনের জন্য বিভিন্নভাবে প্রস্তুত নিচ্ছে।
জানাযায় দেশীয় মাছের প্রজনন মৌসুমে নদীতে জোয়ার আসলেই,হাওরের বাঁধ ভেঙে স্রোতের সাথে জোয়ারের পানি হাওরে প্রবেশ করলেই স্রোতের অপরদিকে ডিমছাড়ার জন্য ছুটে আসে মা মাছ।এতে করে হাওর সংলগ্ন পাটলাই,ও বৌলাই নদী দিয়ে প্রচুর পরিমাণ ডিমওয়ালা মাছ ঝাঁকে ঝাঁকে চলে আসে,এছাড়াও টাঙ্গুয়ার হাওরের ছোট কাট খাল-বিলে এসব মাছ ছোটে চলে ঝাঁকে ঝাঁকে। বিস্তির্ণ হাওরাঞ্চলে নদী ও খাল-বিলের পার ঘেষে ওতপেতে থাকে অসৎ মৎস্য শিকারীরা।
প্রজনন মৌসুমে মা মাছ নিধনে নিষেধাজ্ঞার নিয়মনীতি থাকলেও,এক শ্রেণির অসৎ মৎস্য শিকারীদের প্রস্তুতির তৎপরতায় বুঝা যাচ্ছে এ বছরেও প্রজনন মৌসুমে মা মাছ নিধনের নিষেধাজ্ঞার নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে,মা মাছ নিধনে ঝাঁপিয়ে পড়বে,নদী ও হাওরের বুকে। তারা অল্পদিনে অনেক টাকা মুনাফার আশায় আগে থেকেই পুরানো নৌকা মেরামত করা ও নতুন নৌকা তৈরি করছে এবং কারেন্ট জাল বানরীজাল তৈরি সহ বিভিন্ন ধরনের মাছ ধরার সরঞ্জাম তৈরি করে প্রস্তুত করে রাখছে,মা মাছ নিধনের জন্য। এছাড়াও টাঙ্গুয়ার হাওরের বেরবেরিয়া,হাতিরগাদা,চটানিয়া রৌহা বিল সহ বিভিন্ন বিলে মাটি দিয়ে বাঁধ দিয়ে রাখা হয়েছে,হাওরের জোয়ারের পানি প্রবেশ করলেই,ছাই দিয়ে মা মাছ ধরার জন্য।এছাড়াও নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল সংগ্রহের জন্য উপজেলার তাহিরপুর সদর বাজার,বাদাঘাট বাজার,পাশ্ববর্তী ধর্মপাশা উপজেলার মধ্যনগর বাজার সহ বিভিন্ন বাজারে জেলেদের চলছে আনাগোনা।
স্থানীয় সচেতন মহল জানান হাটবাজারে নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল যে কোন মূল্যে বিক্রি বন্ধ করা সহ,এই প্রজনন মৌসুমে টাঙ্গুয়ার হাওরের নজরখালী খাল,থেকে সুলেমানপুর,এবং একই খাল থেকে শ্রীপুর বাজার ও টাঙ্গুয়ার হাওরের বিভিন্ন খাল-বিলে,এসব অসৎ মৎস্য শিকারীদের মা মাছ নিধন থেকে বিরত রাখতে হাওর ও নদীতে দিনরাত কমিউনিটি গার্ডদের সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহলের ব্যবস্থা করা ও দ্রুতগতি সম্পন্ন নৌযান নিয়ে,টাঙ্গুয়ার হাওরের বাঁধ ভাঙার সাথে সাথেই সপ্তাহব্যাপী নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন বলে বিজ্ঞ মহল মনে করেন।তারা মনে করেন এই প্রজনন মৌসুমে দেশীয় মাছ রক্ষায়, সরকারের পাশাপাশি স্থানীয় শিক্ষিত সচেতন মহল কে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।এলাকার প্রতিটি গ্রামের শিক্ষিত মানুষদের এগিয়ে আসতে হবে। এলাকার প্রতিটি গ্রামের শিক্ষিত মানুষগুলো এগিয়ে আসলেই কেবল দেশীয় মাছ রক্ষা করা যেতে পারে। পরিবারের শিক্ষিত সচেতন ব্যাক্তিগন যদি এই মাছের প্রজনন বিষয়ে পরিবার অথবা গ্রামের অন্যান্য মানুষদের বোঝায় তাহলেই মা মাছ নিধন রোদে অনেকটা ভূমিকা রাখা হবে বলে উনারা মনে করেন। তাই যে যার অবস্থান থেকে নিজ দায়িত্বে মাছের এই প্রজনন মৌসুমে মা মাছ রক্ষা করার জন্য এখনই উপযুক্ত সময়।
এ ব্যাপারে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদ্মাসন সিংহ খুব কঠোর হুশিয়ারি দিয়ে বলেন দেশীয় মাছের উৎপাদন বাড়াতে,মাছের প্রজনন মৌসুমে,মা মাছ নিধন বন্ধ করতে প্রশাসনের পক্ষ হতে মাইকিং করে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করিলে, আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান ।