সৌদিতে নির্যাতন; দেশে ফেরার আকুতি হবিগঞ্জের শিল্পীর

নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ আগস্ট ২০২২, ৮:০০ অপরাহ্ণ
সৌদি আরবে মালিক ও তার পরিবারের সদস্যদের পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফেরার আকুতি জানিয়েছেন হবিগঞ্জের এক তরুণী। ইতোমধ্যে কান্নাজড়িত কন্ঠে তার পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলার সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। নির্যাতনে শিকার সেই তরুণীর নাম শিল্পী আক্তার (২৫)। জেলার চুনারুঘাট উপজেলার আহম্মদাবাদ ইউনিয়নের তৈইগাঁও গ্রামের আব্দুল মজিদের মেয়ে তিনি।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, ওই তরুণী কান্না জড়িত কন্ঠে তার মায়ের কাছে বলছে, ‘তুমরার কাছে আমি ভিক্ষা চাই। আমারে দেশে ফিরাইয়া নেও। তিন বছর ধইরা আমারে আটকাইয়া রাখছে। আমারে ধরে-মারে। মালিকে মারে, মালিকের পুলা-পুইরে মারে। আমারে খানি দেয় না, একবার দিলে- আরেকবার দেয় না। ঘরের ভেতরে তালা মাইরা তরাকে। দেশে ফিরাইয়া না নিলে আমারে মাইরালাইব, লাশ কইরা বাংলাদেশে পাঠাইব।’
শিল্পীর মা নূরচাঁন বিবি জানান, ২০১৯ সালের এপ্রিলে সৌদি আরব যান শিল্পী আক্তার। সেখানে যাওয়ার পর একটি বাসায় গৃহকর্মীর চাকরি নেন তিনি। বাসাটি সৌদি আরবের কোন এলাকায় সেটি নিশ্চিত নন তিনি। সেখানে যাওয়ার পরই তার ওপর চলে নির্যাতন। কাজে ছোটখাট ভুল হলেই মারধরের শিকার হয় শিল্পী। প্রতিনিয়ত তাকে শারীরিক নির্যাতন করেন বাসার মালিক, ছেলে ও মেয়েরা।
প্রথমে মা-বাবা ও অস্বচ্ছল পরিবারের কথা চিন্তা করে সব নির্যাতন নিরবে সহ্য করেন যান শিল্পী। কথা ছিল দুই বছর সেখানে থাকার পর ২০২১ সালের এপ্রিলে তাকে দেশে পাঠিয়ে দেবে। কিন্তু দুই বছর অতিক্রম হলেও তাকে দেশে পাঠানো হয়নি। উল্টো ভিসার মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। দেশে আসার কথা বললে শিল্পীর উপর নির্যাতনের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনে বর্তমানে শিল্পী অসুস্থ্য হয়ে পরেছে। মা বাবার সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলতে চাইলেও কথা বলতে দেয়া হয় না।
নূরচাঁন বিবি বলেন, ‘আমি আমার মেয়েকে ফিরে চাই। কিন্তু তারা আমার মেয়েকে দিচ্ছে না। ট্রাভেলসের লোকেরাও আমার মেয়েকে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করছে না। তাই বাংলাদেশ সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ আমার মেয়েকে দেশে ফিরিয়ে আনার।’
শিল্পীর বাবা আব্দুল মজিদ বলেন, ‘সংসারে অভাবের কারণে মেয়েকে সৌদিআরব পাঠিয়েছিলাম। এখন আমার মেয়ে খুব কষ্টে আছে। আমি আমার মেয়েকে ফিরে চাই।’ তিনি বলেন, ঢাকার পুরানাপল্টন এলাকার ‘৪ সাইট ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড’র মাধ্যমে সৌদিআরব গিয়েছিলেন শিল্পী।
প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক খালেদ হোসাইনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা মেয়েটিকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ে এক মাস আগে অভিযোগ দিয়েছি। আশা করি দ্রুত তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে পারব।’
এ ব্যাপারে চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিদ্ধার্থ ভৌমিক বলেন, ‘আমি বিষয়টি শুনেছি। তবে এখনও পরিবারের পক্ষ থেকে কোন অভিযোগ পাইনি। তারা আমাকে লিখিত অভিযোগ দিলে দুতাবাসের মাধ্যমে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করব।