অধ্যাপক জাকিরের টুঙ্গীপাড়ায় সফর: মিডিয়া কর্মী নিয়ে তোলপাড়!
নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ আগস্ট ২০২২, ১২:১৫ পূর্বাহ্ণদলের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্যদের নিয়ে টুঙ্গীপাড়ায় সফরে গেলেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন। বৃহস্পতিবার (২৫ আগষ্ট) সিলেট থেকে লাইটেস যোগে তিনি যাত্রা শুরু করেন। এর আগে নিজের ফেসবুক আইডি থেকে সফরে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি লিখেন, ‘সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্যদের নিয়ে জাতির জনকের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ার উদ্দেশ্যে আমরা রওয়ানা হলাম। নিরাপদ পথযাত্রার জন্য সকলের দোয়া কামনা করছি, আমীন।’
মহানগর সেক্রেটারীর নের্তৃত্বে টুঙ্গিপাড়ায় সফরসঙ্গী টিমের সাথে রয়েছেন একজন সংবাদ কর্মীও। সংবাদ কর্মীর নাম আবদুল মুহিত দিদার। মূলত মিডিয়াকর্মী হিসেবে আবদুল মুহিত দিদার সফরসঙ্গী থাকার পর শুরু হয়ে নানা সমালোচনা। দলীয় নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, বিষয়টি অধ্যাপক সাহেব ভালো করে জেনে এবং বোঝেই করেছেন। কারণ, সিলেটে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কোনো সাংবাদিক নেই, এমনটি ভেবেই হয়তো তিনি জামায়াত পরিবারের এই ব্যক্তিকেই মিডিয়াকর্মী হিসেবে সফর তালিকায় যুক্ত করেছেন।
জানাগেছে, আবদুল মুহিত দিদারের ঘণিষ্ট আত্মীয় মুশফিকুল ফজল আনসারী। যিনি সরকার এবং আওয়ামী লীগ নিয়ে দেশে-বিদেশে যিনি বিভিন্ন টকশো এবং ইউটিউভে সরকার বিরোধী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাছাড়া আবদুল মুহিত দিদারসহ তাঁর পুরো পরিবার জামায়াত-শিবির ঘরানার বলে প্রচার রয়েছে সিলেটে। বিভিন্ন সময়ে সংগঠনের বিভিন্ন সহযোগি সংগঠনের সাথেও জড়িত ছিলেন সক্রিয়ভাবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহানগর আওয়ামী লীগের জনৈক নেতা বলেন, বিয়ানীবাজারেরর কুখ্যাত রাজাকার পরিবারের সন্তান এবং ব্যবসায়ী নেতার গুলশানস্থ বাসায়ও সফরসঙ্গী টিম যাত্রা বিরতি করেন।
এদিকে, জামায়াত-শিবির ঘণিষ্ট পরিবার সদস্য এবং আওয়ামী লীগ বিরোধী মুশফিকুল ফজল আনসারীর ভায়রা ভাইকে সফরসঙ্গী করায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে নানা প্রতিক্রিয়া। ইতোমধ্যে দলীয় নেতাকর্মীরাও বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে শুরু করেছেন। বিষয়টিকে দু:খজনক এবং শোকের মাসে দলের সাথে সাংঘর্ষিক হিসেবে বিবেচনা করছেন তাঁরা।
সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী রঞ্জন দে নিজ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে ফেসবুকে লিখেন, ‘(আমাদের সিলেটে কি সাংবাদিকের এতই অভাব) ‘টুঙ্গিপাড়া সফরে যাচ্ছেন,দুঃখের বিষয় হচ্ছে উনারা যাকে সাংবাদিক হিসেবে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি জাতিসংঘে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে একের পর এক নালিশ প্রদানকারী মুশফিকুল ফজল আনসারীর আপন ভায়রা ভাই। আপনার কাছ থেকে এটা আশা করাই যায় মাননীয় শিক্ষক মহোদয়।’
মহানগর কমিটির সাবেক সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক ও বর্তমান সদস্য প্রিন্স সদরুজ্জামান চৌধুরী বলেন, খবরটি খুবই উদ্বেগজনক! আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এরকম একজন ব্যক্তিকে নিয়ে টুঙ্গিপাড়া সফর করলেন যার পুরো পরিবার জামায়াত ঘড়ানার রাজনীতির সাথে জড়িত । মহানগর আওয়ামী লীগের একজন হিসেবে এটা আমাদের জন্য বিব্রতকর। প্রতিক্রিয়াশীল চক্র এভাবেই আওয়ামী লীগের কাঁদে ভর করে নিজেদেরকে পূনর্বাসন করছে। যা রীতিমত শংকার বিষয়!
মহানগর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সিসিকের কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ বলেন, আবদুল মুহিত দিদার সম্পর্কে আমার কোনো তথ্য জানা নেই। যদি তিনি জামায়াত রাজনীতিভুক্ত পরিবারের শুভাকাঙ্খি হয়ে থাকেন, তবে দলের সাধারণ সম্পাদকের সফরসঙ্গী তালিকায় নামটি থাকা খুবই দু:খজনক। তিনি বলেন, দলের উপদেষ্টা মন্ডলীকে নিয়ে এ রকম সফর যাত্রার বিষয়টি দলীয় ভাবে সিদ্বান্ত হয়ে থাকলে সেটি আমি জানি না। হয়তো আমার অনুপস্থিতিতে অন্যরা সেটি ভালো বলতে পারবে। আর দলীয় সিদ্বান্ত ছাড়া যদি সেটি হয়ে থাকে, তবে আমি সফরটিকে ব্যক্তিগত সফর বলেই ধরে নিব। ব্যক্তিগত সফরে কে কাকে সাথে নিলেন, সেটির দায়ও ব্যক্তির উপরে বর্তায়।’
দলের সহ-সভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ বলেন, বিষয়টি আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কল্যাণে অবগত হয়েছি। এ বিষয়ে বিভিন্নজন আমাকে নানা প্রশ্ন করেছে। আমি বলেছি, বিষয়টি নি:সন্দেহে লজ্জাজনক। সফরসঙ্গী হিসেবে মিডিয়া কর্মী হিসেবে কাউকে নিতে চাইলে সিলেটে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শত শত সংবাদকর্মী রয়েছেন। তাদের না নিয়ে একটি চিহ্নিত পরিবারের সদস্যদেও সফরসঙ্গী তালিকায় রাখা একজন দায়িত্বশীল আওয়ামী লীগারের অবশ্যই সমিচীন নয়।
অধ্যাপক জাকির হোসেনের বক্তব্য জানতে সেলফোনে কল দিলেও মোবাইল বন্ধ থাকায় মন্তব্য আদায় করা সম্ভব হয় নি।