দর্পণ কবীরের কবিতা ‘চমকে যাওয়ার কিছু নেই’
নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ এপ্রিল ২০২৩, ৫:৪৫ অপরাহ্ণভক্তদের ভিড়ে আমাকে যখন তুমি অটোগ্রাফ দিচ্ছিলে
দু’চোখের দৃষ্টি বিনিময় হল, অথচ তোমার চোখ চমকালো না!
‘কেমন আছো?’ জানতে চাইলে এমনভাবে তাকালে যেন
তোমার চোখে পৃথিবীর অষ্টম বিস্ময় ছড়িয়ে যাচ্ছে।
আমাকে চিনতে না পারার অভিনয় যখন করছিলে আমি
ভেবে নিচ্ছিলাম খ্যাতির কতটা শীর্ষে চড়লে এমন অভিনয় করতে
হয়। আমাকে মনে রাখতে হবে এমন দায় তোমার
আছে-এমনটা বলছি না, তবে একেবারেই চিনতে না পারার মত
অপাংক্তেয় হয়েছি কি? সবার জীবনে অতীতের আলো-আঁধারের গল্প
থাকে, ঐ গল্পকে মুছে ফেলা যায়? কোন প্রশ্ন করিনি
আমি, বিস্ময় ও বিষাদ সামলে রেখে মনে মনে বলেছি,
আরো খ্যাতিমান হও, তোমার মঙ্গল হোক।
তুমি ভক্তদের ভিড়ে যখন ডুবে যাচ্ছিলে আমি ভাবছিলাম
তোমার সঙ্গে আমার প্রথম দেখার দিনটির কথা।
বাগাট্টা হওয়া ঘুড়ি নিতে তুমি আমাদের বাড়ির ছাদে উঠে
এসেছিলে। মনে আছে? আমি ঘুড়িটি দিতে চাইছিলাম না বলে
তুমি আমার চুলের মুঠি ধরে হ্যাচকা টানে ফেলে
দিয়েছিলে মেঝেতে, সেদিন আমার কিশোরী শরীর যতটা
আঘাত সহ্য করেছিল, ততটা হৃদয়ে অনুভব করেছিল
অচেনা অনুরাগের মদিরতা। এরপর থেকে আমাদের
দেখা হওয়ার নানা ঘটনাগুলো কি আখ্যানের
জলছবি হয়নি? তোমার কৈশোর থেকে তারুণ্যের দিনগুলোতে
আমি কি আলোয় রাঙা আলপনা ছিলাম না?
তুমি অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পরীক্ষার সময় আমার কাছে
বেলী ফুলের মালা চাইলে যখন আমি এক আঁধারময় ভোরে
চুপিচুপি হাজির হয়েছিলাম তোমার পড়ার রুমে। সেই
ভোরে কী করেছিলে মনে আছে? কালবৈশাখী ঝড় হয়ে আমাকে
লন্ডভন্ড করে দিয়েছিলে! আমি কি কোনদিন তোমার কাছে
জানতে চেয়েছি কেন সেদিন আমার দু’ঠোঁটের অধিকার নিয়েছিলে?
পাশের বাড়ির দস্যি ছেলেটা দিনদিন ডাকাত হয়ে গেল
আর আমি হয়ে গেলাম যেন পূজার থালার রক্তজবা ফুল। আবার
ছেলেটি একদিন দেশান্তরী হল যখন, আমি হলাম অচেনা
পথফুল! জানি, পথের ফুল পিষ্ট হয়, অর্ঘ্য হয় না।
আচ্ছা, বল তো, পুরুষ প্রেমে ব্যর্থ হলে দেবদাস হবার
মহিমা প্রকাশ করে অথচ নারীর ব্যর্থপ্রেমকে মর্যাদা
দিতে চায় না কেন? পার্বতীর ওপর দায় চাপানো দেবদাসরা
কোনদিন নিজের দায়বদ্ধতার কথা ভাবে না কেন?
না, আমাকে চিনতে পারোনি বলে কোন জবাবদিহিতা চাচ্ছি না।
পুরুষ জবর দখলও করতে পারে, জবাবদিহিতাও চাইতে
পারে, নারী প্রবাহমান নদীর মত, বয়ে চলাটাই জানে শুধু!
বীথিকে লুট করে নেয়া সেই ভোরে তোমার দেয়া নামে
যে মাধবী’র জন্ম হয়েছিল, সেই মাধবী আজো
আছে নিজের মধ্যে স্মৃতির রোদ-ছায়ার সাতকাহন সাজিয়ে রেখে।
আবারো যদি কোনদিন দেখা হয়ে যায়, নিঃশঙ্কোচ থেকো,
চমকে যাওয়ার কিছু নেই আমাকে দেখে।