বিভিন্ন দাবিতে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের উদ্যোগে মানববন্ধন

নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ৩১ মে ২০২৩, ১:১৮ পূর্বাহ্ণ
বিভিন্ন দাবিতে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের উদ্যোগে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনের রাস্তায় মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। জনবান্ধব বাজেট চাই, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য কমাও, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ কর, সুহিংসতার রাজনীতি বন্ধ করা-সহ বিভিন্ন দাবিতে সোমবার (৩০ মে) অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের নির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস।
শুরুতে সংগঠনের ঘোষণাপত্র উপস্থাপন করেন যুগ্মসাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট পারভেজ হাসেম। সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক জোবায়দা নাসরিন কনা, ড. সেলু বাসিত. ডা. অসিত বরণ রায়, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ কে আজাদ, জাহিরুল ইসলাম জহির, কেন্দ্রীয় সদস্য শ্রমিক নেতা আব্দুল ওয়াহেদ, নূরুল আমিন, সেলিম রেজা, তৌহিদ রিপন প্রমুখ। মানববন্ধন পরিচালনা করেন অধ্যাপক জাহাঙ্গির আলম সবুজ।
সভায় অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, বাজেট প্রণয়ন করতে হবে তৃণমূল পর্যায় থেকে। ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ আগে বাজেট প্রণয়ন করবে। এর সমষ্টির উপর ভিত্তি করে রাষ্ট্রের বাজেট প্রনিত হবে। আদিবাসী, সংখ্যালঘু, প্রতিবন্ধী ও হিজড়া জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ বরাদ্দ রাখতে হবে।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ বলেন, বাজেট হতে হবে গণমানুষের। কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষের জন্য খাদ্যে ভুর্তুকি দিতে হবে এবং রেশনিং এর ব্যবস্থা করতে হবে।
মানববন্ধনের ঘোষণা পত্রে বলা হয়, এই অর্থ বছরে এমন এক সময়ে বাজেট ঘোষণা হচ্ছে, যখন দেশে চরম মূল্যস্ফীতি এবং আর্থিক সংকট চলছে এবং এই বছরের শেষে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে যাচ্ছে। সরকারকে জাতীয় নির্বাচনকে বিবেচনায় রেখে জনগণের সন্তুষ্টির দিকে গুরুত্ব দিতে হবে, অপরদিকে আই.এম.এফ এর দেয়া শর্তের চাপ মোকাবেলা করতে হবে।
২০২০ সালে কোভিড মহামারীর আর্থ-সামাজিক প্রতিক্রিয়া এবং এটি থেকে ঘুরে না দাঁড়াতেই বিশ্বকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। বিশ^জুড়ে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। ব্যাপক মূল্যস্ফীতি বাংলাদেশের মানুষের জীবনকে সংকটময় করে তুলেছে। সাধারণ মানুষ সঞ্চয় ভেঙ্গে, ঋণ করে, ভোগ ব্যয় কমিয়ে, খাদ্যে আমিষ গ্রহণ বিশেষ করে মাংস, মাছ কিংবা ডিম কমিয়ে টিকে থাকার চেষ্টা করছে।
কোভিড মহামারি ও বৈশি^ক মন্দায় বাংলাদেশের কৃষক যদি কৃষিপণ্য উংপাদনে নিজেদের সম্পৃক্ত না রাখতো তাহলে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল থাকতোনা। দেশের অর্থনীতির মূলচালিকা শক্তি কৃষক ও শ্রমজীবী মানুষ। সব ধরনের প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে তারা অর্থনীতির চাকা সচল রাখছেন। কৃষিপণ্যের নায্যমূল্য না পেলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কৃষি পণ্যের দাম বাড়লেও কৃষক লাভবান হয় না, লাভবান হয় মজুদদার ও সিন্ডিকেট। জনগণের দীর্ঘদিনের দাবি সত্তে¡ও বাংলাদেশের কোন সরকারই মজুদদার ও সিন্ডিকেট চক্রকে ভাঙ্গার উদ্যোগ নেয়নি বরং তারা দিন-দিন শক্তিশালী হয়ে পুরো বাজার ব্যবস্থাকেই নিয়ন্ত্রণ করছে। আর্ন্তজাতিক বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মুল্য বৃদ্ধি এবং সেই সঙ্গে দেশে এই দুষ্টু চক্রের প্রভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় সীমার বাইরে। এই পরিস্থিতিতে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের শুল্ক সাময়িকভাবে কমিয়ে, মজুদদার-সিন্ডিকেট দমন ও বাজার মনিটরিং জোরদার করে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ একটি জন দাবি হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকটের একটি বড়ো কারণ প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার। এদেশের শ্রমজীবী মানুষ যারা দেশে-বিদেশে শ্রম দিয়ে দেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করেন, অন্যদিকে এদেশের একটি দুর্নীতিগ্রস্ত এলিট শ্রেণী এই অর্থ বিদেশে পাচার করে বাংলাদেশকে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এযাবৎকালে পাচরকৃত অর্থ ফেরৎ আনার উদ্যোগের কথা শোনা গেলেও এর কোন দৃশ্যমান অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়নি। বাজেট এলেই মানুষ আতঙ্কিত হয়। বাড়তি কর ও মূল্য বৃদ্ধি মানুষের জন্য বাড়তি আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বাংলাদেশে বর্তমানে আদায় করা করের দুই-তৃতীয়াংশ পরোক্ষ কর। উন্নত দেশে প্রত্যক্ষ করের ১০% আসে সম্পদ কর থেকে, যা বাংলাদেশে ১ শতাংশের কম। ধনী-গরীবের বৈষম্য কমাতে সম্পদের ওপর যৈাক্তিক হারে কর আরোপ সময়ের দাবি।
সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক সহিংসতা, অস্থিতিশীলতা ও রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার বৃদ্ধিতে আমরা উদ্বিগ্ন। রাজনৈতিক মতৈক্য না হলে সুশাসন কিংবা গণমুখী বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন কোনটিই সম্ভবপরনয়।
আজকের এই প্রতিবাদী মানববন্ধনে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন নি¤োœাক্ত দাবি জানাচ্ছে:
১. চাল, ডাল, তেল-সহ সকল নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমাতে হবে, মজুদদার-সিন্ডিকেট ভাঙ্গতে হবে;
২. সার, বীজসহ কৃষি উপকরণের দাম কমাতে হবে; কৃষি জমি সেচের জন্য নিরবছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে;
৩. শ্রমজীবি ও নি¤œবিত্তের জন্য খাদ্যে ভর্তুকিপ্রদান ও রেশন সরবরাহ করতে হবে;
৪. শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তাখাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে;
৫. বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা যাবে না, জ¦ালানী তেলের দাম কমাতে হবে।
৬. আদিবাসী, সংখ্যালঘু, প্রতিবন্ধী ও হিজড়া জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ বরাদ্দ রাখতে হবে।