ব্যাংকাসুরেন্স চালু হলে লাখ লাখ বীমা কর্মী কর্মহীন হয়ে পড়বে
বাংলানিউজ এনওয়াই ডেস্ক :
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ জুলাই ২০২৩, ৯:০৩ অপরাহ্ণবীমা কোম্পানির অদক্ষতা, গ্রাহক হয়রানি এবং দুর্নীতির কারণে এ খাতের আস্থা শূন্যের কোটায়। বীমা কোম্পানিগুলোর মালিকরা গ্রাহকের অর্থ আত্মসাৎ করে ফুলে-ফেঁপে উঠেছিল। ফলে সরকার ব্যাংকগুলোকে ‘ব্যাংকাসুরেন্স’ বা বীমাপণ্য বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে। কিন্তু বীমা মালিক ও এজেন্টরা প্রকাশ্য এর বিরোধিতায় নেমেছে।
ইতোমধ্যে ‘ব্যাংকাসুরেন্স’ নীতিমালা অনুমোদন করে গেজেট জারি করেছে সরকার। গত ১৮ জুলাই অর্থ মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনটি জারি করে। এর ফলে এখন গ্রাহকরা ব্যাংকের কাছ থেকে বীমা পলিসি গ্রহণ করতে পারবে। এজন্য শুধু দরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি প্রজ্ঞাপন। ব্যাংকাসুরেন্স চালু হলে এতে স্বচ্ছতা আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে বীমা মালিকরা বলছেন এখনো ব্যাংকাসুরেন্স চালুর সময় আসেনি। তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন জারির আগমুহূর্তে এসে বীমা কোম্পানির চেয়ারম্যানদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ) নিজেরাই এর প্রকাশ্য বিরোধিতা করছে। ফলে আপাতত আলোর মুখ দেখছে না ব্যাংকাসুরেন্স।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ গত মঙ্গলবার নীতিমালা ও নির্দেশিকা অনুমোদনের কথা জানিয়ে ২০ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে চিঠি পাঠায়। চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে প্রজ্ঞাপনটি প্রেরণের অনুরোধ জানানো হয়।
চিঠিতে বলা হয়, ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে বীমাপণ্য বাজারজাত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকাসুরেন্স নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। আর বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) প্রণয়ন করেছে কর্পোরেট এজেন্ট (ব্যাংকাসুরেন্স) নির্দেশিকা। বাংলাদেশ ব্যাংক এখন ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে বীমাপণ্য বিক্রির কার্যক্রম পরিচালনা করতে ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী প্রজ্ঞাপন জারি করতে পারে।
তবে প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার আগেই এর বিরোধিতায় নেমেছে বীমা কোম্পানির মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ)। বিআইএর সভাপতি শেখ কবির হোসেন বলেন, ‘এটি নিয়ে আমরা ইতোমধ্যে আইডিআরএ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কর্তা-ব্যক্তিদের সঙ্গে আলাপ করেছি। এটা আপাতত স্থগিত থাকবে। আসলে ব্যাংকাসুরেন্স আমরা যেভাবে চেয়েছি, সেভাবে হয়নি। এতে কিছু সমস্যা দেখা দেবে। তাই আমরা বিআইএর পক্ষ থেকে একটা বিজ্ঞপ্তি দেব। সেখানেই বিষয়টি খোলাসা করা হবে।’
তবে শেখ কবির হোসেন না বললেও নন-লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোর রমরমা কমিশন বাণিজ্যই ব্যাংকাসুরেন্স নীতিমালা বিরোধিতা করার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন বেসরকারি বীমা কোম্পানির একাধিক কর্মকর্তা। তারা বলছেন, ব্যাংকাসুরেন্স চালু হলে বীমা কোম্পানিগুলোর জবাবদিহিতা বাড়বে। কিন্তু বর্তমানে মালিক পক্ষ এ ধরনের জবাবদিহিতার জালে আটকাতে চায় না।
এমনকি মালিকপক্ষের ইন্ধনেই বিভিন্ন কোম্পানি এজেন্ট ও ইনচার্জরা এর বিরোধিতা করছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের আগেই তারা গত ১২ জুন আইডিআরের কার্যালয়ের সামনে একটি প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন। তারা প্রয়োজনে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন।
প্রতিবাদকারীদের মতে, ব্যাংকাসুরেন্স চালু হলে দেশের লাখ লাখ বীমা কর্মী কর্মহীন হয়ে পড়বে। বিভিন্ন বীমা কোম্পানির উচ্চপদে কর্মরত ইনচার্জদের সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন হবে। এর ফলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে বীমা খাতে। সে কারণে তারা ব্যাংকাসুরেন্স প্রকল্প বাতিলে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে।
নীতিমালা একটি বীমা কোম্পানি তিনটি ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করতে পারবে এবং একটি ব্যাংক তিনটি বীমা কোম্পানির পণ্য বিক্রি করতে পারবে। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, ২০২২ সালে বীমা কোম্পানিগুলোর শাখা কার্যালয়ের সংখ্যা ৭ হাজার ৮৭৩টি। মোট বীমা এজেন্ট সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ ৩০ হাজার।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যাংকাসুরেন্স হলো জীবন-বীমা এবং আর্থিক সুরক্ষা পণ্য বিক্রয় করার জন্য ব্যাংক এবং জীবন বীমা সংস্থার মধ্যে একটি অংশীদারিত্ব। এর মাধ্যমে জীবন বীমাপণ্যগুলোর সঙ্গে ব্যাংকিং পণ্যগুলোকে একত্র করার বিশাল সুযোগ রয়েছে যা ব্যাংকিং পণ্যগুলোকে আরও আকর্ষণীয় এবং প্রাসঙ্গিক করে তুলতে সাহায্য করে।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, বীমার মালিকদের উচিত এই উদ্যোগকে স্বাগত জানানো। কিন্তু তারা যদি আগের মতো গ্রাহকদের টাকা তছরুপ করার মানসিকতা রাখেন, তাহলে তো কোনো উন্নতি হবে না। মালিকরা কোনো নিয়মনীতি মানতে রাজি না। এ কারণে এজেন্ট ও কোম্পানি মিলে এখানে লোপাট করছে। আমি মনে করি ব্যাংকাসুরেন্স অবিলম্বে চালু করা উচিত। এতে বীমা কোম্পানিগুলোর জবাবদিহিতা বাড়বে।