নকলবাজদের ধরবে যে প্রযুক্তি
প্রযুক্তি ডেস্ক :
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ জুলাই ২০২৩, ১১:১১ অপরাহ্ণএখন সারা বিশ্বে নকলের ছড়াছড়ি।বিশেষ করে পরীক্ষার হলে নকল মানে অন্যেরটা দেখে লেখা কিংবা সাথে করে নিয়ে যাওয়া বই দেখে লিখা। নকল কম বেশ সব শিক্ষার্থীরায় করে। ভালো-মন্দ সবাই নকলের সঙ্গে যুক্ত। এমনও ঘটনা ঘটছে যে, কোনো কোনো সময় নকল করেই ভালো রেজাল্ট করা সম্ভব। আর যে নকল কম করছে সে হয়তো ফেল করেছে। তাই নকল ঠেকাতে তৎপর বিজ্ঞানীরা। এই সংক্রান্ত বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন তুলে ধরা হলো-
‘ল্যাবিরিন্থিয়ান মেজ’- এই শব্দ দু’টি পড়েই আমি কেন জানি না এক মুহূর্তের জন্য থমকে গিয়েছিলাম। লেখাটি পড়তে পড়তে আমার মনের মধ্যে সতর্ক ঘণ্টা বাজতে শুরু করেছিল। আমি ১৪-১৬ বছর বয়সীদের জন্য বিজ্ঞান বিষয়ে একটি রচনা প্রতিযোগিতায় বিচারকের দায়িত্ব পালন করছিলাম। কিন্তু ওই বিশেষ রচনাটিতে ভাষা এতটাই পরিশীলিত ছিল যে তা একজন কিশোর লেখকের জন্য অসম্ভব বলে মনে হয়েছিল।
এরপর আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) সনাক্তকারী সফটওয়্যার ব্যবহার করে আমি রচনাটিকে পরীক্ষা করে দেখি। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ‘কপিলিকস’ নামের ওই সফটওয়্যারটি আমার কম্পিউটারের স্ক্রিনে যে ফলাফল তুলে ধরে, তা ছিল গভীরভাবে হতাশাব্যঞ্জক। রচনাটির ৯৫.৯ ভাগ ছিল এআই টুল ব্যবহার করে তৈরি।
আরো নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমি ভিন্ন একটি টুলের মাধ্যমে রচনাটি যাচাই করলাম। ফলাফলে ‘স্যাপলিং’ আমাকে জানিয়েছে রচনার ৯৬.১ ভাগ কোনো মানুষের লেখা নয়। তৃতীয় আরেকটি টুল প্রথম ফলাফল দু’টিই নিশ্চিত করেছে, তবে এক্ষেত্রে স্কোর ছিল কিছুটা কম- ৮৯% এআই।
তাই আমি ‘উইনস্টন এআই’ নামে আরেকটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে রচনাটি যাচাই করলাম। কোনো সন্দেহ নেই, রচনাটির মাত্র এক ভাগ মানুষের হাতে তৈরি। চারটি আলাদা এআই সনাক্তকারী সফটওয়্যারের বার্তাটি পরিষ্কার যে রচনাটির লেখক একজন এআই নকলবাজ।
এআই ব্যবহার করে নকল করছে যে শিক্ষার্থীরা আমি বেশ কিছুদিন ধরেই জানতাম যে এআই ব্যবহার করে লেখা আমার নিজের পেশা সাংবাদিকতাসহ অনেক খাতের জন্য গুরুতর সব চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।
তবুও আমি এক্ষেত্রে অবাক হয়েছিলাম এই কারণে যে স্কুলের একজন ছাত্র ধরে নিয়েছিল রচনা প্রতিযোগিতার জন্য এআইয়ের তৈরি লেখা জমা দেয়াতে বিশেষ দোষের কিছু নেই।
তবে এটা ঠিকই যে শিক্ষার্থীদের নকল করার ব্যাপারটা নতুন কিছু নয়। কিন্তু যে বিষয়টাতে আমি হতবাক হয়েছিলাম তা হলো এআইয়ের এমন ব্যাপক ব্যবহার আমার ধারণার অতীত ছিল।
নকল করা রচনার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আমার বেশ দুশ্চিন্তাই হচ্ছিল। আট বছর বয়সী এক মেয়ের মা হিসেবে নকল করার কাজে একটি স্কুলের বাচ্চাকে এআই ব্যবহার করতে দেখে আমার মনে হচ্ছিল ভবিষ্যতে শিশুটির অনেক কিছু শেখার রয়েছে। শিক্ষা প্রক্রিয়ায় মূল্যবোধ এবং শিক্ষার দীর্ঘ পদযাত্রার ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম।
এই নকলবাজদের ধরা যাবে কিভাবে? তাহলে, কিভাবে আমরা এ ধরনের এআই নকলবাজকে চিহ্নিত করব? এটার কি কোনো সূত্র বা চিহ্ন থাকে?
স্বস্তির বিষয় হলো, এই কাজে এখন নতুন নতুন টুলস তৈরি হচ্ছে। কিন্তু এরপরও আমরা খুব শিগগিরই দেখতে পাব যে এআই ব্যবহার করে নকল করার সমস্যাটা শিক্ষার জগতের বাইরেও ছড়িয়ে পড়ছে। এবং তা ঘটলে শুধুমাত্র প্রযুক্তি দিয়ে তা মোকাবেলা করা যথেষ্ট হবে না।
আশ্বস্ত হওয়ার মতো ঘটনা হলো, শিক্ষাক্ষেত্রে এ ধরনের জালিয়াতি রোধে শিক্ষক এবং শিক্ষাবিদরা ইতোমধ্যেই লেখা পরীক্ষার নানা ধরনের টুলস এবং কৌশল ব্যবহার করছেন।