ইসরায়েলের ধৃষ্টতায় স্তব্ধ মুসলিম বিশ্ব
বাংলানিউজ এনওয়াই ডেস্ক :
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ অক্টোবর ২০২৩, ৮:৩৫ অপরাহ্ণফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের সংঘাত চলছে টানা প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে। ইরান এই সংঘাতের শুরু থেকেই লড়াই আরও ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকির কথা বলে আসছিল।
এবার অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার একটি হাসপাতালে ইসরায়েলের ভয়াবহ হামলায় ৫০০ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে দেশটি। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, টাইম ইজ ওভার।
একইসঙ্গে বিশ্বজুড়ে সবাইকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি। বুধবার (১৮ অক্টোবর) এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
কাতারভিত্তিক এই সংবাদমাধ্যমটি বলছে, গাজা শহরের আল-আহলি আরব হাসপাতালে ‘এক হাজারেরও বেশি নিরপরাধ নারী ও শিশুর ওপর গণহত্যা চালানোর’ পর ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আবদুল্লাহিয়ান ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী সাবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে তিনি লিখেছেন, ‘হাসপাতালে বোমাবর্ষণ করে এক হাজারেরও বেশি নিরপরাধ নারী ও শিশুকে গণহত্যার মতো ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর ভয়ানক অপরাধের পর আইএসআইএস এর চেয়েও ঘৃণ্য এই ভুয়া শাসনের বিরুদ্ধে মানবতার বৈশ্বিক ঐক্যের সময় এসেছে।’ এতে তিনি আরও বলেন, ‘টাইম ইজ ওভার (সময় শেষ)।’
প্রসঙ্গত, ফিলিস্তিনির অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ওই হাসপাতালে মঙ্গলবার ভয়াবহ হামলা চালায় ইসরায়েল। ওই এক হামলায় একসঙ্গে ৫০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে জানায় গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
আল-আহলি আরব নামের ওই হাসপাতালটিতে অসংখ্য আহত ও অসুস্থ মানুষ চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। এছাড়া দখলদার ইসরায়েলিদের হামলা থেকে বাঁচতেও অনেক মানুষ ‘নিরাপদ আশ্রয়’ ভেবে হাসপাতালটিতে অবস্থান নিয়েছিলেন।
গাজার হামাস নিয়ন্ত্রিত সরকার হাসপাতালের ওপর এ হামলাকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ হিসেবে অভিহিত করেছে। গত ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার বিমান হামলায় মঙ্গলবার পর্যন্ত ৩ হাজার ফিলিস্তিনির মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছিল হামাস। এরমধ্যেই হাসপাতালে চালানো হলো ভয়াবহ হামলা।
সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, ওই হাসপাতালটির একটি হলরুমে কয়েকশ বাস্তুচ্যুত মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন। মূলত বিমান হামলা থেকে বাঁচতেই হাসপাতালে গিয়েছিলেন তারা। তবে সেখানেও চালানো হয় ইসরায়েলি নৃশংসতা।
বাইডেনের সফর বাতিল করে দিল জর্ডান : ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার হাসপাতালে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদে— যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সফর বাতিল করে দিয়েছে জর্ডান।
বুধবার (১৮ অক্টোবর) জর্ডানে যাওয়ার কথা ছিল বাইডেনের। এ সফরে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস, মিসরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ এল-সিসি এবং জর্ডানের রাজা আব্দুল্লাহ-২ —এর সঙ্গে বৈঠক করতেন বাইডেন। এতে হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ নিয়ে আলোচনা করার কথা ছিল তাদের।
জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদি বলেছেন, এ বৈঠক বাতিল করা হয়েছে; সঙ্গে বাইডেনের সফরও।
তিনি আরও বলেছেন, ‘যুদ্ধ বন্ধ ছাড়া এখন কোনো কথার প্রয়োজনীয়তা নেই। এ মুহূর্তে বৈঠক করে কোনো লাভ নেই।’
এর আগে হাসপাতালে হামলার পর বাইডেনের সঙ্গে সফর বাতিল করে জর্ডান থেকে ফিলিস্তিনের রামাল্লায় ফিরে আসেন ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। তবে বাইডেন ইসরায়েলে আসার যে পরিকল্পনা করেছেন সেটি বাতিলের কোনো খবর আসেনি।
গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী হামাস জানিয়েছে, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর চালানো বিমান হামলায় আল-আহলিল হাসপাতালে প্রায় পাঁচশ ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু দখলদার ইসরায়েল দাবি করেছে, সশস্ত্র গোষ্ঠী ইসলামিক জিহাদের ছোড়া একটি রকেটের আঘাতে হাসপাতালটিতে এত ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
তবে সৌদি আরব, মিসর, জর্ডান ও আরব আমিরাতসহ সব দেশ ভয়াবহ এই হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করে এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হাসপাতালের হামলাকে ইসরায়েলের ‘জঘন্যতম অপরাধ’ হিসেবে অভিহিত করেছে। এছাড়া পশ্চিমা দেশগুলোর নেতারাও গাজায় চালানো এ ভয়াবহ হামলার নিন্দা জানিয়েছেন।