‘ধর্মের নাম ভালোবাসা’
নীরব চাকলাদার :
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ অক্টোবর ২০২৩, ৭:৪৬ অপরাহ্ণ‘মানুষর লাগি ধর্ম। হকল আগে মানুষর লগে মানুষর ভালোবাসার প্রকাশ ঘটানি লাগবো। যে জাগাত ভালোবাসা, ইনও কোনো বিরোধ থাকতে পারে না। এর লাগি কই, মানুষ যখন মাইনষেরে ভালোবাসতে শিখবো-তখন ধর্ম যে কতো বড় ও শান্তির,ইগু প্রমান করা সম্ভব অইবো’। কথাগুলো বলছিলেন সিলেটের বিয়ানীবাজার তিলপাড়া ইউনিয়নের শানেশ্বর বাজারের মবশ্বির আলী। প্রায় দেড় যুগ ধরে মন্দির সংলগ্ন একই উঠোনে নামাজ পড়ছেন তিনি। সোমবার আছর নামাজ শেষে ফেরার পথে কথা হলে তিনি বলেন, ইনও হক্কলে যার যার মতে ধর্মাচার করিতরা। কেউ কেউরে বাঁধা দিরা না। আমরার এলাকার এই সম্প্রীতির বন্ধন আমরা যেকোনো মূল্যে ধরিয়া রাখতাম চাই।
মবশ্বির আলীর গ্রাম শানেশ্বর বাজারে। তিনি প্রতিবেদককে জানালেন ধর্মীয় সম্প্রীতির গল্প। যেখানে সিলেটের একই উঠানে জামে মসজিদ ও পূজা মন্ডপ। যার ধোঁয়া বের হচ্ছে ধূপকাঠির, অন্যপাশে আতরের বিমোহিত সুঘ্রাণ। বাজছে কাঁশর ঘন্টা,চলছে উলুধ্বনি। তার ঠিক বিপরীত পাশে চলছে জিকির। এভাবে ছয় যুগ ধরে দুটি ধর্মীয় উপাসনালয়ে যে যার মতো ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করে যাচ্ছে।
স্থানীয় লোকজন জানালেন,প্রায় ৭০ বছর আগে সোনাই নদীর তীরবর্তী শানেস্বর বাজারে মসজিদ ও মন্দির স্থাপন করা হয়। নদী দিয়ে চলাচলকারী বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা ধর্মপ্রাণ মুসলমান ব্যবসায়ীরা নামাজ পড়ার জন্য মন্দিরের পাশেই একটি ছোট ঘর নির্মাণ করেন। নামকরণ করা হয় শানেস্বর বাজার জামে মসজিদ। ওই সময় থেকেই এক উঠানে দুই ধর্মের দুটি উপাসনালয়। যে যার মতো পালন করে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান।
পূজা শুরুর আগে মসজিদ ও মন্দির কমিটি বসে সিদ্ধান্ত নেয়। এখন পর্যন্ত মন্দির-মসজিদ নিয়ে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
জানা গেছে, মসজিদে আজানের সময় থেকে নামাজের প্রথম জামায়াত শেষ না হওয়া পর্যন্ত মন্দিরে ঢাক-ঢোলসহ যাবতীয় শব্দ বন্ধ থাকে। নামাজ শেষ হলেই মন্দিরের কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়। শালীনতা বজায় রেখে একই উঠানে দীর্ঘ দিন ধরে বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব পালন করে আসছে দুই ধর্মের লোকজন।
মসজিদের নিয়মিত মুসল্লি সেলিম উদ্দিন বলেন, ‘মসজিদের পাশেই রয়েছে মন্দির। মসজিদ-মন্দির প্রায় কাছাকাছি সময়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমরা মন্দির কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করি। তারাও আমাদের সহযোগিতা করেন। নামাজের সময় মন্দিরের ঢাক-ঢোল বন্ধ রাখা হয়। কোনো বিশৃঙ্খলা ছাড়াই যুগ যুগ ধরে এ সম্প্রীতির বন্ধন চলে আসছে।’
স্থানীয় সনাতন ধর্মীয় নেতা বিবেকানন্দ দাস বিবেক জানান, মসজিদ-মন্দিরকে ঘিরে সামান্য বিশৃঙ্খলাও হয় না এখানে। জন্মের পর থেকে এভাবে চলতে দেখছেন তিনি।
বিয়ানীবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেবদুলাল ধর বলেন, ‘প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করে আসছি, যেন কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি না হয়। সব ধর্মের মানুষ একে-অপরকে সহায়তা করে। মসজিদ-মন্দিরকে ঘিরে কোনোদিন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। এরপরও প্রশাসন সতর্ক থাকে।’