গাজা সিটি ‘ঘিরে ফেলেছে’ ইসরাইলি বাহিনী
বাংলানিউজ এনওয়াই ডেস্ক :
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ নভেম্বর ২০২৩, ১১:২১ পূর্বাহ্ণইসরাইলি সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা ‘গাজা সিটি ঘিরে ফেলার কাজ বৃহস্পতিবার শেষ করেছে’ এবং হামাসের সামরিক চৌকি, সদর দপ্তর ও স্থাপনায় হামলা চালাচ্ছে। এদিকে, হামাসের সামরিক শাখা ‘ইজ্জেদিন আল-কাসাম ব্রিগেড’ ইসরাইলকে সতর্ক করেছে, তাদের সেনারা ‘কালো ব্যাগে’ বাড়ি ফিরে যাবে। হামাসের মুখপাত্র আবু উবাইদা বলেছেন, ‘গাজা ইসরাইলের জন্য ইতিহাসের অভিশাপ হয়ে থাকবে।’ অন্যদিকে, লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহর নেতা হাসান নাসরাল্লাহ দাবি করেছেন, ইসরাইল যদি গাজায় আগ্রাসন না থামায়, তবে তারাও এই যুদ্ধে জড়িত হবে। সংবাদসূত্র : বিবিসি, এএফপি, আল-জাজিরা, রয়টার্স
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো জানিয়েছে, গাজা উপত্যকার উত্তরে অবস্থিত গাজা সিটি বর্তমানে ইসরাইলের আক্রমণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। ইসরাইল সেখানে হামাসের কমান্ড কাঠামোকে ধ্বংস করার অঙ্গীকার করেছে এবং বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের ভূখণ্ডের দক্ষিণ অংশে পালিয়ে যেতে বলেছে।
গাজায় প্রবল বিস্ফোরণের মধ্যে ইসরাইলের সামরিক মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি সাংবাদিকদের বলেন, ‘হামাসের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু গাজা শহর ঘেরাও সম্পন্ন করেছে তাদের সেনারা।’ অন্যদিকে ইসরাইলের সামরিক প্রকৌশলীদের প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইদ্দো মিজরাহি বলেছেন, ইসরাইলি সেনারা মাইন এবং বুবি ফাঁদের মুখোমুখি হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘হামাস এসব বিষয়ে বেশ শিখেছে এবং নিজেকে ভালোভাবে প্রস্তুত করেছে।’
হামাসের একটি সামরিক ভিডিওতে দেখা যায়, তাদের একজন যোদ্ধা সুড়ঙ্গ থেকে বের হয়ে গাজার একটি মাঠে ট্যাংকে বিস্ফোরক ডিভাইস রাখছে। পরে একটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায় এবং ওই যোদ্ধা টানেলে ফিরে আসার সময় ট্যাংকের দিকে অ্যান্টি-ট্যাংক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। অন্যদিকে, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, গাজায় বর্তমানে যুদ্ধের সর্বোচ্চ পর্যায়ে আছেন তারা। ইসরাইলি সেনারা গাজার মধ্যাঞ্চল ও সবচেয়ে জনবহুল এলাকা গাজার ভেতর প্রবেশ করেছে বলেও দাবি করেছেন তিনি। মাইক্রো ব্লগিং সাইট ‘এক্সে’ দেওয়া এক পোস্টে নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমরা যুদ্ধের সর্বোচ্চ পর্যায়ে আছি। আমরা বেশ ভালো সাফল্য পেয়েছি এবং গাজার উপকণ্ঠ পার করে ভেতরে প্রবেশ করেছি। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।’
এ ছাড়া সাধারণ ফিলিস্তিনিদের গাজার উত্তর দিক থেকে দক্ষিণ দিকে সরে যাওয়ার আহবান জানিয়েছেন নেতানিয়াহু। তিনি বলেছেন, ‘আমি বেসামরিকদের বলছি। সরে যান। সরে যান, দক্ষিণ দিকে চলে যান। কারণ হামাসকে দমনের অভিযানে আমরা থামব না।’
এদিকে, হামাসের যোদ্ধারা তাদের গোপন সুড়ঙ্গ থেকে বের হয়ে ইসরাইলি সেনাদের ওপর মর্টার হামলা চালাচ্ছে। হামলা চালিয়ে আবার সঙ্গে সঙ্গে সুড়ঙ্গের ভেতর চলে যাচ্ছে তারা। গাজার কয়েকজন বাসিন্দার বক্তব্য এবং হামাস ও ইসরাইলের প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে এমন দৃশ্য। গাজার এক বাসিন্দা পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বলেছেন, গাজা সিটিকে কেন্দ্র করে বিরামহীন বোমা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী। যেন তাদের স্থল সেনারা সেখানে সহজে ঢুকে পড়তে পারে। তবুও ইসরাইলিরা এখনো গাজা সিটির ভেতর ঢুকতে পারেনি।।
ইসরাইলি সেনাদের কালো ব্যাগে করে ফেরত পাঠানোর হুমকি
ইসরাইলি সেনারা যখন গাজার ভেতরে ঢুকে ভূখণ্ডের প্রধান শহরকে গাজা সিটিকে ঘিরে ফেলার দাবি করেছে, তখন কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। তারা বলেছে, ইসরাইলি সেনাদের কালো ব্যাগে করে ফেরত পাঠানো হবে।
হামাসের সশস্ত্র শাখার মুখপাত্র আবু উবাইদা বৃহস্পতিবার টেলিভিশন দেওয়া এক ভাষণে বলেন, গাজায় নিহত ইসরাইলি সেনাদের সংখ্যা সেনাবাহিনীর ঘোষণার চেয়েও অনেক বেশি। তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘আপনাদের সেনাদের কালো ব্যাগে করে ফেরত পাঠানো হবে।’ এর আগে গাজা উপত্যকাকে ইসরাইলের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্বের ‘গোরস্তান’ বানানোর ঘোষণা দেয় হামাস। আবু উবাইদা গত মঙ্গলবার টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে বলেন, ‘গাজা উপত্যকাকে ইসরাইলের সামরিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের গোরস্তান বানানোর আগ পর্যন্ত আমরা থামব না।’
ইসরাইল বলেছে, গত শুক্রবার গাজায় স্থল অভিযান সম্প্রসারিত হওয়ার পর থেকে হামাসের হামলায় এখন পর্যন্ত তারা ১৮ জন সেনা হারিয়েছে এবং বহু হামাস যোদ্ধাকে হত্যা করেছে।
বাংলানিউজ এনওয়াই/ এনবি/ যায়যায় দিন