কবি শ্যামল সোম এর একগুচ্ছ কবিতা
নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ৮:১২ অপরাহ্ণকবি শ্যামল সোম
সুদৃঢ় অঙ্গীকার
যদি লিখতে চাও
প্রশ্ন করতে শেখ নিজেকে
ছিঁড়ে ফেল বন্ধকি মস্তকের অলিখিত চুক্তিনামা
পাঠ করতে শেখ,পাঠ করতে শুরু কর
প্রকৃতি নামের অনন্ত অসীম মহাকাব্য
প্রকৃতি নামের মহাবিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ কর মুক্ত বিহঙ্গের ডানা মেলে
নিজেকে প্রশ্ন করে করে জানতে চাও
তোমার ষষ্ঠেন্দ্রীয় কতটা জাগ্রত,কতটা ঘুমন্ত
জানতে চাও তুমি কি মানুষ পাঠ করতে পার
জানতে চাও তুমি কি মানুষের মাঝে খুঁজে পাও
তোমার তীর্থ,তোমার মন্দির, তোমার স্বর্গ-নরক!
অভুক্তের নিরন্নতা তোমাকে কতটা আলেড়িত করে!
ধর্ষিতার মৌন আহাজারিতে কতটা শুনতে পাও তোমার বিধাতার আর্তনাদ!
তুমি কি অনুধাবন কর এই শব্দদূষণ,বায়ূদূষণের
অনাগত অনিবার্য পরিণাম!
তুমি কি অনুধাবন করতে পার এই প্রচলিত শিক্ষার ভবিষ্যৎ পঙ্গুত্ব!
জোঁকের রক্ত-নেশার মত এই দুর্দমনীয় অর্থ-নেশার ভবিষ্যৎ কতটা কদর্য!
তুমি কি তৃতীয় নয়নে দেখতে পাও,তৃতীয় কর্ণে শুনতে পাও-
তোমার সন্তানের অনাগত ভবিষ্যতের চাপাকান্না!
এবং আরও কত কী
ইত্যাদি,ইত্যাদি,ইত্যাদি
যদি সব কয়টা অনুষঙ্গের জবাব হয় হ্যাঁ এবং হ্যাঁ
তবে এসো বন্ধু!
উম্মুক্ত কর তোমার কলমের খাপ
লিখে যাও,লিখে যাও এবং লিখে যাও
আমি কথা দিলাম-
আমি হব তোমার আমৃত্যু পাঠক
এবং ছাত্রত্বেই কাটিয়ে দেব এ নশ্বর জীবন
সুলেখক বন্ধুর কাছে এ আমার সুদৃঢ় অঙ্গীকার।
লেখা:০১/ডিসেম্বর/২০২১
শক্তির উন্মুক্ত উন্মত্ত খেলার ময়দানে
সেকেণ্ড,মিনিট, ঘন্টা, দিন, মাস,বছর পেরিয়ে
বয়সের ঘোড়া ছুটছেতো ছুটছেই
রুপকথার রাক্ষস খোক্ষসের মত গিলে খাচ্ছে আয়ূ
আর সময়ের থাবা খেয়ে খেয়ে আমরাও
বেঁচে থাকি শুধুই বাঁচার জন্যে
এ বাঁচা জীবনের জন্যে নয়
শুধুই বাঁচার জন্যে বাঁচা।
ওদিকে মহাকালের মহাসমুদ্রে স্তরে স্তরে জমে যাচ্ছে আমাদের কৃতকর্মের স্তুপ
সুদুর/অদূর ভবিষ্যতে যেখানে উঠবে ভয়ংকর সুনামি
অচিরেই যা গিলে খাবে পৃথিবী নামের উন্মুক্ত উন্মত্ত খেলার মাঠ
তবুও বেঁচে থাকি,বেঁচে থাকতে হয়!
কিন্তু কেন?তাও আদৌ জানা নেই।
সময়গুলো বরাবরের মতই কেটে যায়
আড্ডা,আলোচনা,সমালোচনা,খুঁনসুটিতে
নিঃশেষ হয়ে যায় কয়েককাপ রং চা
তা চিনিমুক্ত বা চিনিযুক্ত যাই হোক
কারো না কারো পকেট থেকে বেরিয়ে যায়
পৃথিবীতে পরমারাধ্য কয়েকটা কাগজের নোট
পরমানন্দে আরও একটি দিন কেটে গেল বলে
আকাশের মত হই পুলকিত।
ঘরে ফেরে আনন্দটা একটু টেকসই করে নিতে
টিভির রিমোটে দেই আলতো চাপ
নয়ত ফেইসবুকে খুঁজতে যাই অমরাবতীর সুখ
আর তখনই গোটা আকাশ যেন ভেঙে পড়ে
এক/দেড় কেজি ওজনের মাথার ওপর
যখন মগজে ঢুকে
এ নশ্বর পৃথিবীতে শক্তিমান আর শক্তিহীনে রয়েছে আকাশ পাতাল তফাৎ
নিতান্ত সংখ্যার হেরফেরেও কেউ প্রথম দ্বিতীয় তৃতীয়।
তবুও ছুটেই চলে-
বেহায়া বয়সের ঘোড়া অক্লান্ত অবিরাম
আয়ূ খেয়ে খেয়ে জাবর কাটে অপলক
যেন বারবার স্মরণ করিয়ে দিতে চায়-
শক্তিহীন বেঁচে থেকে দেখে যাও-
তোমাতে আর ভাগাড়ের ভাইরাসে কোন তফাৎ নেই।
তবুও বেঁচে রই
বেঁচে থাকি
বেঁচে থাকতে হয়
অন্ধ,বধির,বোবা হয়ে
শক্তির উন্মুক্ত উন্মত্ত খেলার ময়দানে।
লেখা: ২৪/১০/২০২১
মেধাহীন সত্তা নিয়ে
বলা যায় বেশ ভালই আছি
মেধাহীন সত্তা নিয়ে
লেখক,কবি,শিল্পী,বিখ্যাত,প্রখ্যাত হবার তাড়না নেই
বক্তৃতার মঞ্চে,সঙ্গীতের মঞ্চে,আবৃত্তির মঞ্চে উঠে
নিজেকে জানান দেয়ার তাড়না নেই।
বেশ ভালই কেটে যাচ্ছে নির্বিকার সময়গুলো
মেধাহীন সত্তার সুবাদে
সম্মুখ সারিতে আসন দখলের প্রতিযোগিতা নেই
প্রতিযোগিতা নেই ফটোসেশনে ধাক্কাধাক্কি করে
মেধাহীন অবয়ব প্রদর্শনের
কিংবা লাউড স্পীকারে চিৎকার করে সত্তার জানান দেয়ার
প্রতিযোগিতা নেই রাজনীতি,সাহিত্য,সংস্কৃতি,সমাজ ধর্ম সর্ববিষয়ে
নিজের বিশেষজ্ঞতা প্রমাণের
প্রতিযোগিতা নেই অসংখ্য সংগঠনের সভাপতি,সম্পাদক হয়ে
দেশ,সমাজের জন্যে নিজের অমূল্য জীবন বিলিয়ে দেয়ার।
মেধাহীন সত্তার সুবাদে
তাড়না নেই রাত জেগে জেগে
বিজ্ঞাপনের ফাঁকে ফাঁকে
টিভির পর্দায় সংবাদ মুখস্থ করার
কিংবা টক শো মিষ্টি শো থেকে
অসীম জ্ঞানার্জনের।
মেধাহীন সত্তার সুবাদে তাড়না নেই
ছলে,বলে,কৌশলে সম্মান-
সালাম,আদাব নমস্কার আদায়ের।
মেধাহীন সত্তার সুবাদে তাড়া নেই নিত্যদিন
প্রধান অতিথি,বিশেষ অতিথির আসনে বসে
নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মত
বিনমূল্যে অমূল্য জ্ঞান বিতরণের।
অসংখ্য,অজস্র অস্বস্তির মধ্যেও
মেধাহীনতার স্বস্তি নিয়ে বেশ বেশ ভালই আছি
এই সত্য অস্বীকার করার মত
এতটাও মিথ্যুক অবশ্য হতে পারিনি।
লেখা:০৫/০৯/২০২১
এবিএ/ ৫ ফেব্রুয়ারী