সম্পর্কের টানাপোড়েন (শেষ পর্ব)
নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ নভেম্বর ২০২০, ৬:৫৭ অপরাহ্ণগত পর্বের পর—
তারপর দেখতে দেখতে চলে আসলো নীলা – আসিফের বিবাহবার্ষিকী। কিন্তু আসিফের আজকাল সংসারের বিষয়ে কিছুই মনে থাকে না,এটাও সে ভুলেই গেল,বাসায় ফিরলো অনেকরাতে।বাসায় ফিরেই বললো নীলাকে বাইরে থেকে খেয়ে এসেছে।নীলা অনেককিছু ভেবে রেখেছিলো আজকের জন্য, ভেবেছিলো বাচ্চার কথা শুনলে আসিফ নিশ্চয়ই আবার আগের মত হয়ে যাবে।কিন্তু আসিফ তো কিছু শুনতেই চায় না।নীলা ঠিক করে আজকেই কথা বলবে আসিফের সাথে,আর দেরি করবে না।নিজের রুমে গিয়ে নীলা আসিফকে বলে তোমার সাথে কথা আছে আমার।
কিন্তু নীলার কথা না শুনে আসিফ উল্টো রেগে গিয়ে নীলাকে বলে আগে আমার কথা শুনতে হবে তোমাকে।আসিফ নীলাকে বলে আমি তোমার সাথে আর থাকতে চাই না,আমি পরিবারের একমাত্র ছেলে, আমি এবং আমার পরিবার একটা বাচ্চা চাই।নীলা জিজ্ঞেস করে যদি তোমার কোন সমস্যার জন্য বাচ্চা না হতো কি করতে আসিফ?সত্যিই কি শুধু বাচ্চার জন্য নাকি আমাকে তোমার আর প্রয়োজন নেই আসিফ? বাচ্চা নেয়ার তো আরও অনেক পদ্ধতি আছে।কিন্তু আসিফ নীলার কোন কথা শুনতে চায় না,বলে আমি ডিভোর্স চাই। একথা শোনার পর নীলা ওর কনসিভ করার বিষয়ে আর কিছুই বলেনা।সারারাত ভাবতে থাকে নীলা,অনেক ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেয় সে।পরদিন সকালে নিজের প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস গুছিয়ে নিয়ে আসিফকে বলে আমি চললাম, ডিভোর্স এর কাগজপত্র পাঠিয়ে দিও সাইন করে দিবো।
পরবর্তীতে নীলার ভাই-ভাবির আন্তরিকতায় এবং বোনের চেষ্টায় নীলা কানাডা চলে যায়।সেখানেই নীলের জন্ম,একাকি পথচলা শুরু।কাছের মানুষ অনেকেই বুঝিয়েছিলো নীলাকে আরেকবার ভেবে দেখতে,কিন্তু নীলার মনে হয় যেখানে ভালোবাসাই রইলো না সেখানে একটি সন্তান সম্পর্কের সেতুবন্ধন হতে পারে না।নীলার কনসিভ করার বিষয়টি খুব কাছের কয়েকজন জানায় আসিফের কাছে তা অজানায় রয়ে গেল।নীল জন্মের পরে নীলা খুব অবাক হয়েছিলো আসিফ ওকে ছেড়ে গিয়েও ফিরে এসেছে…নীলকে দেখলেই বোঝা যায় আসিফের ছেলে,চেহারায় এতটাই মিল।এরপর বোন-দুলাভাইয়ের সহোযোগিতায় ছেলেকে নিয়ে ভালোই আছে।কখনো নিজে থেকে আসিফের খোঁজ নিতে ইচ্ছে করেনি,তবে পরিচিতদের কাছ থেকে জানতে পেরেছে আসিফ সেই মেয়েটিকেই বিয়ে করেছিলো,তবে তাদের কোন সন্তান হয়নি।আসিফ অনেক ডাক্তার দেখালেও কোন কাজ হয়নি,সমস্যা নাকি মেয়েটার।এটা শোনার পর নীলার মনে হয়েছে কিছু পাপের শাস্তি মানুষ পৃথিবীতেই পেয়ে যায়।
নীলের ডাকে স্মৃতি থেকে বর্তমানে ফিরে আসে সে।নীল তাকে প্রশ্ন করতে করতে অস্থির করে তোলে।একসময় নীলা ছেলেকে বলে তোমার বাবা যদি তোমার কথা জানতে পেরে তোমাকে কাছে রাখতে চায় তুমি কি করবে নীল?ছেলে তার উত্তর দেয় আমার বাবা-মা দুটোই তুমি, যে তোমাকে ভালোবাসতে পারেনি সে তোমার আত্তজাকে কিভাবে ভালোবাসবে মা!!নীলা ভাবে ছেলেটা অনেক বড় হয়ে গেছে।
অবশেষে দীর্ঘ ভ্রমণ শেষে দেশের মাটিতে পা রাখলো মা-ছেলে।দুজনেই খুব উচ্ছ্বসিত। এয়ারপোর্টে নীলার ভাই দাঁড়িয়ে আছে ওদের জন্য। হঠাৎ চোখ পরে নীলার অনেকটা দূরে পরিচিত এক অবয়বের দিকে।অনেক বছর দূরে থাকলেও ভালোবাসার মানুষকে চিনতে নীলার ভুল হয়নি।ভাইয়ের দিকে তাকালে বুঝতে পারে ওদের খবর ওর ভাই দিয়েছে।নীলা ভাইকে বলে কেন তাকে জানিয়েছো।
উত্তরে ভাই বলে নীলের একটিবার বাবাকে দেখা উচিত,নয়তো মাকে সারাজীবন ভুল বুঝতে পারে।আসিফ এসে ছেলেকে জড়িয়ে ধরতে চাইলে নীল বলে আমি আমার মায়ের জন্মস্থানকে দেখতে এসেছি,আমার দেশকে চিনতে এসেছি,আপনার সাথে কোন সম্পর্কে জড়াতে আসিনি।আসিফ নীলার সামনে দাঁড়িয়ে চোখের পানি ফেলে বলে কেন আমাকে বলোনি নীলা সেদিন নীলের কথা,তাহলে তো জীবনটা এমন হতোনা আমাদের।
উত্তরে নীলা বলে আমি শুধু তোমাকে ভালোবেসেছিলাম,তোমাকে চেয়েছিলাম,তোমাকে হারিয়েও নীলের মাঝে তোমাকে খুঁজে নিয়েছি।আর তুমি তো কোনদিনই আমাকে ভালোবাসোনি আসিফ, বাচ্চা তো ছিলো একটি উপলক্ষ মাত্র।আজ দেখ তোমার সম্পর্কগুলোর পরিনতি!! নীল ডাকে মা চলো দেরি হয়ে যাচ্ছে।মা-ছেলে হাত নেড়ে কথা বলতে বলতে যাচ্ছে.. দূরে দাঁড়িয়ে আসিফ দেখছে,আজ দেখা ছাড়া আর কিছুই করার নেই তার….।জীবন যা সেধে দিয়েছিলো তার মূল্য বুঝতে বড্ড দেরি হয়ে গেছে।
লেখক:গল্পকার