পুলিন রায়ের একগুচ্ছ কবিতা
নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ অক্টোবর ২০২০, ৭:২০ পূর্বাহ্ণপুলিন রায় মূলত কবি। সম্পাদক ও দক্ষ সাহিত্য সংগঠক হিসাবেও সুপরিচিত । জন্ম ১ জুন, ১৯৬৬। পিতা : স্বর্গীয় ললিত মোহন রায়, শিক্ষক ছিলেন। মাতা: স্বর্গীয়া প্রফুল্ল বালা রায়। স্থায়ী ঠিকানা-গ্রামঃ লক্ষীপ্রসাদ, ইউনিয়নঃ দরবস্ত, উপজেলাঃ জৈন্তাপুর, সিলেট। বর্তমানে সিলেট নগরীর টিলাগড়স্থ গোপালটিলায় স্থায়ী বসবাস। লেখালেখি শুরু১৯৮৫, প্রথম কবিতা প্রকাশ ১৯৮৫ তে সাপ্তাহিক দেশবার্তা-য়। প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অমিয় সাহিত্য পরিষদ ও সুনামকণ্ঠ সাহিত্য পরিষদ। বর্তমান সভাপতি : সিলেট সাহিত্য পরিষদ, অমিয় সাহিত্য পরিষদ ও লোকচর্যা, সিলেট।
১৯৯০ থেকে অর্থাৎ ৩০ বছর ধরে সম্পাদনা করছেন সুপরিচিত লিটলম্যাগ ‘ভাস্কর’। ভাস্কর-এর কবি দিলওয়ার সংখ্যা শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে রেফারেন্স পাঠ্যভূক্ত। এছাড়া সম্পাদনা করেছেন অমিয়, কল্লোল, কাব্যালোক ও কণ্ঠসাহিত্য।
কবি পুলিন রায় ইতোমধ্যে অর্জন করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘চিহ্ন সম্মাননা’, ঢাকার ‘উৎস’ লেখক সম্মাননা, বান্দরবানের ‘সমুজ্জ্বল সুবাতাস’ সম্মাননা, সিলেটের ‘মাকুন্দা সাহিত্য’ পদক, মৌলভীবাজারের ‘কোরাস’ সাহিত্য সম্মাননা এবং দুই বাংলার সম্পাদকদের সাথে ঢাকার ‘সমধারা’ সাহিত্য সম্মাননা।
২০১৬ সালে তাঁর পঞ্চাশ পূর্তি এবং ভাস্কর-এর পঁচিশ বছর পূর্তি উপলক্ষে ‘পঞ্চাশে পুলিন, পঁচিশে ভাস্কর’ শিরোনামে একশ এক সদস্যের উদযাপন পর্ষদের মাধ্যমে আড়ম্বরপূর্ণ একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে ‘এখন যৌবন যার মিছিলে যার তার শ্রেষ্ঠ সময়…’ খ্যাত দেশবরেণ্য কবি হেলাল হাফিজ প্রধান অতিথি ছিলেন। এ উপলক্ষে সারা দেশের ৮০ জন লেখকের লেখা নিয়ে সমৃদ্ধ একটি সংকলন বের হয়।
তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ ছয়টি। কাব্যগ্রন্থ চারটিঃ ‘স্বপ্ন যাবে সমুদ্র স্নানে’ (২০০১), ‘কালের পালকে আঁকা'(২০০৬), ‘সুঘ্রাণ ছড়ানো মৌনতা'(২০১৭) ও ‘পাখির ঠোঁটে বসতি'(২০১৮)। গদ্যগ্রন্থ দুইটিঃ ‘কষ্টের নোনা জলে যাপিত সবুজ জীবন'(২০০৪) এবং ‘ওরা সবুজ, ওরা জীবনযোদ্ধা'(২০০৮) ।
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হিসেবে কর্মরত। তাঁর সহধর্মিণী রঞ্জু রানী রায় একজন শিক্ষক। দুই ছেলের মধ্যে বড় জন অনিমেষ রায় পিয়াস চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত এবং ছোট ছেলে অনিরূদ্ধ রায় পরাগ দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র।
কালবেলার কবিতা
এক.
ক্ষরণ
হৃদপিণ্ডে দগদগে ক্ষরণচিহ্ন
বয়েসী পাতায় ঝুলে ঘন অন্ধকার
লণ্ঠনের অর্ধকালো চিমনিতে জীবনের দাগ
রাতের ভেতরে রাত গাঢ় হয়
উনুনে রক্তের প্রপাত…।
দুই.
কষ্ট
নৈঃশব্দের সেতু পেরিয়েই পেতাম
গাছেদের ঘন সবুজ মুখের হাসি;
‘খাদমা’র বাড়িঘর আর
ছোটনদীর বাঁকে বাঁকে
স্মৃতির বালিয়াড়ি।
হায়, এখন দুঃখের নোনাজলে
কষ্টের বসতবাড়ি।
তিন.
অসময়
অসময়। ঘোর লাগা ভোর।
পাখিলগন গেল চলে।
নদী ডাকে পেছন পেছন
পাখি ডাকে সম্মুখে, নিঃশব্দে,
মায়ার ডুব সাঁতারে কেবল নিমজ্জন
পৃথিবী ঘুরে দেখি সব ঘরের দরজা বন্ধ।
চার.
দূরত্ব
যতোবার কাছে যাই বৃক্ষেরা সরে যায়
ছায়াহীন কায়া ঘিরে রাখে সারাক্ষণ
জলের সীমানায় ভাসে করুণ মুখচিহ্ন
যতোবার কাছে যাই সাগরও ছুটে যায় দূর থেকে দূরে
কালের মন্দিরায় বাজে অলুক্ষণে গান
কে তবে চোখের সামনে মেলে ধরে ভূতের ছায়া?