সম্পর্কের টানাপোড়েন
নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ নভেম্বর ২০২০, ১২:৩৮ পূর্বাহ্ণদীর্ঘ তের বছর পরে দেশের মাটিতে পা রাখলো নীরা,সাথে ছেলে নীল। এতগুলো বছরের মধ্যে যে দেশে আসতে ইচ্ছে করেনি বিষয়টি সেরকম না,বড্ড অভিমান হয়েছিলো যে নীরার।কিন্তু ছেলের জন্য নিজের
অভিমানকে একপাশে সরিয়ে রাখতে হলো।তবে চাপাকষ্টের মাঝে থেকে থেকে আনন্দের শিহরণ বইছে নীরার মনে.. নিজের দেশে ফিরছে এতবছর পরে এটা তো কম আনন্দের নয়।
নীলের কাছে সবকিছুই আজ অবাক করা অনুভূতি। দেশে আসার জন্য মাকে কত কষ্ট করে রাজি করাতে হয়েছে।যদি মায়ের লেখা ডায়েরিটা না পেত এতকিছু সে জানতেই পারতো না।অন্য কারও ডায়েরি অনুমতি ছাড়া পড়া উচিত না, কিন্তু এই ডায়েরিই তার কাছে খুলে দিয়েছে অন্য এক জগতের জানালা। বেশকিছুদিন আগে নীল পুরনো কিছু বই-পত্র গোছাতে গিয়ে মায়ের লেখা ডায়েরিটা দেখতে পায়।
নীলা বিমানে উঠে ফিরে যায় বহুবছর আগের স্মৃতিতে। ছয়বছর ভালোবাসার সম্পর্ক থাকার পরে বিয়ে হয় নীলা আর আসিফের।নীলাদের ছিলো মধ্যবিত্ত পরিবার।বাবা মারা যাওয়ার পর বড়ভাই ওদের দেখে রেখেছে।আরেকটি বোন বিয়ের পর কানাডায় সেটল।নীলাদের থেকে আসিফের পরিবার অবস্থাসম্পন্ন। ওরা দুজন ক্লাসমেট থাকার কারনে,সেইসাথে দেখতেও নীলাকে সাদামাটাই বলা যায় এবং একই প্রতিষ্টানে চাকরি পাওয়ায় আসিফের পরিবার প্রথমে বিয়েতে অমত করলেও আসিফের জেদের কারনে তা পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়।বিয়ের পরে খুব আনন্দেই কাটছিলো ওদের জীবন।
দুজন একসাথে অফিসে যায়,অফিস শেষ করে মাঝেমধ্যেই ঘুরতে চলে যায়।এভাবেই কেটে গেল দুটোবছর। আসিফ পরিবারের একমাত্র ছেলে হওয়ায় সবাই ওদের সন্তানের মুখ দেখতে চাচ্ছিলো।ওরাও ভাবলো আসলেই একটা বাচ্চার হাসিমুখ দেখতে পারলে মন্দ কি!কিন্তু বিধাতা হয়তো অন্যকিছু চেয়েছিলেন।
প্রায় দেড়বছরের চেষ্টার পরও যখন নীলা কনসিভ করলো না আসিফের পরিবার নীলাকে চাকরি ছাড়তে বাধ্য করলো।ততদিনে বিয়ের প্রায় চারবছর হতে চলেছে।এরমধ্যে নীলার মা হঠাৎ স্ট্রোক করে একদিন হাসপাতালে থেকেই মারা যায়।মায়ের মৃত্যু,চাকরি ছেড়ে দেয়া, বাচ্চা না হওয়া নিয়ে শ্বশুরবাড়ির সবার কটুক্তি সবকিছু নীলাকে অস্থির করে তুললো।এরইমধ্যে আসিফের আচরণ কেমন যেন অন্যরকম লাগতে শুরু করলো নীলার কাছে।যে মানুষটা নীলার ছোট ছোট বিষয়ের প্রতি খুব যত্নশীল ছিলো সে এখন নীলার দিকে তাকিয়ে দেখারও সময় পাচ্ছে না।
অফিস থেকে ফিরছে অনেক দেরি করে, মাঝে মাঝে এসে বলে বন্ধুদের সাথে খেয়ে এসেছি,জিজ্ঞেসও করেনা নীলা খেয়েছে কিনা!ছুটির দিনগুলোও বাসায় থাকে না আসিফ।নীলা বুঝতে পারে একটা বাচ্চা হতে পারে এই সমস্যার সমাধান।
এর আগে ডাক্তারের কাছে নীলা অনেকবার গিয়েছে, আসিফই ওকে নিয়ে গেছে,ডাক্তারের বক্তব্য অনুযায়ী ওদের কোন সমস্যা নাই। নীলা ভাবলো আরেকবার ডাক্তারের কাছে যাবে।আসিফকে একথা বলতেই সে বলে তুমি একাই যাও,আমার সময় নেই।কথাটা শুনে খুব কষ্ট পেলেও কিছু বলেনা নীলা।
হঠাৎ একদিন নীলা বিকেলে আসিফের অফিসে যায় ওকে না বলে ভেবেছিলো সারপ্রাইজ দিবে,গিয়ে জানতে পারে আসিফ অফিসে নেই,আরও জানতে পারে প্রায় প্রতিদিনই আসিফ বিকেলেই অফিস থেকে বের হয়ে যায়।
নীলা পুরোনো কলিগদের সাথে কুশল বিনিময় শেষে চলে আসে বাসায়।আসিফ বাসায় আসে প্রায় রাত নয়টায়।এত দেরি কেন জিজ্ঞেস করলে নীলাকে বলে অফিসের কাজ শেষ করতে দেরি হয়ে গেছে।নীলার মনে হয় কোথাও কোন সমস্যা আছে।রাতে আসিফ ঘুমিয়ে যাওয়ার পর নীলা ওর মোবাইল নিয়ে বারান্দায় চলে যায়। এরপরে যা দেখে তা বিশ্বাস করতে নীলার খুব কষ্ট হয়।
আসিফের একটা মেয়ের সাথে কথোপকথনের মেসেজ দেখে নীলা,দেখে বুঝতে পারে তাদের সম্পর্কটা অনেকটা গভীর।
নীলা চোখের পানি মুছে মোবাইলটা রেখে শুয়ে পরে।পরদিন আসিফ অফিসে গিয়ে যখন জানতে পারে নীলা গিয়েছিল অফিসে, সে বাসায় এসে প্রচন্ড রাগ করে নীলার সাথে।নীলা খুব অবাক হয়ে ভাবে এই কি সেই আসিফ যে কিনা নীলার চোখ থেকে এক ফোটা পানি পরলে অস্থির হয়ে যেত।
এরই মধ্যে নীলা আরও বেশ কয়েকবার আসিফের মোবাইলের মেসেজ পরে বুঝতে পারে মেয়েটিকে আসিফ বিয়ে করতে চায় কিন্তু নীলাকে বলতে পারছে না।এই অসহ্য যন্ত্রণাদায়ক সময়ে হঠাৎ নীলার শরীর খুব খারাপ লাগে, খুব দূর্বল লাগে।কাউকে কিছু না বলে সে ডাক্তারের কাছে যায়।ডাক্তার সবকিছু শুনে তারকিছু টেস্ট করতে দেয়।টেস্টের রিপোর্ট দেখে নীলাকে ডাক্তার জানায় নীলা দুইমাসের প্রেগন্যান্ট।
আনন্দে নীলা হতবিহ্বল হয়ে যায়।নীলা ভাবে আর একসপ্তাহ পরেই তাদের বিবাহবার্ষিকী,সেদিনই আসিফকে খবরটা দিবে নীলা।
লেখক:গল্পকার,
আগামি পর্ব পড়তে সাথে থাকুন….