সংসদ সদস্য মরহুম মজিদ স্যার ও কিছু কথা
নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ এপ্রিল ২০২১, ১:০২ পূর্বাহ্ণদোয়ারাবাজারের মাটি ও মানুষের পরম আপনজন এডভোকেট আব্দুল মজিদ স্যারের ২য় মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ২০১৯ সালের ২০ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন। সেদিন দোয়ারাবাজার তাঁর প্রিয় সন্তানটিকে হারিয়েছিল।হারিয়েছিলো এক ভালো মানুষকে।হারিয়েছিলো ছাতক দোয়ারার সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল মজিদ স্যার কে।
প্রিয় মানুষকে নিয়ে লিখতে কিছুটা কষ্টের,শোকগাঁথা সব সময় লেখা যায় না। আজ সারাদিন কেবল আপনার সঙ্গে আমার দামী স্মৃতিগুলো মনের আকাশে উঁকি দিচ্ছে। ছোট বেলায় ছোট মামা আমাকে সব অনুষ্ঠানে নিয়ে যেতেন। ২০০৫ সালের কথা তখন চারদিকে মজিদ স্যারের অনেক নাম ডাক। নানু বাড়ির সামনে দিয়ে মজিদস্যারের গাড়িটি গেলে আমরা দৌড় দিতাম তাঁকে এক নজর দেখতে। ভীরের মধ্যে তাঁকে অনেকবার দেখেছি।কিন্তু কিছুতেই মন ভরতো না। ছোট্ট এই আমি মজিদ স্যারের সাক্ষাৎ পেতে মনটা ভীষণ অস্থিরতায় ভুগতো।
অবশেষে স্বপ্ন পূরণের পালা এলো । তার কিছুদিন পর দোয়ারাবাজার মডেল হাই স্কুল এর মাঠে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। ছোট মামা আমাকে নিয়ে গেলেন সেই অনুষ্ঠানে। সেখানেও গিয়েও মামাকে বারবার প্রশ্ন করছিলাম মামা মজিদ স্যার কোথায়? দুপুরে স্যারের গাড়ি স্কুলে পৌঁছালে হাজারো জনতা তাকে অভিবাদন জানায়। তিনি ধীরে ধীরে মঞ্চে এলেন।
সেই শীতের সন্ধ্যায় মঞ্চে আমি ছিলাম মামার কোলে। আমার সাথে মজিদ স্যারের পরিচয় করিয়ে দিলেন মামা। আমাকে তাঁর কোলে তুলে নিলেন। আমাকে আদর দিয়েছেন ,ভালোবেসে বুকে টেনে নিয়েছেন। আমার নাম জানতে চাইলেন? তারপর আমার গেঞ্জিতে কি লিখা আছে তা পড়তে বললেন। বুকে লেখা ছিল congratulation.. বাংলায় এর অর্থ কী জানতে চাইলেন? উওরে বললাম,অভিনন্দন। তিনি আমাকে বললেন তোমাকে অভিনন্দন। তারপর স্বভাব সুলভ হাসি।
আমার মুখে তখন এত বড় শব্দ শুনে কিছুটা অবাক হয়েছেন ? আমাকে তিনি বললেন তোমাকে এই শব্দের অর্থ কে শিখিয়েছেন? আঙ্গুল দিয়ে মামাকে দেখিয়ে দিলাম। মজিদ স্যারের পাশের চেয়ারে বসে থাকা মামাকে বললেন,ভাই সাহেব আপনার ভাগনা সঠিক অর্থ বলতে পেরেছে। তার কিছুক্ষণ পর অনুষ্ঠান শুরু হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুর দিকে মাল্যদান করা হয় মজিদ স্যারকে। একই মঞ্চে থাকা মামার গলায় মালা পরিয়ে দেন মজিদ স্যার। হঠাৎ করে মজিদ স্যার আমাকে কোলে নিয়ে টেবিলে দাঁড় করিয়ে দেন। তাঁর নিজের গলার মালাটা আমাকে পড়িয়ে দিলেন। আর তখন উৎসুক জনগণের মুহুর্মুহু করতালি দিয়ে আমাকে অভিনন্দিত করছিলো। সেই করতালির শব্দ এখনো কানে বাজে। সেই ছোঁয়া এখনো হৃদয়ে শিহরণ জাগায়।
এরপর মামা আমাকে কোলে নিতে চাইলে তিনি দিলেন না। বললেন থাক না আমার কোলে,ছোট মানুষ। ওর ঠান্ডা লাগছে। মজিদ স্যার তার গায়ের গিয়া রংয়ের শাল দিয়ে আমার হাত পা মুড়ে দিলেন। মামার সাথে গল্প করতে করতে তিনি আমাকে কমলার কোষ আর বাদাম খাইয়ে দিলেন। মজিদ স্যার এই অকৃপণ ভালোবাসার মধ্য দিয়ে প্রথম পরিচয় ঘটে তার হৃদয়ের বিশালতার সঙ্গে। শিশু সুলভ মজিদ স্যার চমকে দিলেন আমাকে।
ওনার গিয়া রংয়ের শাল দিয়ে আমাকে জড়িয়ে নিয়েছিলেন। যত খানি তিনি জড়ালেন ,তার চেয়ে বেশি ভালোবাসার একটি আকাশের সাথে আমার সাক্ষাত ঘটলো। আমি অনেক বেশি ভাগ্যবান যে,মজিদ স্যারের ভালোবাসা আমি পেয়েছি। আসলেই মহৎ হৃদয়বান মানুষগুলো বোধ হয় এমনই হয় ।
সেই কবেই শৈশবের স্মৃতিতে আপনি মিশে আছেন। আজও আছেন ,পরম আপন হয়ে।সেই অনুষ্ঠানের পরদিন আমার এলাকায় অনেকে জানতে চেয়েছে মসিজ স্যার তোমাকে কি বলেছে? কি দিয়েছে ?কথাটা আজও মনে পড়লে হাসি আসে। তিনি যা দিয়েছেন তা তো আজ মনে রেখেছি। আমার মরণ অবধি এই স্মৃতি আমাকে পরম আনন্দ দিবে, শক্তি দিবে।
আমি ভাগ্যবান, এক পরম ভালো মানুষের সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল।।তারপরে অনেক বার তাকে দেখেছি ,সে সব দিনের স্মৃতি আজও অমলিন।
মরনে অমরতা সবাই পাই না ,আপনি পেয়েছন কর্মের গুণে। কবি প্রেমেন্দ্র মিত্র মৃত্যুকে নিয়ে লিখেছেন -‘যে তারা জাগিয়া থাকে তাকে লয়ে জীবনের খেলা ভুবনের মেলা /যে তারা হারালো দ্যুতি । যে পাখি ভুলিয়া গেল গান /এ ভুবনে কোথা তার স্থান? আপনার স্থান গণমানুষের হৃদয়ে,আমার হৃদয়ে ,হাজার হৃদয়ে,লাখ ও মানুষের মনোমন্দিরে। আপনার নাম লিখা হয়ে গেছে দোয়ারাবাজারের ইতিহাসের সোনালী পাতায়। আপনি ঘুমান ,পরম মমতায় এই দোয়ারাবাজার বাসী আপনাকে ধরে রাখবে ,মানুষ মনে রাখবে।
পরপারে ভাল থাকুন পরম শ্রদ্ধেয় ,সাবেক সংসদ সদস্য জনাব এডভোকেট আব্দুল মজিদ স্যার।হে মহান প্রভু আপনি আমাদের মজিদ স্যারকে জান্নাত দান করুন। আমিন।