◾ইদ উপলক্ষে গণপরিবহন খোলে দেয়া হবে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত
নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ মে ২০২১, ১:৪৫ পূর্বাহ্ণ◾ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন বলেছিলেন-“দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। তা সত্ত্বেও বলছি, বড় করে আর লকডাউন জারি করা হবে না। আমরা অর্থনীতিকে স্তব্ধ করতে চাই না।”
কুম্ভমেলা (ধর্মীয় অনুষ্ঠান) বন্ধেও ভারতের সরকারের কোন সক্রীয় ভুমিকা ছিলনা। যার ভয়ংকর তাণ্ডব ভারতীয় জনগণ মোকাবেলা করছে। এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে আমাদের প্রতিবেশি দেশটিতে। আমাদের দেশে ঢিলাঢালা লকডাউন চলছে। সুফল কতটুক হচ্ছে এখনই বলা মুশকিল। সামনে ইদ উৎসব। ভারতের অভিজ্ঞতা মাথায় রেখেই নীতিনির্ধারকদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
সম্প্রতি আইইডিসিআর-এর এক গবেষণায় উঠে এসেছে ৬১ শতাংশ আক্রান্ত রোগীর বাজারে যাওয়া এবং গণপরিবহন ব্যবহারের ইতিহাস রয়েছে। সংক্রমিত হওয়া ব্যক্তিদের অন্তত ৩০ শতাংশ জনসমাগমস্থল (সভা–সেমিনার) এবং উপাসনালয়ে গিয়েছিলেন। তাই ইদ উপলক্ষ করে গণপরিবহন ও ইদ বাজার খোলে দেয়া হবে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।
আমি মনে করি যে যেখানে আছেন সেখানেই ইদ পালন করা উচিৎ। এ ব্যাপারে সরকারকেও কঠোর ব্যাবস্থা নিতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে এটা ওটা করা যাবে এসব অবাস্তব সিদ্ধান্ত না দেয়াই উচিৎ। মানুষ এখনও বুঝতেই পারেনি স্বাস্থ্যবিধিটা কি জিনিষ। স্বাস্থ্যবিধির কথা মাথায় নিয়ে মসজিদে গেলাম নামাজ পড়তে। মুসল্লিরা মোটামুটি দূরত্ব বজায় রেখে কাতারে বসেছেন। একামত দেয়ার পর ইমাম সাহেব ডানে বায়ে তাকিয়ে বললেন “সামনের খালি জায়গা পূরন করুন, কাঁধে কাঁধ লাগিয়ে দাড়ান, কাতার সোজা করুন।” জামাতের আদব মানতে মুসল্লিরা তাই করলেন। কোথায় গেল স্বাস্থ্যবিধি ? একই অবস্থা বাজারে, শপিং মলে, রাস্তাঘাটে। এখনও অধিকাংশ মানুষ মাস্কের তোয়াক্কা করেনা। কেউ কেউ আবার বলে ভারতে আল্লাহর গজব ! কি জঘন্য মানসিকতা ! মানুষকে বুঝাতে হবে করোনা সংক্রমণ রোধে মাস্কের ব্যাবহার, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা আর আক্রান্ত হলে মৃত্যু থেকে বাচাতে পারে ভ্যাকসিন/টিকা। দুটোই অতিজরুরী।
ইদ উৎসবটা অন্তত দেশের মানুষ বাঁচাতে এবার আমাদের সেকরিফাইস করা উচিৎ। যারা সামর্থ্যবান তাদের এবারের ইদ উৎসবের টাকাটা প্রতিবেশি অভাবগ্রস্থ করোনায় আর্থিক সংকটে নিপতিত মানুষের মাঝে বিলিয়ে দেয়াটা উত্তম হবে।
একবার ভাবুন আমাদের ছেলেমেয়েরা প্রায় দেড় বছর যাবৎ স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারছেনা। তারা মানসিকভাবে বিপর্যয়ের সম্মুখিন। এ ক্ষতির ফলাফল সুদূর প্রসারী।আজ সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধভাবে সচেতনভাবে এ মহামারী থেকে সুরক্ষা পেতে হবে। ভারতের মত অবস্থা যাতে না হয় সেটা মাথায় রাখতে হবে।
এখন একটাই ভাবনা হোক মানুষের জীবন বাঁচানো। জীবিকার সংকট উত্তীর্ণ হওয়া যাবে, ইদ জীবনে আরও আসবে কিন্তু ভয়ংকর মানবিক বিপর্জয় থেকে পরিত্রাণ পাওয়া কঠিন হবে। নীতিনির্ধারকদের বিজ্ঞানসম্মত যথাযথ সিদ্ধান্তই মহাবিপর্যয় থেকে মানুষকে রক্ষা করতে পারে। আসুন সবাই মাস্ক ব্যাবহার করি, সামাজিক/শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখি। ইদ নিজ নিজ অবস্থানে পালন করি। দূর্গত সংকটাপন্ন মানুষকে নিরবে নিভৃতে সাহায্য করি।
লেখক : রুহুল কুদ্দুস বাবুল, কলামিস্ট এবং রাজনীতি বিশ্লেষক